ঢাকা বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

Motobad news

জীর্ণ স্কুলভবনে সন্তানদের পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরা

জীর্ণ স্কুলভবনে সন্তানদের পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ভবনের পলেস্তরা খুলে পড়ছে অন্তত চার বছর থেকে। চাপে বাঁকা হয়ে গেছে জানালা-দরজা। খুলেও গেছে কয়েকটা। সেই ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের চলত পাঠদান। শিশুদের ঝুঁকির কথা চিন্তা করে সম্প্রতি ভবনের পাশে একটি অস্থায়ী টিনের ঘর তুলে সেখানে পড়ালেখা করতে হচ্ছে পিরোজপুর সদর উপজেলার ৮১ নম্বর খুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। 

শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা নিরাপদে থাকলেও তারা আছেন আতঙ্কে। নতুন ভবন না হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে না বলে জানান তারা। তাই দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের দাবি তাদের।  

খুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৬৫ সালে। ১৯৭২ সালে স্কুলটি সরকারিকরণ করা হয়। ১৯৯৫ সালে নির্মাণ করা হয় বর্তমান ভবনটি। সম্প্রতি সেটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। 

বিদ্যালয়সূত্র ও সরেজমিনে দেখা যায়, খুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে পড়াশোনা করছে ১৩৫ শিক্ষার্থী। এখানকার ফলাফল ভালো হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পাঠদানের জন্য নিয়ে আসেন। তবে বাড়ি থেকে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে অভিভাবকরা থাকেন আতঙ্কে। কখন যে কী হয়ে যায়! 

শিক্ষকরা জানান, ১৯৯৫ সালে নির্মাণের পর ২০১৫ সাল থেকেই ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা যেতে শুরু করে। তখন থেকেই খুলে পড়তে থাকে পলেস্তরা। বর্ষাকালে ছাদ দিয়ে পড়ে পানি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলায় ৯৯২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার হার ৫৮ দশমিক ০৫ শতাংশ। তবে জেলায় শতাধিক বিদ্যালয়ই ঝুঁকিপূর্ণ। মহাপরিচালক অফিসে তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে এই ভবনগুলো নতুনভাবে আসবে। কোনো কোনো স্থানে নতুন ভবনের কাজ শুরুর তথ্যও পাওয়া গেছে। 

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাত তাহা জানায়, ‘আমাদের বিদ্যালয় ভবনটি অনেক পুরোনো, যা মাঝে মাঝেই ধসে যায়। তাই আমাদের শিক্ষকরা আমাদের টিনের একটি ঘরে নিয়ে ক্লাস নেন।’ 

বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী কুশল কর্মকার জানায়, কিছুদিন আগে তাদের ক্লাস চলার সময় পলেস্তরা খসে পড়েছিল। এমনকি তাদের ক্লাসের ফ্যানও খুলে পড়েছিল, যা থেকে তারা অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে। 

শিক্ষার্থী অভিভাবক মঞ্জু রানী বলেন, ‘বিদ্যালয়টি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের সন্তানরা বিদ্যালয়ে এসে অনেক ভয়ে ভয়ে থাকে। পলেস্তরা মাঝে মাঝে খসে পড়ে। আমরা তাদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকি। তারা বাসায় গিয়েও বলে বিদ্যালয়ের ভবন পুরোনো, এটি নতুনভাবে করা দরকার।’   

আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক খাদিজা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলেকে এই বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য পাঠাই। বহু বছর ধরে এই বিদ্যালয় ভবনটি সংস্কার বা নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছে না। ওদের এখানে পাঠানোর পর ছাত্ররা যেমন অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে, তেমনি আমরাও বাড়িতে আতঙ্কে থাকি। কখন কোন ঘটনা ঘটে বা তারা কীভাবে আহত হয়। তাই আমাদের দাবি শিক্ষার্থীদের নিরাপদে পাঠদানের স্বার্থে যাতে বিদ্যালয় ভবনটি দ্রুত সময়ে নতুনভাবে তৈরি করে দেওয়া হয়।’  

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বনানী রাণী পাল বলেন, ‘আমি এ বিদ্যালটিতে ২০১৬ সাল থেকে শিক্ষকতা করছি। এখানে আসার পর থেকেই এই জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস নিচ্ছি। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় কখন কী হয়। একবার সিলিং ফ্যান একবার পলেস্তরা খুলে পড়েছে। আমরা মনোযোগ সহকারে এখানে থাকতে পারি না। বিদ্যালয়ের নতুন একটা ভবন হলে সবার চিন্তা একবারে শেষ হয়।’ 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অঞ্জু রাণী কর্মকার বলেন, ‘আমি বিদ্যালয়ে যোগদানের পর এখানে বড় ধরনের কোনো মেরামত হয়নি। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে একটি টিনশেডে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২টি বড় দুর্ঘটনা থেকে আমার বাচ্চারা অল্পের জন্য বেঁচে গেছে। এখন এ জন্য অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের পাশের স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কুমারেশ চন্দ্র গাছি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের নামের তালিকা উপজেলা অনুযায়ী অগ্রাধিকারভিত্তিতে মহাপরিচালকের অফিসে পাঠানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের পাশে জরুরি তহবিল থেকে পাঠদানের সুবিধার্থে টিনশেড তৈরি করছি। পাঠদান কার্যক্রম কোনোভাবেই ব্যাহত হচ্ছে না। আশা করছি, ২-১ বছরের মধ্যেই আমরা নতুন ভবন পেয়ে যাব। সেইসঙ্গে নতুন আসবাবপত্র সরবরাহের মাধ্যমে আবারও সম্পূর্ণরূপে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারব।’


এএজে
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন