বরিশালে থামছে না গণপরিবহনে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়

বাসের টিকিটের দাম ৮০০ টাকা করলেন কেন, আরো ২০০ টাকা বাড়িয়ে নিতেন। রোববার ঢাকার উদ্দেশ্য নথুল্লাবাদ বাসর্টামিনালে এসে বিআরটিসি এসি বাসে টিকিট নিতে এসে কাউন্টার ক্লার্কের কাছ থেকে ভাড়ার রেট শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে এ কথাগুলো বলেছেন রবিউল ইসলাম।
তিনি বলেন, প্রশাসন সতর্ক থাকলে এভাবে বাড়তি ভাড়া কীভাবে আদায় করে? সাধারণ মানুষের পক্ষে আসলে কেউ নাই।
ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন রবিউল। ঈদে পরিবার নিয়ে পটুয়াখালীর বাউফলে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন।
প্রতিবেদকের কথা হলে রবিউল ইসলাম বলেন, কয়েকটা দিন বাড়তি ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় যাবার জন্য এসেছি। কিন্তু ‘ভাই’ টিকিটের জন্য তিন ঘন্টা বাসর্টামিনালের ঢাকার সব কাউন্টারে ঘুরেছি। প্রতিটি কাউন্টারে বাড়তি ভাড়া ছাড়া টিকিট মিলছে না।
মনে করেছি বিআরটিসি সরকারী প্রতিষ্ঠানের গাড়ি, নির্ধারিত ভাড়ায় ঢাকায় যেতে পারবো। কিন্তু এখানে এসে দেখি উল্টো। আগের চেয়ে ১০০-২০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে তাঁরা। তিনি বলেন, বাড়তি ভাড়ার বিষয়টি জানতে চাইলে কাউন্টার মাষ্টার ঈদের অজুহাত দেয়। এ জন্য কিছুটা উত্তেজিত হয়ে গেছি।
শুধু রবিউল নয়, দি¦গুণ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে বিআরটিসি বাসের বিরুদ্ধে এমনি অভিযোগ করেছেন ঢাকাগামী পাথরঘাটা, কুয়াকাটা, আমুয়া, তালতলী থেকে আসা যাত্রী নয়ন হোসেন, রহিমা বেগম ও রিমন জমাদ্দার। তাঁরা বলেন, বিআরটিসি বাসে যাত্রী হয়রানি নতুন কিছু নয়, কোরবানীর ঈদ শেষ হয়েছে এক সপ্তাহ হল।
তবে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেয়ার বিষয়ে সরেজমিনে জানতে বিআরটিসি বাস ডিপোতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে অভিযোগ অস্বীকার করে বিআরটিসি বাস ডিপোর পরিযান পরিদর্শক সুপ্রভাত কবিরাজ বলেন, প্রতিদিনই মনিটরিং করা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ পায়নি। যাত্রীরা বাড়তি ভাড়ার টিকিট দেখাতে পারলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিন্তু তাদের ঈদের বখশিস এখনো শেষ হয়নি। ঢাকা থেকে আসতেও বাড়তি ভাড়া দিলাম, এখন যেতেও বাড়তি দিতে হচ্ছে। সাধারণ যাত্রীদের পকেট কাটার তাদের শেষ হয়নি।
জানা গেছে, রোববার সকাল ৬ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ঢাকার উদ্দেশ্য বিআরটিসি ১১টি বাস ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে এসি বাস ৮টি এবং নন এসি ৩ টি।
বিআরটিসি বাসের পাশাপাশি ঢাকাগামী অন্যান্য দূরপাল্লার পরিবহন যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। রোববার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিএমএফ পরিবহনে বরিশাল থেকে ঢাকা সায়েদাবাদের ভাড়া ৫০০ টাকার পরিবর্তে আদায় করছে ৭০০ টাকা করে।
একইভাবে ২০০ টাকা বাড়িয়ে ইলিশ পরিবহনের এসি বাসে ১০০ টাকা এবং নন এসি ৭০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া হানিফ পরিবহনে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬০০ টাকা, সাকুরা এসি বাসে ৩০০ টাকা বাড়িয়ে ১০০০ টাকা এবং গোল্ডেন লাইন পরিবহনে ৫০০ টাকার ভাড়ার স্থলে ৭০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। বরিশাল থেকে ঢাকায় যাত্রী নামিয়ে গাড়িটি খালি আসায় বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসব পরিবহনের দায়িত্ব কাউন্টার ম্যানেজাররা।
মনির হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, বরিশাল থেকে গোল্ডেন লাইন পরিবহনে ঢাকা পর্যন্ত অন্য সময়ে ৫০০ টাকা টিকিট হলেও এখন ৭০০ টাকা নিয়েছে। কয়েকটি বাস কাউন্টার ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে, ফলে বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়েই যেতে হচ্ছে।
আরেক যাত্রী মিজানুর রহমান বলেন, বাস কর্তৃপক্ষ অন্যান্য সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত ভাড়াতো নিচ্ছেই পাশাপাশি চলতি পথে ইচ্ছেমতো গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠায়। বরিশাল থেকে ঢাকা পুরো পথেই এমন ঘটনা ঘটে। এ রুটে প্রশাসনের কোনো নজরদারি চোখে পড়ে না।
সুমন নামের ঢাকাগামী আরেক যাত্রী বলেন, আগে ঈদের ছুটিতে লঞ্চেই বরিশাল আসা যাওয়া করা হতো। পদ্ম সেতু চালুর পর থেকে বাসেই আসা যাওয়া করি। তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকা-বরিশাল আসা-যাওয়া করা যায়। কিন্তু এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বাস সংশ্লিষ্টরা।
তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রæপের সভাপতি অসীম দেওয়ান বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া যাত্রীদের সুবিধার্থে বাস টার্মিনাল এলাকায় বুথ বসানো হয়েছে। সেখানেও কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) রুনা লায়লা বলেন, সাধারণ মানুষ যেন নিরাপদে এবং ভোগান্তি ছাড়া কর্মস্থলে ফিরতে পারে তা নিশ্চিতে বাস টার্মিনাল ও লঞ্চ ঘাট এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ভোগান্তিমুক্ত যাত্রার নিশ্চয়তা দিতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
এদিকে রোববার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বরিশাল নদী বন্দর থেকে ৮টি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিআইডবিøউটিএ’র উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, গত দুএকদিনের তুলনায় রোববার একটু যাত্রীর চাপ কম ছিল। তবে যাত্রীদের নিরাপত্তায় বন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
এমএন