ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

Motobad news
দুই মাসে ১০ কোটি টাকার পেয়ারার বাণিজ্য

ঝালকাঠির পেয়ারার ভাসমান হাটে দেশ-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় 

ঝালকাঠির পেয়ারার ভাসমান হাটে দেশ-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় 
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

সকাল হলেই মানুষের ভিড় ঝালকাঠি শহরের কলেজ খেয়াঘাটে। ছোট বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করার কাজে ব্যস্ত তাঁরা। উদ্দেশ্য একটাই ভীমরুলী গ্রামের চারটি খালের মোহনায় দেশের বৃহত্তম পেয়ারার ভাসমান হাটে ঘুরতে যাওয়া। ট্রলার নিয়ে বাসন্ডা খালের মধ্য দিয়ে একের পর এক ছুঁটছেন পর্যটকের দল। নেচে গেয়ে উৎসবে মাতোয়ারা অনেকেই। কেউ আবার প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের দৃশ্য ক্লিক করছেন ক্যামেরায়। কেউবা পেয়ারার ভাসমান হাটের ডিঙি নৌকায় চাষীদের স্বপ্ন বুবনের ছবি ফ্রেমবন্দি করছেন। 

শুধু নৌ পথেই নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় অনেকে আবার সড়ক পথেও যাচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট বেচাকেনা চলছে দেশের বৃহত্তম পেয়ারার ভাসমান এ হাটে। ভাসমান হাটের চারপাশে সবুজের সমারোহ আমন্ত্রণ জানায় প্রকৃতি প্রেমীদের। মুগ্ধ হয়ে ঘুরে যান দেশ-বিদেশি পর্যটকরা। ভ্রমণকারীদের জন্য পেয়ারা বাগানের মধ্যেই রয়েছে পার্ক। টিকিট কেটে যতখুশি পেয়ারা পেরে খাওয়া যাবে এখানে। পেয়ারা বাগান ও ভাসমান হাটের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে আনন্দ হইহুল্লোরে সময় কাটিয়ে যান পর্যটকরা। পেয়ারা চাষীদের ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রমের গল্প শুনতে ছুটে এসেছিলেন আমেরিকার রাষ্ট্রদূত, ভারত ও  নেপালের হাইকমিশনার। 

স্থানীয় চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুস্বাদু ফল পেয়ারার ভরা মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। ঝালকাঠির চাষীরা ব্যস্ত কচকচে কাঁচা ও পাকা পেয়ারা বাগান থেকে তুলে বাজারজাত করার কাজে। তাঁরা বাগান থেকে পেয়ারা পেরে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় করে নিয়ে আসেন ভীমরুলী ভাসমান হাটে। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় পেয়ারা পুষ্টিমান সমৃদ্ধ বলেই একে বাংলার আপেল বলা হয়। এ বছর পেয়ারার ফলনও ভাল হয়েছে। কিন্তু পেয়ারার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার দুশ্চিন্তায় ভুগছেন চাষীরা। কারণ পদ্মা সেতু হলেও তাঁরা ঢাকায় সরাসরি পেয়ারা নিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ নেই বলে জানিয়েছেন। তাই এখনো পাইকারদের কাছেই বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের উৎপাদিত পেয়ারা।

পেয়ারার চাষ  
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র ও চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঝালকাঠির চাষীরা তিনশত বছর ধরে ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়ে আসছে পেয়ারা। এ বছর চাষীরা ৬২৯ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করেছেন পেয়ারার। সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা, ভীমরুলী, খাজুরা, ডুমুরিয়া, মীরাকাঠি, গাভা, বৈরমকাঠি, হিমানন্দদকাঠি ও গইয়ারামপুরসহ ২০টি গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির আটঘর কুড়িয়ানার বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে দেশের বৃহত্তম পেয়ারা বাগান। বাগানে এ বছর ছয় হাজার মেট্রিকটন পেয়ারা চাষ হয়েছে, যা থেকে প্রতি মৌসুমে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। পাইকাররা এই পেয়ারা কিনে ট্রলারে করে নিয়ে যান দেশের বিভিন্নস্থানে। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও পদ্মা সেতু হওয়ায় সড়ক পথেও বাজারজাত হচ্ছে পেয়ারা। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মত বড় শহরে এ অঞ্চলের পেয়ারার কেজি ৫০/৬০ টাকা হলেও এখানে তা বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকায়। প্রতিমণ পেয়ারার দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ উপার্জন দিয়েই সংসার ও ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ বহন করেন চাষীরা।  

শতদশকাঠি গ্রামের পেয়ারা চাষী সরজিত হালদার বলেন, আমার দেড় একর জমিতে পেয়ারার বাগান রয়েছে।  এখন ভরা মৌসুম। আমি এ পর্যন্ত দুই লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছি। এখানকার পেয়ারা চাষীরা ভাল ফলন হয়েছে। পদ্মা সেতু হওয়ায় এখন সকালের পেয়ারা দুপুরেই ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। তাজা পেয়ারা খেতে পারছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। এর পরেও আমাদের সমস্যা রয়ে গেছে। আমরা এখনো সরাসরি পেয়ারা ঢাকায় পাঠাতে পারি না। আমাদের যান বাহনের ব্যবস্থা নেই। এখনো পাইকারদের মাধ্যমে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আগের বছরের চেয়ে এ বছর দাম বেশি পাচ্ছি। এখানে যদি জেলির কারখানা তৈরি করা হয়, চাষীদের কাছ থেকে সরাসরি কোন কম্পানি পেয়ারা কিনে নেয় তাহলে আমারা ন্যায্য মূল্য পেতাম। 

ভীমরুলী গ্রামের পেয়ারা চাষী ভবেন্দ্রনাথ হালদার বলেন, আমার দুই একর ২৫ শতাংশ জমিতে পেয়ারার বাগান রয়েছে। ফলনও ভাল হয়েছে। স্থানীয় বাজারে পেয়ারা একটু কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা পেয়ারা মহাজনদের কাছে বিক্রি করি। মহানরা দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এতে মধ্যত্বভোগী মহাজন ও পাইকাররা লাভবান হচ্ছেন। পদ্মা সেতুতে আমরা যে লাভের কথা ভাবছিলাম, সেটা পাইকাররাই ভোগ করছেন। আমাদের উচিৎ হবে পেয়ারা চাষীরা এক হয়ে যানবাহন ঠিক করে পেয়ারা নিজেরাই ঢাকায় নিয়ে যাওয়া। তাহলে ভালো লাভ পাওয়া যাবে।

জগদিশপুর গ্রামের পেয়ারা চাষী সতিশ চন্দ্র মন্ডল বলেন, আমরা বাগান থেকে সকালে পেয়ারা পেরে নৌকায় করে ভীমরুলী খালের ভাসমান হাটে নিয়ে আসি। বিকেলের মধ্যে পেয়ারাগুলো বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছি, কারণ দ্রæত পচনশীল এ ফল সংরক্ষণে রাখার জন্য এখানে কোন হিমাগার নেই। যদি একটি হিমাগার থাকতো তাহলেও  বেশি দামের জন্য অপেক্ষা করা যেত। 

ভীমরুলী গ্রামের অজিত দুয়ারি বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মত বড় শহরে এ অঞ্চলের পেয়ারার কেজি ৫০-৬০ টাকা হলেও এখানে তা বিক্রি হচ্ছে ৮-১০ টাকায়। 

ভীমরুলী গ্রামের পেয়ারার আড়তদার (মহাজন) কালু হালদার বলেন, সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করেও পেয়ারা চাষীরা ঋণের বোঝা মুক্ত হতে পারছেন না। দারিদ্রতা আঁকড়ে ধরেছে তাদের জীবনযাত্রাকে। আমরা যটতা পারি তাদের সহায়তা করে থাকি। নিজেদের লাভের কথা চিন্তা না করে, চাষীদের সংসারের চিন্তা আমাদের আছে। পদ্মা সেতু হওয়ায় এ বছর পেয়ারার দাম একটু বেশি। আগামীতে আরো বেশি হবে বলে ধারণা করছি। 

