ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news

এবার নক্ষত্র সৃষ্টির সময়কার ছবি প্রকাশ করলো নাসা

এবার নক্ষত্র সৃষ্টির সময়কার ছবি প্রকাশ করলো নাসা
ছবি: সংগৃহীত 
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

মহাজগতের শ্বাসরুদ্ধকর ছবি তুলে বিশ্বকে অবাক করে দেওয়ার এক বছর পর জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে পাঠানো নতুন ছবি প্রকাশ করেছে নাসা। বুধবার (১২ জুলাই) টেলিস্কোপটির ধারণ করা ৩৯০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত পৃথিবীর নিকটতম তারকা-গঠন অঞ্চলের অত্যাশ্চর্য ছবি প্রকাশ করা হয়।

পৃথিবী থেকে রো ওফিউচি নার্সারির দূরত্ব প্রায় ৩৯০ আলোকবর্ষ। ওফিউকাস নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে এর অবস্থান। রো ওফিউচি একটি বহুমাত্রিক স্টার সিস্টেম, যার মধ্যে জন্ম নেয় নতুন নক্ষত্রেরা।


সেই রো ওফিউচিকেই ক্যামেরাবন্দি করেছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। তাতে আঁধারের বুকে লাল-নীল-হলুদের যে রংমশাল হয়ে ধরা দিয়েছে রো ওফিউচি। তার বুক ফুঁড়ে জন্ম নেওয়া কমপক্ষে ৫০টি নবজাতক নক্ষত্রও চোখে পড়েছে, যাদের অধিকাংশেরই ভর সূর্যের প্রায় সমান।

এর মধ্যে কিছু নক্ষত্রের চারপাশে বলয় দেখা গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নবজাতক নক্ষত্রগুলিকে ঘিরে গ্রহমণ্ডল গড়ে উঠছে, ঠিক সূর্যকে ঘিরে গড়ে ওঠা গ্রহমণ্ডলের মতো। সূর্য এবং সৌরমণ্ডলের জন্মও হয়েছিল একই ভাবে।


লাল-নীল-হলুদের যে সংমিশ্রণ চোখে পড়েছে, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে নাসা। বলা হয়েছে, মহাজাগতিক ধুলো ফুঁড়ে যখন প্রথম জন্ম নেয় কোনও নক্ষত্র, তখনও বিস্ফোরণ ঘটে। তার জেরে চারপাশে গ্যাস, ধুলো, আণবিক হাইড্রোজেন ছড়িয়ে পড়ে। তার জেরেই ওই লাল রং।

ঘন কালো অন্ধকার যে অংশটি, সেটি আসলে ধুলোর মেঘে ঢাকা রয়েছে। এই মুহূর্তে তার মধ্যে জন্ম নিচ্ছে নতুন কোনও নক্ষত্র। ছবির নীচের দিকে, মাঝামাঝি জায়গায় এস ১ নামের একটি নক্ষত্রকে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেটির ভর সূর্যের চেয়েও বেশি।

নাসার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বিল নেলসন বলেন, মাত্র এক বছরের মধ্যে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মানুষের চোখের সামনে মহাজগতকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অবস্থিত ধূলিমেঘ ও আলো অনেক কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে।

বিল নেলসন আরও বলেন, টেলিস্কোপটির একেকটি ছবি মানেই নতুন আবিষ্কার। এর মধ্য দিয়ে সারাবিশ্বের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন, যা এক সময় তারা কল্পনাও করেননি।

জেমস ওয়েবের ছবিতে প্রায় ৫০টি নবগঠিত নক্ষত্র দেখা গেছে, যেগুলোর ভর আমাদের সূর্যের মতো কিংবা তার চেয়ে তুলনামূলক কম। ছবির ওপরের দিক থেকে এক-তৃতীয়াংশ জায়গাজুড়ে বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেন গ্যাস আনুভূমিকভাবে ভেসে রয়েছে। ডান দিকে লম্বালম্বি করেও এ গ্যাস ভাসতে দেখা যাচ্ছে।

স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের জ্যোতির্বিদ ক্রিস্টিন চেন বলেন, ছবির একেবারে নিচের দিকের অংশে নবগঠিত ও যথেষ্ট উদ্দীপ্ত একটি নক্ষত্র দেখা গেছে। নক্ষত্রটি যে গ্যাস থেকে জন্মেছে, সে গ্যাস ও ধূলিমেঘের মধ্যে বুদ্‌বুদ তৈরি করছে।


বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ হলো, জেমস ওয়েব। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ফ্রেঞ্চ গায়ানা থেকে এটিকে মহাকাশে পাঠানো হয়। টেলিস্কোপটি পৃথিবী থেকে ১৬ লাখ মাইল দূরে দ্বিতীয় ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট (এল-২) নামে একটি কক্ষপথে স্থাপন করা হয়।

২০২২ সালের ১১ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জেমস ওয়েবের ধারণ করা প্রথম পূর্ণ রঙিন ছবি উন্মোচন করেন। এটি এক হাজার ৩০০ কোটি বছর আগের আদি মহাবিশ্বের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পরিষ্কার দৃশ্য।

 


সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন