আমতলীতে অগ্নিদগ্ধ আল আমিনের মৃত্যু


সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানের বাসভবন ভাংচুর শেষে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
ভাংচুর ও আগুনের ঘটনা দেখতে গিয়ে মেয়রের বাস ভবনে আটকা পরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার রাতে মারা যান আলামিন (২৭) নামের রেনেটা কোম্পানীর এক প্রতিনিধি।
নিহত আলামিন যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার ফুলসারা ইউনিয়নের আফরা (চন্দ্রপাড়া) গ্রামের বাচ্চু ব্যাপারীর ছেলে।
নিহত আল -আমিন যশোর সিটি কলেজ থেকে রাষ্টবিজ্ঞানে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে রেনেটা ওষুধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে বরগুনার আমতলী উপজেলায় যোগদান করেন।
এখানে থাকা অবস্থায় ৫ আগস্ট সোমবার ছাত্রআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ওই দিন বেলা ৩টার সময় পৌর মেয়র ও আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমানের বাসভবনে হামলা করে ভাংচুরের পর উত্তেজিত দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দেয় ওই ভবনে।
এসময় জনতার সাথে ভাংচুর ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা দেখতে গিয়ে বাসভবনের ভিতর আটকা পরেন আলামিন।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর স্থানীয়রা অগ্নিদগ্ধ আলামিনকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতাল পরবর্তিতে এবং বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যান। তার অবস্থা গুরুতর হলে পরের দিন মঙ্গলবার বিকেলে রেনেটা কোম্পানীর সহযোগিতায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে মারা যান।
পরের দিন শনিবার রাতে জানাজা শেষে তার লাশ নিজ গ্রামের বাড়ীর পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
আলামিনের চাচাত ভাই আব্দুল্লা আল শাকিল জানান, আলামিন খুব দরিদ্র পরিবারের সন্তান। শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পারানো আয়ের টাকায় নিজে লেখা পড়া করেন।
বাবা বাচ্চু ব্যাপরী ভ্যান চালক। মা আশুরা বেগম অন্যোর বাড়িতে ঝিএর কাজ করে সংসার চালাতেন।নিজের জমি বলতে বাড়ির ৪ শতক জমি ছাড়া আর কিছু নেই। টাকার অভাবে ঘড় তুলতে না পাড়ায় রায়ত থাকতেন প্রতিবেশীর এক বাড়িতে। ছেলে আল-আমিনের চাকুরীর পর তার অনুরোধে বাবা ভ্যান চালনা এবং মা ঝিএর কাজ বন্ধ করেন।
এসময় সংসারের ভরন পোষনের দায়িত্ব নিজ কাধে তুলে নেন এবং নিজের ভিটায় একটি ঘর তুলে দেওয়া স্বপ্ন দেখছিলেন আলআমিন।
চাকুরীর ৬ মাসের মাথায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে আলামিন মারা যাওয়ায় পরিবারটি এখন আবার পথে বসে গোলা।
শনিবার সকালে মুঠোফোনে আলামির মা আশুরা বেগমের সাথে কথা বলার সময় তিনি বার বার চিৎকার করে কাঁদছিলেন, আর বিলাপ করছিলেন, আমারে এখন কে খাওয়াবে। কে আমার সংসার দেখবে। কে আমারে নতুন ঘর উঠায়া দেবে।
নিহত আল-আমিনের বাবা বাচ্চু ব্যাপরী বলেন, আমার ছেলেডায় চাকুরী পাওয়ার পর আমারে ভ্যান চালানো বন্ধ করে। অর মায় অন্যের বাড়িতে কাজ কাজ করতো তাও বন্ধ করে ছেলেটায় সংসারের সব দায়িত্ব নেয়। এহন আমার সংসারের কে দায়িত্ব নেবে। আমি বিচার চাই।
নিহত আল-আমিন চাকুরী কালীন সময় ভাড়া থাকতেন আমতলী সদর রোডের রাজ্জাক বিশ্বাসের মেসে। তিনি জানান, আলামিন খুব ভালো ছেলে ছিল।
এইচকেআর