ফ্লোটিং মার্কেট বা ভাসমান হাট 

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর শাখা নদী বাসন্ডা। ভীমরুলী খাল গিয়ে মিশেসে বাসন্ডায়। ভীমরুলী গ্রামের সেতু এলাকায় চারটি খালের মোহনায় বসছে ভাসমান হাট। কখনো পেয়ারা, কখনো আমড়া কিংবা লেবু, আবার অন্য ফসল নিয়ে চাষীরা এই হাটে আসেন। বয়স্ক ব্যক্তিদের ভাষ্য তিনশত বছর ধরে এই খালে ভাসমান হাট বসে। বিশেষ করে পেয়ারা মৌসুমে দুই মাস হাজারো পর্যটক ও পেয়ারার ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিরে মুখরিত থাকে ভাসমান এই হাট। পর্যকটদের কথায় এশিয়া মহাদেশের মধ্যে থাইল্যান্ডে ভাসমান একটি বাজার রয়েছে, আর বাংলাদেশের ঝালকাঠিতে রয়েছে পেয়ারার ভাসমান হাট। একই ফেøভার পাওয়া যায় এই দুটি পর্যটন স্পটে। শুধু ঝালকাঠির আশেপাশের মানুষই নয় ভীমরুলী ভাসমান হাটে আসছেন দেশ বিদেশের পর্যটকরা। এখানের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে আনন্দ হইহুল্লোরে সময় কাটিয়ে যান তাঁরা। পেয়ারা চাষীদের ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রমের গল্প শুনতে ছুটে এসেছিলেন আমেরিকার রাষ্টদূত, ভারত ও  নেপালের হাইকমিশনার। 

পাবর্ত্য অঞ্চল খাগড়াছড়ি জেলার বাসিন্দা বকুল চাকমা নিজ জেলায়ই একটি  বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ছোট বেলা থেকেই তিনি ঝালকাঠিতে ভাসমান পেয়ারার হাটের কথা শুনতেন। এবছর তিনি দৃঢ় প্রত্যয় নেন হাট দেখার। তাই গত শুক্রবার সকালেই তিনি কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে উপস্থিত হন পেয়ারার ভাসমান হাট ভীমরুলীতে। পেয়ারা চাষীদের কাছ থেকে সাজিতে সাজানো কয়েককেজি পেয়ারা কিনে হাতে উঁচু করে ধরে ছবি তোলেন। বলেন, আমার খুবই ভালো লাগছে এখানে এসে। নৌকায় করে পেয়ারা নিয়ে এসে পানিতেই ভাসমান অবস্থায় আবার বিক্রি করছেন, যা এতোবছর ধরে শুনেছি কিন্তু দেখতে পারিনি। ফেরিতে বেশি সময় লাগে সেই চিন্তায় এখানে আর আসা হয়নি। পদ্মা সেতু হওয়ায় খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকা হয়ে অল্প সময়ে এখানে এসে পৌঁছতে পেরেছি। পেয়ারা দেখতেই এই প্রথম বরিশালে আসা বলেও জানান তিনি। 

রাজধানীর ওয়ারী এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা তরুণী তুলশী আক্তার বলেন,  ফেরি বিড়ম্বনার কারণে এতো বছর আসা হয়নি মনমুগ্ধকর এই স্পটে। এখন ফেরি না থাকায় ভোর ৪টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে ভীমরুলীর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে সাড়ে ৯টার দিকে গন্তব্যে পৌঁছেছি। এমন একটি ভাসমান বাজার আমাদের বাংলাদেশে আর নেই। এখানে এসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। কতটাই যে ভালো লাগছে তা বলে শেষ করতে পারবো না । 

পেয়ারা পার্ক 
ভাসমান হাটকে ঘিরে গড়ে উঠেছে পেয়ারা পার্ক। ভাসমান হাটের পাশেই রয়েছে ‘গৌরব ইকো পার্ক’। এই পার্কটি করেছেন গৌতম হালদার। ছেলের নামে নাম রেখে পার্কটি করেছেন পর্যটকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য। এই পার্কে ঢুকতে টিকিট লাগে ৩০ টাকার। ভেতরে ঢুকে যতখুশি পেয়ারা খেতে পারা যাবে গাছ থেকে পেড়ে, কিন্তু নিয়ে যাওয়া যাবে না। পার্কের ভেতরে সাজানো হয়েছে নানা রাইটস দিয়ে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পার্কে ঢুকতেই মন কেড়ে নিবে এর পরিবেশ। পার্কের মালিক গৌতম হালদার বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার পর্যটক পার্কে প্রবেশ করেছেন, এটা আমার কাছে অকল্পনীয়। আমার আশার চেয়েও পর্যটকদের আগমন বেশি। এখান থেকে ভালো অর্থ আয় হচ্ছে আমার। আমার পেয়ারা বাগান থেকে প্রতিবছর দুই লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে। এখন পার্ক থেকেও আয় হচ্ছে। আমি এতে খুশি।

বরগুনা থেকে আসা সাইদুর রহমান বলেন, পেয়ারা ইকো পার্কটি অত্যন্ত সুন্দর। পেয়ারার ভাসমান হাট ও পেয়ারার বাগান ঘুরে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, তখন পরিবার নিয়ে ইকো পার্কে ঢুকলাম। সব ক্লান্তি যেন দূর হয়ে গেল। এখানে যতখুশি পেয়ারা পেড়ে খাওয়া যায়। যতক্ষণ প্রয়োজন সময় কাটানো যায়। বিশাল এ পেয়ারা ইকোপার্কের মধ্যেই রয়েছে পেয়ারা বাগান, এক কথায় অসাধারণ। 

অব্যবস্থাপনা ও উচ্চশব্দের বিড়ম্বনা 
পেয়ারা বাগান, পেয়ারা ইকো পার্ক, ভাসমান হাট, খাবারের ছোট ছোট হোটেল সবই আছে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় শুধুমাত্র একটি বিশ্রামাগার রয়েছে। যেখানে তেমন কোন পরিবেশ নেই। পর্যাপ্ত শৌচাগার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই সেখানে। একদিকে এসবের বিড়ম্বনায়, তারওপর কিছু উশৃঙ্খল কিশোরদের খালের মধ্যে উচ্চশব্দে মাইকে গান বাজানোর যন্ত্রনা পর্যটকদের হতাশ করছে।  

নড়াইল থেকে ৯টি মোটরবাইকে করে ১৮জন যুবক আসেন এ ভাসমান পেয়ারার হাট দেখতে। এদের মধ্যে টিম পরিচালনাকারী শাহজাহান মৃধা বলেন, এশিয়া মহাদেশে থাইল্যান্ডের পরে আমাদের বাংলাদেশে এখানেই একমাত্র ভাসমান পেয়ারা বাজার। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টন পেয়ারা এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। বাজারটা অনেক সুন্দর। এখানে আবাসনের কোন ব্যবস্থা নেই, নেই গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, ভ্রমণের জন্য ডিঙি নৌকা সংকট রয়েছে। সরকার বা জনপ্রতিনিধি যদি এসবের ব্যবস্থা করেন তাহলে এখান থেকেও প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারেন। সরকারের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা না থাকায় এসব আয় বঞ্চিত হচ্ছে।  জেলা প্রশাসন বা পুলিশ সুপার এটা দেখভাল করে সবকিছু নিয়মতান্ত্রিকভাবে চললে পর্যটকরা সুষ্ঠভাবে ভ্রমণ করতে পারবে, অপরদিকে সরকার লাভবানও হবে। 

পিরোজপুর জেলার তেজদাসকাঠি কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম তাঁর কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিজ পরিবারের সদস্যদেরও নিয়ে আসেন শিক্ষা সফরে। তাঁর অভিযোগ, তিন শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী পেয়ারার বড় মোকাম ভীমরুলীতে কোন আবাসন ও  পরিস্কার শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। এখানে দেশী-বিদেশী অনেক পর্যটকরা আসেন। তাঁরা আমাদের ওপর একটা বিরূপ ধারণা নিয়ে যান। দক্ষিণাঞ্চলের এ এলাকাকে উন্নয়ন করা সম্ভব এবং সরকারের বিশেষ ব্যবস্থায় একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে এ অঞ্চলে রাত্রিযাপনের জন্য আবাসন ব্যবস্থা, খাবার হোটেল ও মানসম্মত শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে পারে, তাহলে আরো বেশি পর্যটক আসবে। আমরা সড়ক ও নৌ পথে আসতে পারলেও থাকার এবং স্বাস্থ্য সম্মত খাবারের কোন জায়গা নেই।  পেয়ারার মৌসুম যেহেতু তিন মাস, এজন্য বেসরকারীভাবে কেউ বিনিয়োগ করতে চায় না। তাই সরকারকেই এ বিনিয়োগে উদ্যোগী হতে হবে। এতে সরকার যেমন লাভবান হবেন, এই দক্ষিণাঞ্চলের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রটি মানুষের মঙ্গলের জন্য এবং এখানে মুক্তিযুদ্ধের একটি বিশাল ইতিহাস রয়েছে। এখানে পাক হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলো। সেই ইতিহাস ও এতিহ্য রক্ষায় বাজার ব্যবস্থাপনাকে আরো উন্নত করতে হবে। 

পেয়ারার হাটে দায়িত্বরত বরিশাল রেঞ্জের টুরিস্ট পুলিশের উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে পদ্মা সেতু হবার পরে এ পর্যটন স্পটগুলো ভীড় বাড়তে শুরু করেছে। আমরা টুরিস্ট পর্যটকদের পুলিশ নিরাপত্তার জন্যই দায়িত্ব পালন করছি। পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে স্পটসমূহ ভ্রমণ ও পরিদর্শন করতে পারে সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতেও আমাদের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এখানে এমন ভরা মৌসূমে কয়েক হাজার পর্যটক আছে। শুক্রবার ছুটির দিনে ধারণা করা যাচ্ছে অন্তত ২০হাজার পর্যটক আছে বলেও জানান তিনি। 

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও জেলা প্রশাসন যা বলছে

ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতুর প্রভাবে ঝালকাঠিতে কৃষি বিপ্লবের বিস্ফোরণ ঘটবে। কৃষক ও কৃষির উন্নয়ন তরান্বিত হবে। এর ফলে দ্রুত কৃষকের উৎপাদিত পণ্য পেয়ারা দেশের সব বাজারে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। ফেরির অপেক্ষায় পেয়ারা নষ্ট ও সময় ক্ষেপণ হচ্ছে না। কৃষকের নগদ ও ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। বাকিতে পাইকারের কাছে বিক্রি করতে হবে না। বিশেষ করে পেয়ারার বাজার তরান্বিত হয়েছে। দুই মাসে চাষীরা আট থেকে দশ লাখ টাকার পেয়ারা বাজারজাত করে থাকেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পেয়ারা চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পেয়ারা চাষীদের সঙ্গে ভীমরুলী ভাসমান হাট বাঁচিয়ে রাখতে হলে এখানে একটি হিমাগার এবং জেলির কারখানা গড়ে তুলতে হবে। এছাড়াও বিদেশে পেয়ারা রপ্তানির ব্যবস্থা করতে পারলে সুস্বাদু এ ফলের চাহিদা বেড়ে যেতো। বিদেশি কোন কম্পানিও তখন এখান থেকে পেয়ারা নিতে আগ্রহী হতেন। আমরা চাষীদের সব রকমের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। তারা যেকোন পরামর্শ চাইলে তা দ্রুত দেওয়া হয়। 

জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, ঝালকাঠির ব্র্যান্ডিং পণ্য পেয়ারা ও শীতলপাটি চাষীদের এতো দিনের স্বপ্ন পূরণের দ্বার উম্মোচন হয়েছে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। কারণ বিশ্বের সকল পর্যটকরা এখন সরাসরি ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে ঝালকাঠি এসে  পেয়ারা রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। আমাদের পক্ষ থেকে পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য সবধরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তাঘাট এখন আগের চেয়ে ভালো। ভবিষ্যতে এ এলাকায় পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে।

    
    


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন