শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ারের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের ফাইল আটকে রাখার অভিযোগ

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন শিক্ষকদের ফাইল দিনের পর দিন আটকে রেখে তুচ্ছ কারনে ফাইলগুলি বাতিল করে দেন। ফলে হাইস্কুলের শিক্ষকরা চাকুরী করলেও এমপিও থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির বীর মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ জননী সাহান আরা বেগম স্মৃতি মিলনায়তনে তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন এমপিও বঞ্চিত বেসরকারী শিক্ষক/ কর্মচারী বিভাগীয় প্রতিরোধ কমিটি।
এমপিও বঞ্চিত বেসরকারি শিক্ষক/কর্মচারি বিভাগীয় প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক আবদুল জববার খান সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
তিনি বলেন, শিক্ষক লিয়াকত আলী জমাদ্দার ২০২৩ সালের ১লা জুন থেকে ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার মরিচবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এর আগে তিনি একই উপজেলার আমরাবুনিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু গত ৯ মাস যাবৎ তিনি কোন সরকারী বেতন ভাতা পাচ্ছেন না।
তিনি আরো বলেন, লিয়াকত আলী জমাদ্দার ৪টি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করেছেন। যতোবার নিয়োগ হয়েছে, ততবার নতুন করে এমপিও হয়েছে, কিন্তু শেষবারে গত ৯মাস যাবৎ কোন বেতন ভাতা পাচ্ছেন না।
ইতোমধ্যে তার বাবার মৃত্যু হয়েছে, তিনি নিজেও সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তারপরেও এক টাকা বেতন ভাতা পাননি।
একই ভাবে হুমায়ুন কবির নলছিটির হাজী এম এ রশিদ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে নলছিটি পঞ্চগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২২ সালের ৭ জুলাই আসলেও প্রায় দুই বছর যাবৎ ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না
এছাড়া নলছিটি, কাঁঠালিয়া, বরিশাল সদর, পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদসহ বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন উপজেলার ৬০০ স্কুলের ১৫০০ শিক্ষক বেতন ভাতা থেকে গত ৬ মাস থেকে তিনবছর পর্যন্ত বঞ্চিত হয়ে আছেন।
আবদুল জববার খান বলেন, জুনিয়র পদ থেকে সিনিয়র পদ, বা এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলে গেলে বিভাগীয় উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনের কাছে আটকে যাচ্ছে ফাইল। তার হয়রানি ও অনিয়মের কারনে শিক্ষকররা বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে সংসার চালাতে পর্যন্ত পারছে না।
সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল শিক্ষক সমিতির আঞ্চলিক শাখার সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জানান, বেসরকারী শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন বা স্কেল পরিবর্তন বিষয়ে ৩৮ ধরনের কাগজপত্র লাগে। এর ফলে এই প্রক্রিয়াটি জটিলতর রুপ নিয়েছে।
তুচ্ছ কারন দেখিয়ে আবেদনগুলি বাতিল করায় শিক্ষকরা অসহায় হয়ে পড়ে তাদের বেতন ভাতা আটকে থাকে। দেশের অন্যানন্য অঞ্চলে এই বিষয়টির সুরাহা হলেও বরিশাল বিভাগে এটি আটকে দেন উপপরিচালক।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষক জামাল হোসেন জানান, উপ পরিচালক এই ফাইলগুলি ওকে না করায় বাধ্য হয়ে ডিজি অফিসে ছোটাছুটি করে আমরা ২২ জনের ফাইল ওকে করতে পেরেছি, কিন্তু এখনও প্রায় দেড়হাজার শিক্ষক এই সমস্যায় পড়েছে।
ভান্ডারিয়া উপজেলার দারুল হুদা আদরশ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হাইস্কুলের শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমি ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর এখানে বদলী হয়ে আসলেও অদ্যাবধি বেতন ভাতা পাইনি।
শিক্ষকরা জানান, আমরা বেতন ভাতা না পলে অনশন ও শিক্ষা অফিসের কার্যালয় ঘেরাও করব-ঈদের পর আমরা এই কঠোকর্মসূচী দিতে বাধ্য থাকবো।
মোফাজ্জেল হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সামিনা আফরোজ জানান, তার স্কুলের ৭ শিক্ষক কর্মচারীরা গত ২ বছর যাবৎ এমপিও ভুক্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উপ পরিচালকের কাছে এমপিও ভুক্তির ফাইল আটকে থাকায় আমরা গত ২ বছর যাবৎ বেতন ভাতা পাচ্ছি না।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, হয়রানির বিষয়টা আমি শুনেছি। উপ পরিচালক আনোয়ার হোসেনের কাছে হাইস্কুলের এতো ফাইল আটকে আছে এটা আমিও জানিনা।
তিনি বলেন, একজন শিক্ষক পূর্বে বেতন ভাতা পেতো-এখন কেন তাদের বেতন ভাতা বন্ধ থাকবে ? এটা কাম্য হতে পারে না। আমি এটি ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে তুলে ধরব।
এইচকেআর