ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

Motobad news

চিকিৎসক সাবিরা হত্যার ঘটনার কিছু তথ্য

চিকিৎসক সাবিরা হত্যার ঘটনার কিছু তথ্য
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

রাজধানীর কলাবাগানে নিজ বাসায় হত্যার শিকার হন গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক সাবিরা রহমান লিপি। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে পরিবারের কাছে ওই চিকিৎসকের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।  

এ ঘটনায় পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে ডিবি পুলিশ।  এদের মধ্যে সাবিরার বাসায় সাবলেট থাকা একজন তরুণী ও তার দুই বন্ধু, সাবিরার বাসার খণ্ডকালীন গৃহকর্মী এবং ওই বাসার দারোয়ান রয়েছে।

মহানগরের রমনা ডিবির উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি। এ ছাড়া সন্দেহের তালিকায় আরও অনেককেই রাখা হয়েছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাব। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে এর বেশি এখন বলা যাবে না।

এদিকে সাবিরাকে কে বা কারা, কেন হত্যা করেছে সে বিষয়ে এখনো জানতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।  এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার কোনো স্বজন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেনি। মামলা না করলেও তার মৃত্যু নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। 

কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে এখনো নিহতের কোনো স্বজন অভিযোগ নিয়ে আমাদের থানায় আসেননি। তারা বলেছেন, লাশ দাফনের পর মামলা করবেন।

সূত্র জানায়, রাতে সাবিরা বাসায় একাই ছিলেন। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় সাবিরার গলা ও শরীরে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে তার মুখমণ্ডল ও শরীরের কিছু অংশ আগুনে পোড়ানো ছিল।

সাবিরার মরদেহটি বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে ছিল, বিছানার কিছু অংশও ছিল পোড়া। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিমের সন্দেহ, সাবিরাকে রোববার মধ্যরাতে হত্যা করা হয়। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সোমবার সকালে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

হত্যার রহস্য উন্মোচনে কাজ করছে কলাবাগান থানার পুলিশ, ডিবি ও পিবিআই। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত সাবেরা হত্যার কোনো ক্লু পায়নি তারা।

ঘটনাটির ছায়া তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) মহানগর উত্তর বিভাগ। কোনো ধরনের ক্লু না পাওয়ার কথা তারা জানিয়েছে। 

পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, লাশটি প্রাথমিক পরীক্ষা করেই বোঝা গেছে, রোববার মাঝরাতে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়। সকালে বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে মরদেহটি পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিল হত্যাকারী, যেন হত্যাকে অগ্নিদুর্ঘটনায় রূপ দেওয়া যায়।

‘তাই হত্যাকারী বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে দরজার লক চেপে পালিয়ে যায়। কিন্তু আগুন লাগাতে কোনো দাহ্য পদার্থ ব্যবহার না করায় বিছানায় আগুন কিছুটা জ্বলে আবার নিভে যায়। তাই মরদেহের কিছু অংশ পুড়ে গেলেও অক্ষত ছিল। এতে আমরা পরিষ্কার ধারণা পেয়েছি, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং হত্যাকারী ঠাণ্ডা মাথায় এ কাজ করেছে। কিন্তু প্রথামিকভাবে কে, কেন এ কাজ করল তার উত্তর পাচ্ছি না।’

তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা আশা করছেন, ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট হত্যাকারী পর্যন্ত পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

তারা জানান, ঘটনার পর সিআইডির ক্রাইম সিন বিভাগ নানান আলামত সংগ্রহ করেছে। সেখানে কয়েকটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। তারা বিশেষ নজর দিচ্ছে চিকিৎসক সাবেরার রুমের দরজার ভেতরের দিকের নবটিতে পাওয়া ফিঙ্গারপ্রিন্টের ওপর। কারণ হত্যার সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তারা ডোরনবের লক চেপে দরজা বন্ধ করে গেছে।

শামসুদ্দীন আজাদ সাবিরার দ্বিতীয় স্বামী। তার আগের স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।  তিনি চিকিৎসক ছিলেন। দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছেলে আগের স্বামীর ঘরের।

সাবিরার মামাতো ভাই জানান, সাবিরার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে বড় মেয়ে ছোট। ছেলে বিবিএ পড়ে, মেয়ের বয়স ১০ বছর। ওনার স্বামী আবুল কালাম আজাদ এখানে থাকেন না। মনোমালিন্যের কারণে এক বছর ধরে আলাদা থাকেন সাবিরা-আজাদ। তবে ওনাদের ভেতরে যোগাযোগ ছিল এবং ভালো সম্পর্ক ছিল।

কিন্তু ব্যস্ততার অজুহাতে মামলা করতে রাজি হননি সাবিরার স্বামী শামসুদ্দীন আজাদ।  এ ছাড়া নিহতে ছেলে প্রাপ্ত বয়স্ক হলেও কানাডায় পড়তে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে তার নানি তাকে মামলা করা থেকে বিরত রাখেন। 

ডা. সাবিরা কলাবাগানের ৫০/১ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন।  তিনি গ্রিন লাইফ হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন। ওই বাড়ির একটি ফ্ল্যাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।  নিহতের পিঠে দু’টি ও গলায় একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তিনি ফ্ল্যাটের দু’টি রুম অন্য একজনকে সাবলেট দিয়েছেন।


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন