জমি নিয়ে বিরোধ, নিজ ঘরেই বৃদ্ধার দাফন


ভোলার দৌলতখান উপজেলায় জমিজমার বিরোধের জেরে জোবেদা খাতুন (৮৫) নামের এক বৃদ্ধাকে তার নিজ বসতঘরের বারান্দায় দাফন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুরের দিকে উপজেলার পশ্চিম জয়নগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে আজিমদ্দি সরদার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। সেখানে স্থানীয়রা টাকা দিয়ে ওই নারীর কবরের বাউন্ডারি পাকা করে দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেড় বছর পূর্বে জোবেদা খাতুনের স্বামী আব্দুর রশিদ মারা যান।
সেই সময় তাকে দাফন করা হয়েছিল ভাতিজা রফিকের জায়গায়। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলেদের মধ্যে সফিজল ক্যান্সার আক্রান্ত।
বাকি ছেলে রফিজল ঢাকায় সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাড়ির জমি নিয়ে রফিজলের সঙ্গে চাচাতো ভাই রফিকের বিরোধ চলছে।
এলাকাবাসী জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে জোবেদা খাতুন মারা গেলে তাকে ভাতিজা রফিকের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার জন্য স্থানীয়রা রফিক ও তার বাবা খোরশেদ সরদারকে অনুরোধ জানান। এলাকাবাসী শত অনুরোধ করলেও রফিকসহ তার পরিবারের কাউকে রাজি করাতে পারেননি।
এ অবস্থায় এলাকাবাসী জোবেদা খাতুনকে স্থানীয় মসজিদের পাশে মাটি দেওয়ার জন্য ছেলে রফিজলকে অনুরোধ করেন। কিন্তু ছেলে রফিজল মায়ের অসিয়ত পালনে মাকে অন্য কোথাও মাটি দিতে রাজি হননি। পরে বুধবার সকালে বসতঘরের বারান্দার মেঝেতেই তাকে দাফন করেন।
স্থানীয়রা আরো জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে জোবেদার স্বামী আব্দুর রশিদের কবরের ওপরে রফিকের স্ত্রী তাসনুর বেগম ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়েছেন। এতে জীবিত থাকাকালীন জোবেদা খাতুন এই দৃশ্য দেখে ছেলেদেরকে বলে গেছেন, তার মৃত্যুর পর তাকে যেন ঘরের মেঝেতেই মাটি দেওয়া হয়।
মৃত জোবেদা খাতুনের বড় ছেলে রফিজল জানান, বাড়িতে তাদের সাড়ে পাঁচ শতাংশ জমি রয়েছে। ঘর ভিটায় আড়াই শতাংশ। বাকি তিন শতাংশ জমি তার চাচাতো ভাই রফিক দখল করে পাকা ঘর নির্মাণ করছেন। এই জমি নিয়েই চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে তাদের বিরোধ। জীবিত থাকাকালীন তার মা তাদেরকে বলে গেছেন, মৃত্যুর পর তাকে যেন ঘরের মধ্যেই মাটি দেওয়া হয়। তাই মায়ের অসিয়ত রক্ষায় ঘরের বারান্দায় তাকে দাফন করা হয়েছে। এলাকাবাসী চাঁদা তুলে কবরের চারপাশে দেয়াল তুলে দিচ্ছেন। যাতে করে ভবিষ্যতে তাদের ঘর ভিটা কেউ দখল করতে না পারে।
এ ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এমন ঘটনায় তারা দুঃখ প্রকাশ করেন বলেন, যাতে কোনো অবস্থাতেই জোবেদা খাতুনের কবর ও ঘর ভিটা দখল করতে না পারে এই জন্য তারা কবরটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন।
রফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার বাবা খোরশেদ সরদারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বাড়ির সকল জমি তাদের। এ বাড়িতে অন্য কারো জমি নেই।
এইচকেআর
