ঢাকা বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

Motobad news

ভাণ্ডারিয়ার নাছিমা আক্তার পেলেন পিরোজপুরে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরষ্কার 

ভাণ্ডারিয়ার নাছিমা আক্তার পেলেন পিরোজপুরে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরষ্কার 
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

নাছিমা আক্তার পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের রাধানগর আমানউল্লাহ ডিগ্রি কলেজে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘ আঠারো বছর শিক্ষকতা করেছেন। 

তবে একজন নারী হিসেবে বর্তমান চাকুরী জীবনে পদার্পন সহজ ছিল না তাঁর জন্য। বরিশাল সদরের সমভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারের ৮ ভাইবোনের মধ্যে তিনি সপ্তম । বাবা ছিলেন একজন চাকুরীজীবী, মা গৃহিনী। রক্ষনশীল বাবার পরিবারে সীমাবদ্ধ মানসিকতায় তিনি প্রতিনিয়ত অনুভব করতেন, তিনি একজন মেয়ে, তাঁর ভাইদের থেকে তিনি সর্বদাই অ-গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যাক্তি।  

তাঁর অন্য বোনদের এইচ এস সি পাশ করার পর পরই বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। কেননা  এই পরিবারে  পড়াশুনার ক্ষেত্রেও ছেলেদের বেশি গুরুত্ব দেয়া হতো। কিন্তু নাছিমা আক্তার জিদ করেই স্নাতক (সন্মান) সহ এম এ ডিগ্রি (বাংলা) অর্জন করেন। অবশ্য এ জন্য তাকে অষ্টম শ্রেনী থেকেই টিউশনি করতে করতে নিজেকে নিজে সাহয্য করতে শিখেছিলেন নাছিমা। চার ভাই প্রত্যেকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে সু-প্রতিষ্ঠিত।  

বড়ভাই বি এস সি ইঞ্জিনিয়ার, মেঝভাই ডাক্তার, সেজভাই বি এস সি ইঞ্জিনিয়ার, ছোটভাই এক মেডিকেল ফার্মায় জেনারেল ম্যানেজার। তিন বোন মায়ের মতই গৃহীনি।  নাছিমা আক্তার মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা করার সুযোগ পেলেও মেয়ে হয়ে বাইরে গিয়ে চাকরি করা বারণ ছিল পরিবার থেকে। তাই পড়াশোনা শেষ করে যখন বেকার সময় পার করছিলেন তিনি, তখন কেবল তাঁর মনে হয়েছিল তাকে যেন কখনও কারো উপর নির্ভর করতে না হয়। 

ভাইদের মত তিনিও যেন বাবা মায়ের সম্পদ হতে পারেন। তবে মনের সুপ্ত বাসনা পূর্ণ হয় বিয়ের পড়ে। তার স্বামী গাজী জসিম উদ্দিন  ঝালকাঠী জেলার রাজাপুর কলেজের উপাধ্যক্ষ। স্বামীর সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় শিক্ষকতা জীবনে পা ফেলেন তিনি। এরপর একে একে আসতে শুরু করে সফলতা। 

নাছিমা আক্তার এ প্রতিবেদককে বলেন, কর্মক্ষেত্রে এসেও আমি একই পরিস্থিতি দেখেছি। দেখেছি অনেক বাবা-মা ই তাদের মেয়েকে সম্পদ না ভেবে পরিবারের বোঝা মনে করতেন।  মেয়েকে পড়াশুনা করান কেবল মাত্র মেয়েকে ভাল পাত্রস্থ করার জন্য। তখনই তিনি যতটা পারেন সেই সব মেয়েদের পাশে  সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দাড়াতে চেষ্টা করেন, ওদের মনের গহীনে মেয়ে নয়, মানুষ হওযার স্বপ্ন অংকুরিত করতে চান। ওদের মনোজগতে এঁকে দিতে চান সাংস্কৃতিক উদারতা, দেখাতে চান মুক্ত আকাশ আর এই বিশাল পৃথিবীর সৌন্দর্য। তার স্বপ্ন ওরা মেয়ে মানুষ থেকে পূর্ণাঙ্গ স্বনির্ভর মানুষ হয়ে উঠুক।

আর্থিক স্বচ্ছল একজন  ভালো শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী, কবিতা, আবৃত্তি, নাট্যকার হিসাবে বর্তমানে জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার আমান উল্লাহ ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিজের স্বপ্ন পুরনে বদ্ধ পরিকর নাছিমা আক্তার যোগ্য স্বামী এবং  এক পুত্র সন্তান বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগে অধ্যয়নরত কে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে কাজের স্বীকৃতিও মিলেছে তাঁর।

 
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ ২০২২-২৩ কার্যক্রমের আওতায় পিরোজপুর জেলা থেকে শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরষ্কার পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে পিরোজপুর জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক দফতরের উদ্যোগে গত শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান এর কাছ থেকে জয়িতার সম্মাননা পুরস্কার ও সার্টিফিকেট গ্রহন করেন।

উচ্ছ্বসিত অনুভুতি ব্যাক্ত করে নাছিমা আক্তার  জানান, যাদের জন্য এই সম্মাননা পেয়েছি, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আজ থেকে এই সম্মাননা আমার কাজে অনুপ্রেরনা যোগাবে । নারীদের শিক্ষিত করে স্বনির্ভর জাতি গঠনে আমি নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে চাই। আগামীর সুখী সমৃদ্ধির বাংলাদেশ তৈরিতে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অনেক এবং পুরুষের পাশাপাশি নারীদের স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন। চেষ্টা করব প্রতিদিনই কোনো না কোনো একটি ভালো কাজ করতে। কেন না, আমি বিশ্বাস করি মানুষ ভালো কাজের মাধ্যমে মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকে।


এস. সমদ্দার/ ‍এইচকেআর            
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন