বরিশালে দেয়াল ধ্বসে হোটেল মালিক ও শ্রমিক নিহতের ঘটনায় ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, তদন্তে বিসিসি

রেমালের প্রভাবে বরিশাল নগরীতে একটি ভবনের দেয়াল ধ্বসে হোটেল মালিক ও শ্রমিক নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। গত ২৮ মে নিহত হোটেল মালিক লোকমান হাওলাদারের স্ত্রী নূর নাহার বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় ধ্বসে পড়া রূপাতলী হাউজিংয়ের ৭ নম্বর রোডের ব্লাক-‘এ’র ভবন মালিক মো. নুরুল ইসলাম খলিফা ও তার স্ত্রী সীমা ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে অপর একটি প্রতারণা মামলায় আগে থেকেই কারাগারে রয়েছে ভবন মালিক নুরুল ইসলাম খলিফা।
অপরদিকে, ‘ধ্বসে পড়া ভবন নির্মাণে নকশা অনুমোদন করা হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। তিন সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে সিটি করপোরেশনের ‘খ’ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোতালেব হোসেনকে। নকশা গ্রহণ করা হলেও বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।
এর আগে গত ২৭ মে ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে ঝড়ের সময় প্রচন্ড বাতাসে নগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লিলি পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন নির্মাণাধীন চতুর্থ তলা ভবনের ছাদের দেয়ালের অংশ ধ্বসে পড়ে।
এসময় ভবনের নীচে থাকা টিনশেড খাবার হোটেলের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা হোটেল মালিক লোকমান হোসেন ও কর্মচারী মোকছেদুর রহমান দেয়াল চাপায় মারা যান। গুরুতর আহত হন অপর হোটেল শ্রমিক সাকিব। এদের মধ্যে হোটেল শ্রমিক সাকিব বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন। আহত ও নিহত সবাই পটুয়াখালী সদর উপজেলার বড়বিঘাই গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নুরুল ইসলাম খলিফা চারতলা ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে আগেও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। যেই স্থান হতে দেয়ালের অংশ ধ্বসে পূর্বে একই স্থান হতে কয়েকটি ইট খসে পড়েছিল লোকমান হোসেনের হোটেলের টিনের চালে।
তখনকার সময় বিষয়টি নিয়ে ভবন মালিককে সতর্ক করা হয়েছিল। এমনকি স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে তাকে বিল্ডিং কোড মেনে নিরাপদে কাজ করার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু ভবন মালিক এবং তার স্ত্রী কোনভাবেই সেই অনুরোধের কর্ণপাত করেননি। আর তাই ভবন মালিকের অসাবধানতা এবং অবহেলার কারণেই দেয়াল ধ্বসে একই হোটেলের মালিক এবং শ্রমিকের নির্মম মৃত্যু হয়েছে বলে মামলায় দাবি করা হয়েছে।
এদিকে, ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন রোমেল বলেন, ‘ভবন ধ্বসে দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি মেয়র মহোদয়ের দৃষ্টিতে এসেছে। তার নির্দেশে নির্মাণাধীন ভবনটির নকশা রয়েছে কিনা, সে বিষয়টি তদন্ত করতে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে সিটি করপোরেশনের ‘খ’ অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেনকে। তদন্ত কমিটি ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড অনুসরণ করছে কিনা সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘ভবন মালিক নুরুল ইসলাম খলিফা পূর্বে থেকেই এলাকায় ব্যাপকভাবে সমালচিত। এলাকার কেউ কেউ তাকে প্রতারক ‘নুরু’ নামেও চেনেন। ইতিপূর্বে একাধিক মানুষের সাথে প্রতারণা করে অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। এমনকি বর্তমানে একটি প্রতারণা মামলায় কারাগারে রয়েছেন নুরুল ইসলাম খলিফা। এমনকি সঠিক তদন্তে তার বিরুদ্ধে ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগও বেরিয়ে আসবে বলে দাবি স্থানীয়দের।
তবে নুরুল ইসলাম খলিফার স্ত্রী সীমা ইসলাম মুঠোফোনে দাবি করেন, ‘বাড়ির প্ল্যান সংক্রান্ত সকল কাগজপত্রের বিষয়ে তার স্বামী বলতে পারবেন। তবে সিটি করপোরেশন থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত তাদের বাড়ির প্ল্যান অনুমোদন রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এইচকেআর