বিধিনিষেধে খাবার হোটেল বন্ধ থাকায় পোয়াবারো শেবাচিম কর্মচারীদের


মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশের ন্যায় বরিশালেও চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। বিধিনিষেধ চলাকালে খাবার হোটেল এবং বাজার খোলা রাখার জন্য সময় বেধে দেয়া হয় কেন্দ্রীয়ভাবে। বিধিনিষেধের প্রথম দিন এমনিভাবেই চলছিল বরিশালে। কিন্তু এর পর দিন থেকেই ঘুরে যায় সেই নিয়ম।
বাজার খোলা রাখা হলেও সংক্রমণ বৃদ্ধির অজুহাতে স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে যায় খাবার হোটেল। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ এবং জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা। সরকারি এ দুটি হাসপাতাল থেকে যে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে তাতে রোগীর পেটই ভরছে না। তার ওপর হোটেল-রেস্তোঁরা বন্ধ করে দেয়ায় না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের।
যদিও হোটেল-রেস্তোঁরা বন্ধ করে দেয়ায় পোয়াবারো শেবাচিম হাসপাতালের পথ্য বিভাগের বাবুর্চি এবং কর্মচারীদের। হোটেল বন্ধ থাকার সুযোগে রোগীর খাবার বিক্রি করে দিচ্ছেন ভিজিটরদের কাছে। প্রতি প্লেট ভাত ১০-১৫ টাকা এবং প্রকার ভেদে তরকারি পরিমাণ অনুযায়ী ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে কর্মচারীরা লাভবান হলেও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন রোগীর স্বজনরা।
এমন পরিস্থিতিতে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয় হোটেল-রেস্তোঁরা মালিকরা। তারা নিজস্ব উদ্যোগে রোগীর স্বজনদের মাঝে দুপুরে রান্না করা খাবার বিতরণ করছেন। গত দুদিন ধরে তারা রান্না করা খাবার বিতরণ করলেও বিষিনিষেধের বাকি দিনগুলো কিভাবে কাটবে সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রোগীর ভিজিটররা। এমন পরিস্থিতিতে সল্প পরিসরে হলেও খাবার হোটেল খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন রোগীর স্বজন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
হাসপাতাল সংলগ্ন শহীদ এডিসি কাজী আজিজুল হক সড়কে খাবার পেতে লাইনে দাঁড়ানো রোগীর ভিজিটর রূপা আক্তার বলেন, ‘বিধিনিষেধের আগে বাবাকে চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। হাসপাতাল থেকে শুধুমাত্র রোগীর খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। আমরা যারা রোগীর সাথে আছি তারা বাইরে হোটেল থেকে খাবার কিনে আনছি। কিন্তু বিধিনিষেধ শুরুর একদিন পরেই হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে। তাই পুরো একটা দিন শুধুমাত্র পানি খেয়েই থাকতে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘রোববার রোগীর এক ভিজিটরের মাধ্যমে জানতে পারি হাসপাতালের সামনে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। তাই বাটি নিয়ে খাবারের অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়েছি। লকডাউনে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ঠিক আছে। কিন্তু হাসপাতালে আসা রোগীর ভিজিটরদের কথাও প্রশাসনের চিন্তা করা উচিৎ বলে জানান তিনি।
হাসপাতালের সামনে হোটেল হাওলাদারের মালিক অলিউল ইসলাম অলি বলেন, আমরা জানি বাজার, খাবার হোটেল এবং ওষুধের দোকান বাদে অন্যসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। হঠাৎ করেই বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ এসে আমাদের হোটেল বন্ধ করে দেয়। গত দুদিন হোটেল বন্ধ থাকায় হাসপাতালের রোগীর অসংখ্য স্বজন খাবার নিকতে এসে ফিরে গেছেন।
তারা বলেন, দূর দূরন্তের রোগীরা শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের বরিশালে কোন আত্মীয়-স্বজনও নেই। হোটেল-রেস্তোঁরাই তাদের একমাত্র ভরসা। কেননা রোগীকে যে খাবার দেয় তাতে দুজনের হয় না। এখন হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভিজিটরদের ভোগান্তির শেষ নেই। না খেয়ে থাকা রোগীর স্বজনদের কষ্ট ঘোচাতেই আমরা ব্যবসায়ীরা উদ্যোগ নিয়ে দুদিন ধরে খিচরি বিতরণ করছি। তবে এটা কতদিন চালিয়ে রাখা সম্ভব তা বোধগম্য নই।
অপরদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘হাসপাতালের অভ্যন্তরেই রোগীর জন্য বরাদ্দ খাবার বিক্রি করা হচ্ছে স্বজনদের কাছে। হাসপাতালের পথ্য বিভাগের বাবুর্জি এবং ওয়ার্ডের আয়া-বুয়ারা রোগীর খাবার কমিয়ে দিয়ে তা স্বজনদের কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছেন। তবে এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তদারকি দেখা যায়নি। রোগীর স্বজনদের দাবি এমন পরিস্থিতিতে রোগীর খাবার বাড়িয়ে দিলে অন্তত সাথে থাকা স্বজনদের খাবারের চিন্তা মুক্ত হতো।
কেআর
