ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

Motobad news
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি

ছয় বছরে ভর্তুকিমূল্যে ৪০ লাখ মেট্রিক টন চাল বিক্রি

ছয় বছরে ভর্তুকিমূল্যে ৪০ লাখ মেট্রিক টন চাল বিক্রি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করছে বরিশাল বিভাগে প্রায় পাঁচ লাখ পরিবার। প্রতি তিন মাস অন্তর প্রতিটি পরিবার ১০ টাকা কেজি দরে পাচ্ছেন ৩০ কেজি করে চাল। সে হিসেবে প্রতিটি পরিবার বছরে নামমাত্র মূল্যে ১২০ কেজি চাল পাচ্ছেন।

আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের তথ্য মতে চলতি অর্থ বছরে বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলায় মোট ৬৯ হাজার ৮৭১ দশমিক ২৩০ মেট্রিক টন চাল বিক্রি করা হয়েছে সুবিধাভোগীদের মাঝে। আর শুরু থেকে অর্থাৎ ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা চালের পরিমাণ প্রায় চার লক্ষ মেট্রিক টন।

যদিও খাদ্য বান্ধব এই কর্মসূচি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগের অন্ত নেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং ডিলারদের বিরুদ্ধে। প্রকৃত অসহায়দের কার্ড না দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের নিজস্ব লোকেদের দেয়া, পরিমাণে কম দেয়া এবং কালো বাজারে বিক্রির অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বরিশালজুড়ে এমন কয়েকটি ঘটনা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে।

আর তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির এই খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি দুস্থদের জন্য আরো সহজলভ্য করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এরি মধ্যে এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে গবেষণা করেছেন তারা। আলোচনা করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে। গবেষণাকালে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘দেশের প্রতিটি মানুষের খাদ্যের চাহিদা নিশ্চিত এবং খুদামুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৬ সালে দেশব্যাপি চালু করা হয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির খাদ্য বান্ধন কর্মসূচি। এ কর্মসূচির আওতায় প্রতি তিন মাস অন্তর এক একটি পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে আমদানিকৃত চাল বিতরণ করা হয়ে আসছে।

বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় এখন পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৮৯৩টি পরিবার খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির সুবিধা ভোগ করছেন। এর মধ্যে ২০১৬ সালে কর্মসূচির শুরু থেকে গত ২০২০-২১ অর্থ বছর পর্যন্ত তালিকাভুক্ত পরিবারের সংখ্যা ছিল মোট ৪ লাখ ৮০ হাজার ২৭৮টি।

এর মধ্যে বরিশাল জেলায় সর্বোচ্চ এক লক্ষ ৬০ হাজার ৭৩৬টি, ঝালকাঠি জেলায় ৩২ হাজার ১৪০টি, পিরোজপুরে ৩৫ হাজার ৮০৯টি, ভোলায় ৮৩ হাজার ৪৭৩টি, পটুয়াখালীতে এক লক্ষ ১৮ হাজার ৯৩১টি এবং বরগুনা জেলায় ৫৫ হাজার ৮০৪টি পরিবার। তবে চলতি অর্থ বছরে ওই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরও ৬ হাজার ৬১৫টি পরিবার।

বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, ‘শুধুমাত্র খাদ্য অধিদপ্তরের নির্ধারিত কার্ডধারীরাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির খাদ্য বান্ধন কর্মসূচির সুবিধাভোগ করতে পারছেন। আমরা ইউনিয়ন পর্যায় স্থানীয় চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে স্ব স্ব এলাকার অসহায় এবং দুস্থদের তালিকা করে থাকি। সে হিসেবে পরবর্তীতে কার্ড প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে তালিকাটা রয়েছে সেটা মাঝে মধ্যে কমে যায়। কেননা যারা মারা যান তাদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। পরবর্তীতে চেয়ারম্যানরা নতুন তালিকা দিলে মৃত ব্যক্তিদের স্থলে সেইসব তালিকার লোকেদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলারদের মাধ্যমে। বরিশাল বিভাগে বর্তমানে ৯৬৭ জন ডিলার রয়েছেন। তাদের মধ্যে বরিশালে ২৮৩ জন, ঝালকাঠিতে ৬৫ জন, পিরোজপুরে ৮৬ জন, ভোলায় ১৬৬ জন, পটুয়াখালীতে ২৫৫ জন এবং বরগুনায় ১১২ জন ডিলার। প্রতি তিন মাস অন্তর ডিলাররা কার্ডধারী সুবিধাভোগীদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে এককালিন ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করছেন।

এদিকে, স্থানীয় পর্যায়ে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং ডিলারদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। কর্মসূচির তালিকায় নাম লেখাতে জনপ্রতিনিধিদের ঘুষ গ্রহণ, প্রকৃত অসহায়দের বাদ দিয়ে নিজস্ব লোকেরদ নিয়ে তালিকা করার অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া ডিলারদের বিরুদ্ধে ৩০ কেজির প্রতি বস্তায় অন্তত ২-৩ কেজি পর্যন্ত চাল কম দেয়ার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।

তাছাড়া মাস কয়েক পূর্বে বরিশালের বাবুগঞ্জে পাচারকালে ট্রলার ভর্তি খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চাল জব্দ করে পুলিশ। ওই ঘটনায় উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলায় হয়েছে। যা বর্তমানে বিচারাধিন রয়েছে। তাছাড়া বাউফলে ট্রলার ভর্তি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চোরাই চাল জব্দ করে পুলিশ। ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে। তাছাড়া জব্দকৃত চাল বরিশালের হিজলা এবং মেহেন্দিগঞ্জ থেকে পাচার হয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকারক্তি দেন চালসহ আটক ব্যক্তিরা।

এমন নানা অভিযোগ, অনিয়ম দূর করে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি অসহায় এবং দুস্থদের জন্য সহজলভ্য করে তুলতে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে মাঠপর্যায়ে গবেশণা করা হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে বরিশাল বিভাগেও গবেষণা করে যান মন্ত্রণালয়ের টিম। নগরীর ক্লাব রোডে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সভা কক্ষে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছ থেকে এ বিষয়ে মতামত এবং পরামর্শ গ্রহণ করেন গবেষক দল। বেশিরভাগ মানুষ এই কর্মসূচিকে রাজনৈতিক মুক্ত করার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি এটি মনিটরিংয়ের কমিটিউটি গঠনের দাবিও জানান।

এসময় গবেষক দলের প্রধান যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ফিরোজ আল মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের এই গবেষণার মাধ্যমে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ভবিষ্যত কি হবে সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ গবেষণার মাধ্যমে কিছুটা হলেও কার্যক্রমে পরিবর্তন আসবে বলে অভিমত দেন তিনি।


এমইউআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন