কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলেরা


ভোলার সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. নুরুন্নবী (৪০)। গত ২৫ বছর ধরে তিনি নদীতে মাছ শিকার করে আসছেন। বর্তমানে তার স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ ছয়জনের সংসার। নদীর মাছের ওপরই নির্ভর তার সংসার ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ যাবতীয় খরচ। গত দুই মাস নদীতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ধারদেনা করে সংসার চালিয়েছেন। আশা ছিল নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে নদীতে মাছ শিকার করে তা দিয়ে ধারদেনা পরিশোধ করবেন।
কিন্তু গত চার দিন ধরে নদীতে গিয়ে প্রতিদিনই লোকশান দিতে হচ্ছে তাকে। এ জন্য নদীতে না যাওয়ার চিন্তা করছেন তিনি। নুরুন্নবী বলেন, ‘অভিযান শেষে অনেক আশা নিয়া নদীতে মাছ ধরতে গেছি। কিন্তু প্রতিদিনই ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা লোকসান দিয়ে বাড়ি আসতে হইছে। দেনা তো দেওয়া দূরে থাক, সংসার চালাইতে হয় দেনা করে। এই জন্য নদীতে যাওয়া বন্ধ করে দিছি। আড়তদারের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা দাদন নিয়া আলু ও চাল কিনে আনছি।’
নুরুন্নবীর মতো ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় সব জেলেরই এক অবস্থা। দীর্ঘ দুই মাস অভিযান শেষে নদীতে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন জেলেরা। অনেক জেলেই এখন নদীতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
ইলিশা ভাঙতির খাল মাছঘাটের জেলে মো. খোকন মাঝি জানান, গত চার দিনে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে তার প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। এখন তার পরও আশা নিয়ে নদীতে মাছ শিকারে যাচ্ছেন। নদীতে না গেলে দেনাদারদের চাপে থাকতে হয়। সপ্তাহে এনজিওর কিস্তি দেড় হাজার টাকা।
ভোলার তুলাতুলি মাছঘাটের জেলেরা জানান, নদীতে সরা দিন জাল ফেলে দু-চারটি যা মাছ ধরা পড়েছে তা আকারে ছোট। কোনো কোনো জেলে সামান্য মাছ পেলেও তা বিক্রি করে তেলের খরচও উঠছে না। এতে করে তারা হতাশায় পড়েছেন।
ভোলার ইলিশা, ভাঙতির খাল, চডারমাথা, তুলাতুলিসহ বিভিন্ন মাছঘাটের ব্যবসায়ীরা জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় তাদের ব্যবসা বন্ধ থাকায় গুনতে হয়েছে লোকসান। এবার আশা ছিল নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণ মাছ শিকার করলে তাদের ব্যবসা জমজমাট হবে। তা দিয়ে বিগত দুই মাসের লোকসান পুষিয়ে নেবেন তারা। কিন্তু মাছ কম পাওয়ায় তারাও হতাশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশের অভয়াশ্রম হওয়ায় দুই মাসের জন্য ভোলার ইলিশা থেকে চর পিয়াল ৯০ কিলোমিটার মেঘনা নদী ও ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তম ১০০ কিলোমিটার তেতুঁলিয়া নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য বিভাগ। এই নিষেধাজ্ঞা শেষে ৩০ এপ্রিল রবিবার মধ্যরাত থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে নদীতে নেমেছেন ভোলার সাত উপজেলার দুই লক্ষাধিক জেলে। তাদের আশা ছিল, দুই মাসের অভিযান শেষে নদীতে প্রচুর মাছ পাবেন। আর তাতে গত দুই মাসের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন। ধার-দেনা শোধ দিয়ে সচ্ছলতা ফিরে পাবেন। কিন্তু জেলেদের জালে গত চার দিন আশানুরূপ মাছ ধরা পড়ছে না।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, ইলিশের অভয়াশ্রমে দুই মাসের অভিযান শতভাগ সফল হয়েছে। এতে করে মাছের উৎপাদন বাড়বে। তবে বর্তমানে নদীতে মাছ কম থাকার বিষয়ে তিনি বৃষ্টি কম হওয়াকে দায়ী করেছেন। এ পূর্ণিমার পর নদীতে ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়বে বলে আশাবাদী তিনি।
এইচকেআর
