খানাখন্দে বেহাল ১০ কিলোমিটার সড়ক, ভোগান্তি চরমে


ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা বাসস্ট্যান্ড থেকে হাওলাদার বাজার পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এ সড়কটি এখন স্থানীয় লোকদের কাছে ভোগান্তির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এই সড়কটি দিয়ে মালাবাহী যাহবাহন চলাচলের পাশাপাশি সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ও বাপ্তা ইউনিয়নের প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষের যাতায়াত। সড়কটিতে বড় বড় গর্ত হয়ে বৃষ্টির দিনে কাদাপানি জমে থাকে এবং শীতের সময় ধুলাবালির মধ্যে চলাচল করতে হয় স্থানীয়দের।
এ ছাড়াও সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই গর্তে আটকে যায় মালাবাহী ট্রাক। গত তিন বছর ধরেই সড়কটির এ বেহাল অবস্থা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এ সড়কটিতে বড় বড় গর্তে পানি জমে আছে। মালবাহী ট্রাক ও অটোরিকশা চলাচলের সময় ময়লা পানি ছিটকে গিয়ে পথচারীদের গায়ে গিয়ে পড়ছে।
সড়কটির এমন বেহাল অবস্থা যে যানবাহন তো দূরে থাক, পায়ে হেঁটেও চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছে পথচারীদের। ইলিশা বাসস্ট্যান্ড থেকে ভোলা খালের পাশ দিয়ে কলঘাট বাজার, জাইল্যাবাড়ি, পাঙ্গাশিয়া বাজার হয়ে সদর উপজেলার বাপ্তা ও পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়ন পরিষদের কাছে হাওলাদার বাজার এলাকায় ভোলা-বরিশাল-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভোলা অংশের সঙ্গে মিশেছে। এই সড়কের পাশে একটি সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি, ১০-১২টি ইটভাটা রয়েছে। মহাসড়ক থেকে ভোলা সদরে যাতায়াত সহজ হওয়ায় দিন দিন সড়কটিতে ভারী মালবাহী যানবাহন চলাচল বাড়ছে।
এতে করে সড়কের ওপরে পিচের কার্পেটিং উঠে গেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সড়কের দুই পাশের বালুর খোলা। সারা বছর বালু থেকে চুইয়ে পড়া পানিতে প্রায় সারা বছরই সড়কটি কাদাপানিতে ভিজে থাকে। এ সড়কের পাশে দুটি কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসাসহ প্রায় ১০টির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেশ কয়েকটি মসজিদ রয়েছে। প্রতিদিন এ সড়কটি দিয়ে এ সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে থাকে।
বর্ষায় কাদাপানি এবং শীতে ধুলাবালিতে পথচারী, শিক্ষার্থী ও আশপাশের মানুষ নাকাল হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে যেতে সবাইকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ সড়কের পাশে অবস্থিত পশ্চিম বাপ্তা আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মোজাম্মেল হোসেন জানান, এ সড়কটি দিয়ে দিনে কমপক্ষে ৫০টি মালবাহী ট্রাক ও ট্রাক্টর চলে। বোরাক, মোটরসাইকেল, রিকশা, নছিমন-করিমন চলে কয়েকশ। কিন্তু এলজিইডি সড়কটি নির্মাণ করেছে রিকশা ও পায়ে চলা সড়কের মতো করে। তাই সংস্কারের কয়েক দিনের মধ্যেই গর্ত তৈরি হয়।
তিনি আরো জানান, এ সড়ক দিয়েই তাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষর্থী চলাচল করেন। সড়কটির এমন অবস্থা যে, আগে যে দূরত্বের পথ রিকশায় যেতে ভাড়া লাগতো ২০ টাকা, সেখানে ১০০ টাকায়ও রিকশা যেতে চায় না। আর সড়কে কাদাপানি জমে থাকায় পায়ে হেঁটেও যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। সড়কটিকে ভারি পণ্যবাহী যান চলাচলের উপযোগী করে দ্রæত সংস্কার করা দরকার।
একই প্রতিষ্ঠানের ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী জানান, বর্ষা মৌসুমে অনেক সময় কলেজে আসার সময় সড়কে থাকা কাদাপানি ছিটকে এসে গায়ের জামা-কাপর নষ্ট হয়ে যায়। তাই কলেজে না গিয়ে পথের মধ্য থেকেই বাড়ি চলে যেতে হয়। আবার সড়কটি খারাপ হওয়ায় রিকশা আসতে চায় না। তাই তাদের কলেজে আসতে যেতে প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বাপ্তা উকিল বাড়ি এলাকার সোহরাব, মাইনুল ইসলাম জিলনসহ পাঁচ-সাতজন বাসিন্দা জানান, এ সড়কটি গত ২০২০ সালে সংস্কারের পর ওই এলাকার মানুষ এর সুফল দুই-তিন মাসও ভোগ করতে পারেনি। যার প্রধান কারণ, এ সড়কের পাশে অপরিকল্পিত বালুর ব্যবসা এবং ভারী যানবাহন চলাচল। প্রতিদিন এ সড়কটি দিয়ে শত শত বালুর ট্রাক ও ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে দ্রæত বালুর খোলা বন্ধ করে সড়ক সংস্কারের দাবি জানান তারা।
এ সড়কের দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী ও স্থানীয় বাসিন্দা ইউছুফ জানান, এ সড়কটি ভালো রাখতে হলে আগে দুই পাশে বালু ব্যবসায়ীদের সরাতে হবে। নইলে যত ভালো সড়কই নির্মাণ করা হোক না কেনো, সড়কটি বেশি দিন স্থায়ী হবে না। কারণ, ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কারণে ওই পানি এসে সারা বছর সড়কটি ভিজে থাকে। আর এতে সড়ক নষ্ট হয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সদর উপজেলার নির্বাহী প্রকৌশলী শিপলু কর্মকার জানান, ইলিশা বাসস্ট্যান্ড থেকে সেলটেক জাইল্যাবাড়ি-পাঙ্গাশিয়া বাজার, হাওলাদার বাজার সড়কটির দৈর্ঘ্য ৯.৭ কিলোমিটার। সড়কটির উন্নয়নে স¤প্রতি একনেকে অনুমোদনের পর একজন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নির্ধারণ করা হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় প্রকৌশলীসহ একটি দল সার্ভে করে গেছে। প্রাক্কলন ব্যয় নির্ধারণ ও নকশার কাজ চলমান রয়েছে। সড়কটির প্রস্থ হবে ১৮ ফুট। পাথর-বালুর ৮-১০ ইঞ্চি ম্যাকডম, ওপরে বিটুমিনাস কার্পেটিং হবে তিন ইঞ্চি এবং ওয়ারিংকোড দুই ইঞ্চি। সড়কের দুই পাশে গাইডওয়াল, বিভিন্ন স্থানে আরসিসি পাকা ঢালাই করাসহ সড়কটি শক্তিশালী করার চেষ্টা চলছে, যাতে ভারি মালবাহী যানবাহন চলতে পারে।
এইচকেআর
