মনপুরায় গরু-মহিষ চুরির হিড়িক


ভোলার মনপুরায় প্রতিনিয়ত কৃষকের গরু-মহিষ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে চক্রটি। গত একমাসে সংঘবদ্ধ চোর চক্রটি মনপুরার মূল ভূ-খন্ড ও বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে শতাধিকের ওপর গরু-মহিষ চুরি করে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষক। থানায় অভিযোগ ও জিডি করে প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে কৃষকের। এতে গরু-মহিষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপকূলের কৃষকরা।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে হাতে নাতে চোর ধরে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর কাছে দিলেও যাচাই-বাছাইয়ের নামে পাগল ও রাজনৈতিক বিবেচনায় চোর চক্রের সদস্যদের আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ কৃষকের।
তবে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কৃষকের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, চোর ধরে থানায় দিলেও মামলা করতে রাজি হয়না, তাছাড়াও উপযুক্ত প্রমাণও দিতে পারে না কৃষক। তাই তারা চোরের বিরুদ্ধে আইনি কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেনা।
কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা যায়, কৃষক নিজাম উদ্দিনের কৃষি খামাড় থেকে ২টি গরু, একেএম শাহাজাহান মিয়ার ২ টি গরু, চরশাসুদ্দিন চর থেকে ফারুক মেম্বারের ২ টি গরু, কৃষক জুয়েল দাসের বইসা চরের থেকে একটি গরু, হানু বাতানিয়ার একই চর থেকে একটি গরু, হেজু ব্যাপারির বাড়ি থেকে ৩ টি গরু, কুদ্দুস ব্যাপারির বাড়ি থেকে ২ টি ও কৃষক নেজাম উদ্দিনের বাড়ি থেকে ১ টি। এছাড়াও উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের খালেক ব্যাপারী বাড়ি থেকে ৪ টি, একই গ্রামের খালেক হাওলাদারের বাড়ি থেকে ৬ টি, নাজিম ফরাজীর বাড়ি থেকে ৪ টি ও শামসুদ্দিনের বাড়ি থেকে ৩ টি গরু চুরি করে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চক্রটি।
কৃষক ফারুক মেম্বার জানান, চর শাসুদ্দিন থেকে এক দিনে ১৭ টি গরু চুরি করে নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোর চক্র। তখন থানায় ৮ টি জিডি করা হয়। এখন পর্যন্ত এর সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ।
এছাড়াও উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউয়িনরে বাসিন্দা কৃষক খালেক ব্যাপারি, খালেক হাওলাদার, নাজিম ফরাজী ও শাসুদ্দিনের গরু চুরি করে নিয়ে গেলে থানায় জিডি করে তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন চোর ও চুরি যাওয়া গরু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
কৃষক ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সংঘবদ্ধ চক্রটি একসাথে তিন থেকে চার কৃষকের খামাড় বা বাড়িতে হানা দেয়। প্রথমে তারা রাতের খাবারের সাথে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে দেয়। সেই নেশা জাতীয় খাবার খেয়ে কৃষকসহ পরিবারের সদস্যরা যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন চোর চক্রের সদস্যরা প্রথমে বাঁধা গরুর রশি ছেড়ে দেয়।
পরে অপর সদস্যরা গরু নিয়ে নদীর পাড়ে চলে যায়। নদীর পাড়ে আগে অবস্থান নেওয়া অপর সদস্যরা বোট চালু রেখে অপেক্ষা করতে থাকে। যখন গরু নিয়ে চক্রের সদস্যরা নদীর পাড়ে য়াওয়ার সাথে সাথে ট্রলারে উঠিয়ে নিয়ে যায়। চুরি করা গরু ভোলা, চরফ্যাসন, নোয়াখালী, লক্ষীপুর নিয়ে বিক্রি করে বলে জানায় একাধিক কৃষক।
হাজিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন হাওলাদার জানান, ইদানিং গরু-মহিষ চুরি বেড়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে বললেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় চুরি মাত্রা বেড়ে গেছে। একই কথা বলেন মনপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানত উল্লা আলমগীর ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান অলি উল্লা কাজল।
মনপুরা থানার সদ্য যোগদানকৃত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জহিরুল ইসলাম জানান, গরুর চুরির থানায় জিডি ও মামলা রয়েছে। পুলিশ সংঘবদ্ধ চক্রটি ধরতে অভিযান পরিচালনা করছে। অতিদ্রুত চক্রটি ধরা পড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আরজেএন
