ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

Motobad news

বরিশালে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ   

বরিশালে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ   
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

গোপনে পকেট কমিটি গঠন, বিধি ভেঙে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়, কর্মচারি নিয়োগে বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা এলাকার এআরএস বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।

এ নিয়ে গতকাল সোমবার (২৪ জুন) কয়েকজন অভিভাবক বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁরা হলেন, অভিভাবক সেলিনা বেগম, দেলোয়ার হোসেন, মধু এবং মতিউর রহমান। 

কমিটিতে সভাপতি হিসেবে মিজানুর রহমান স্বপনকে সভাপতি, সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন (প্রধান শিক্ষক), ৫ জন অভিভাবক সদস্য, তিনজন শিক্ষক প্রতিনিধি, একজন দাতা সদস্য এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মিজানুর রহমান স্বপন ১২ নম্বর ওয়ার্ড আ’লীগের  সাবেক সাধারণ সম্পাদক। 

তিনি বিদ্যালয়ের অভিভাবকও সদস্য না হয়েও প্রধান শিক্ষক আনোয়ারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে সভাপতি হয়েছেন দাবি করেছেন তাঁরা। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আ’লীগ নেতা ও নব্য সভাপতি দাবি দ্বার মিজানুর রহমান স্বপন বলেন, ২ জুন কমিটি পাস হলেও ১৯ জুন কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে বিদ্যালয়ের কোন সদস্য হওয়া লাগে না। অভিভাবক সদস্যরা নির্বাচিত করা কারণে এ পদ পেয়েছি আমি। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিভাবক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি না জানিয়ে শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম না মেনে সম্প্রতি রাতের গোপনে আঁধারে বিদ্যালয় পরিচালনা পকেট কমিটি করেছেন প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন। 

এছাড়া বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগে তিনি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।  অভিভাবক সেলিনা বেগম, দেলোয়ার হোসেন, মধু এবং মতিউর রহমান জানান, ঐ নির্বাচনের পূর্বে কোন ধরণের প্রচার-প্রচারণা করা হয়নি এবং যারা কমিটির বিভিন্ন পদে নির্বাচনের জন্য আগ্রহী ছিল তাদের  জানানো হয়নি। 

তাঁরা আরো বলেন, অভিভবাবক প্রতিনিধীর নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ২০২২ সালের ৮ মে বিদ্যালয়টিতে উৎসবমুখর পরিবেশে একটি ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই কমিটির মেয়াদ ছিল ২ বছর। মেয়াদ চলতি বছরের ১৯ জুন শেষ হয়। কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৮০ দিন পূর্বে নির্বাচনী তফসিল, ভোটার তালিকা ও সংশোধনী নোটিশ জারি করার নিয়ম থাকলেও মানা হয়নি।

আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন সম্প্রতি বিদ্যালয়ে বসে রাঁতের আঁধারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিথীকা সরকারের উপস্থিতিতে তাঁর পছন্দের লোকদের দিয়ে গোপনে একটি সিলেকশন কমিটি গঠন করা হয়। গত ২১ জনু সামাজিক যোগাযোগের প্রকাশ করা হলে বিষয়টি জানতে পারেন তাঁরা। 

তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বীথিকা সরকারের দাবী কমিটি গঠনে কোন অনিয়ম হয়নি। তিনি বলেন, আমি প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম। 

এখানে সমান সংখ্যক প্রার্থীর আবেদন পাওয়া গেছে। যে কারনে যাচাই বাছাই করে নির্বাচনের দিন কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের প্রয়োজন হয়নি তাই নির্বাচন দেওয়া হয়নি। পরবর্তিতে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে।

নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতকৃত ভোটার লিষ্ট হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন হয়নি তাই ভোটার লিষ্ট যাচাই বাছাইয়ের প্রয়োজন হয়নি।

 

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, বিদ্যালয়টি স্বেচ্ছাচারি ব্যক্তিদের কবলে পড়েছে। তাই দিন দিন বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে।বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের কারনে বিদ্যালয়ের পরিবেশ ক্রমশ খারাপ দিকে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা। এছাড়াও প্রধান শিক্ষক নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করেন না বলেও অনেকের অভিযোগ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, আনোয়ার হোসেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১৫ বছর বিদ্যালয়টিতে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে দুটি গ্রুপে পরিণত করেছেন। 

এতে তিনি সবসময় দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজের সুবিধামত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এ কারনেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

আরো জানা যায়, তিনি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে যেসকল শিক্ষক তার মতমত চলে তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে থাকেন। 
অভিযোগের বিষয় সঠিক নয়, দাবি করে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হেসেন বলেন, নিয়ম মেনেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে আর্থিক লেনদেন করা হয়নি। 

কর্মচারি নিয়োগে বাণিজ্য হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, যেহেতু শিক্ষা বোর্ডে কমিটি অবৈধ উল্লেখ করে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত হবে, তখন সব পরিস্কার হবে। 

বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল আনোয়ার হোসেন রয়েল বলেন, কমিটি গঠনের বিষয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাকে জানানো হয়নি। গোপনে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।  

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রুম্পা সিকদার বলেন, এ আর এস বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বীথিকা সরকার দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপরেও অনিয়মের  করা হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। 

বিষয়টি নিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটি গঠনের বিষয়ে জেলা অফিসের কোন কাজ নেই। সকল ব্যবস্থাপনা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা করবেন। গঠিত কমিটির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাইনি, পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমরা যথানিয়মে কমিটির আবেদন পেলেই অনুমোদন দিয়ে দেই। যদি কোন অভিযোগ আসে তাহলে তা তদন্ত করে সত্যতা পেলে কমিটি বাতিল করা হবে।

এ ব্যাপারে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী জানান, চলতি সপ্তাহের ভিতরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন