শেবাচিমে করোনা রোগীর চিকিৎসায় মাত্র দুজন চিকিৎসক


বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সেই সাথে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে বৃহত্তর বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে। রবিবার দুপুর পর্যন্ত ইউনিটটিতে সর্বোচ্চ ২১০ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। যা করোনা মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড।
মূল হাসপাতাল ভবন থেকে ধার করে আনা চিকিৎসক দিয়ে চলছে করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসা-সেবা। তাও আবার সংখ্যায় অপ্রতুল। প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকা দেড়শ রোগীর অনুকূলে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দুজন। ৪৫ জন নার্স দায়িত্বে থাকলেও নেই তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী।
জানা গেছে, গত বছর মার্চের শুরুতে বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। একই বছরের ৯ মার্চ বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত এবং পরবর্তী ১১ মার্চ একই জেলার দুমকিতে ভাইরাসটিতে একজনের মৃত্যু হয়। সেই থেকে করোনার সংক্রমণ ক্রমশ বাড়তে থাকে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষন করে দেখা যায়, গত প্রায় এক বছর চার মাসে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় মোট ১৮ হাজার ৩৬৭ জন করোনা রোগী আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। পাশাপাশি ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩১৫ জন। তাছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ১৮১ জন। সবশেষ গত ২৪ ঘন্টায় বরিশাল বিভাগে নতুন করে ৩৪৩ জন আক্রান্ত শনাক্ত এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ১২১ জন বরিশাল জেলার। মৃত্যু হওয়া ব্যক্তি ঝালকাঠির বাসিন্দা।
করোনা ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘গত বছর করোনার শুরুতে হাসপাতালের পূর্ব পাশে নির্মাণাধিন পাঁচ তলা ভবনে দ্বিতীয় তলায় ৫০ শয্যা নিয়ে নিয়ে করোনা ওয়ার্ডের যাত্রা শুরু হয়। রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় পর্যায়ক্রমে শয্যা সংখ্যা বেড়ে ১৫০টি হয়। যার মধ্যে ১২টি আইসিইউ এবং ১২টি ভেন্টিলেটর।
বর্তমান সময় রোগীর চাপ আরও বেড়ে যাওয়ায় গত ১ জুলাই থেকে শষ্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ২০০ করা হয়েছে। একই দিন থেকে আরও ১০টি আইসিইউ চালু হয়। আরও দুটি আইসিইউ অপেক্ষমান রয়েছে। এর পরেও রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তার ওপর নেই চিকিৎসক, চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী এবং পর্যাপ্ত নার্স।
হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ‘করোনা ওয়ার্ডে জন্য নির্ধারিত কোন চিকিৎসক নেই। হাসপাতালের মূল ভবন থেকে দুজন মেডিকেল অফিসার এনে করোনা আক্রান্ত এবং আইসোলেশনে থাকা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া ৪৫ জন নার্স রয়েছেন। যাদের মধ্যে ১৫ জন করে দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিদিন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী না থাকায় বহিরাগতদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে।
তাছাড়া চাইলেই চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী নিয়োগ সম্ভব না। সে জন্য চুক্তিভিত্তিক আড়াইশো লোক নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু সেটারও কোন প্রতিউত্তর নেই। ফলে করোনা ইউনিট ব্যবস্থাপনায় অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে গেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
কেআর
