ঢাকা শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫

Motobad news

ফুরিয়ে যাচ্ছে শেবাচিমের অক্সিজেন?

ফুরিয়ে যাচ্ছে শেবাচিমের অক্সিজেন?
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন পাচ্ছে না বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের রোগীরা। সরবরাহ লাইনের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৩টি আইসিইউ বেড।

সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের আওতায় থাকা বাকি ১৯ আইসিইউ ও ৭৫ সাধারণ বেডেও চলছে জটিলতা। সেন্ট্রাল সাপ্লাইয়ের বাইরে থাকা রোগীদের জন্য এখানে ছিল ৩১০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার। সাপ্লাই লাইনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় মূল ভবন থেকে এনে ১০০ সিলিন্ডার বাড়ানো হলেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না পরিস্থিতি। জীবন বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে বরিশাল সদর হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড স্থাপন ও সেখানে অন্তত ১০০ রোগী সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে শেবাচিম কর্তৃপক্ষ। যদিও এরকম কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি বলে দাবি বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।

গত ৬ দিনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে। এরমধ্যে ৪ জন ছিল করোনা পজিটিভ। বাকি ৪২ জনই মারা যান করোনার উপসর্গ নিয়ে। হঠাৎ করে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে গিয়ে মেলে অক্সিজেন সংকটের তথ্য। যদিও এই সংকট মজুতের নয়। সমস্যা সরবরাহ লাইনে। চিকিৎসাধীন রোগীরা গত ৩-৪ দিন ধরেই বলে আসছিলেন লাইনে অক্সিজেন কম পাওয়ার কথা। এ কারণেই প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ জন করে মারা যাচ্ছে বলে দাবি তাদের। করোনা ওয়ার্ডে সরবরাহের জন্য অক্সিজেনের যে ট্যাংক রয়েছে সেটির ধারণক্ষমতা ৯ হাজার লিটার। ১০ হাজার লিটারের আরও একটি ট্যাংক বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হলেই পাওয়া যাবে বাড়তি ১০ হাজার লিটার অক্সিজেন।

করোনা ওয়ার্ডের অক্সিজেন রিজার্ভার দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা কর্মী মো. সোহেল জানান, মাসখানেক আগেও ২ দিন পর পর গাড়ি এসে ভরে দিয়ে যেত অক্সিজেন ট্যাংক। চাহিদার কারণে এখন একদিন পরপরই তা রিফিল করতে হচ্ছে। এখন করোনা ওয়ার্ডে দৈনিক অক্সিজেন লাগছে ২৮ থেকে ২৯ হাজার লিটার। মাত্র ক’দিন আগেও যা ছিল ৮-১০ হাজার লিটারের সীমায়। শেবাচিম হাসপাতালের তথ্য সংরক্ষকের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জাকারিয়া খান স্বপন বলেন, ১৫০ বেডের করোনা ওয়ার্ডকে করা হয়েছে ৩০০ বেড। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিল ২৫০’র বেশি। রোগী আর বেড বাড়লেও বাড়েনি জনবল কিংবা লজিস্টিক সাপোর্ট। করোনা ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, অক্সিজেন সরবরাহের লাইনটি অতিমারি কিংবা মহামারি বিবেচনায় করা হয়নি। দিনে ২/৩ হাজার লিটার সরবরাহের ক্ষমতাসম্পন্ন লাইন দিয়ে যদি ৮-৯ হাজার লিটার অক্সিজেন টানা হয় তাহলে সেটি কলাপস্ করবে সেটাই স্বাভাবিক। এখানে এখন যত রোগী ভর্তি আছে তাদের সবারই চাহিদা অক্সিজেন। করোনা ওয়ার্ডে হঠাৎ মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার পেছনেও কি এই সমস্যা দায়ী জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা আসছে তাদের সিংহভাগই আসছে মুমূর্ষু অবস্থায়। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা শুরু করার সুযোগও পাচ্ছি না। বর্তমানে যে ৪১০টি সিলিন্ডার রয়েছে তাও পর্যাপ্ত নয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কম করে হলেও এক হাজার সিলিন্ডার দরকার।

গণপূর্ত অধিদপ্তর বরিশাল’র নির্বাহী প্রকৌশলী জেরল্ড অলিভার গুদা বলেন, ৫ তলা যে ভবনটিতে করোনা ওয়ার্ডের কাজ চলছে সেখানে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল হওয়ার কথা। ভবন এবং হাসপাতাল নির্মাণ স্থাপন সম্পন্ন হওয়ার আগেই অতিমারি সামলাতে সেখানে করা হয় করোনা ওয়ার্ড। তখন পর্যন্ত লিফট, সেন্ট্রাল ইলেকট্রিক সাপ্লাই কিংবা অক্সিজেন রিজার্ভারের ট্যাংক বসানো হয়নি। তবে আইসিইউ, সিসিইউ, পোস্ট অপারেটিভ, অপারেশন থিয়েটার এবং সাধারণ বেড মিলিয়ে মোট ২০২টি অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা ছিল। পরে নয় হাজার লিটারের একটি অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনসহ লিফট ও সেন্ট্রাল ইলেকট্রিক সাপ্লাইও চালু করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি একটা একটা করে ওয়ার্ড খালি করে দিতে পারে তাহলে আমরা যত দ্রুত সম্ভব সরবরাহ লাইনের পাইপ বদলে আরও বড় হোল’র পাইপ বসিয়ে দিতে পারব।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, এরকম সমস্যা যে হতে পারে সেটা আগেই আশঙ্কা করেছিলাম। তাই বরিশাল সদর হাসপাতালের যে আলাদা ভবনটি রয়েছে সেখানে ১০০ বেডের একটি করোনা ওয়ার্ড করার কথা বলেছি। এটি হলে শেবাচিম’র করোনা ওয়ার্ডের ৫০ জনও যদি স্থানান্তর করা যায় তাহলে একটি তলা অন্তত খালি হবে। সেই খালি অংশে অক্সিজেন সরবরাহ লাইনের পাইপ পরিবর্তন করে রোগী স্থানান্তরের পর আরেকটি তলায় শুরু করা যাবে কাজ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরিশাল’র পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার বলেন, এরকম একটা মৌখিক অনুরোধ শেবাচিম পরিচালক করেছেন। তবে লিখিত কোনো কিছু আমরা এখনো পাইনি। অবশ্য অনুরোধ পাওয়ার আগেই বরিশাল সদর হাসপাতালকে বলা হয়েছে করোনা ওয়ার্ড চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। তারা কতদূর কি করেছেন সেটা ভালো বলতে পারবেন সিভিল সার্জন।’ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা সদর হাসপাতালে ২০ শয্যার একটি করোনা ইউনিট স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছি। আশা করছি যে ২-৩ দিনেই মধ্যেই এটা চালু করতে পারব। বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দিন হায়দার বলেন, যে সমস্যাটি দেখা দিয়েছে সেটি চাইলেই সমাধান করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে যেমন সময়ের দরকার তেমনি চেষ্টা চলছে শেবাচিমের ওপর চাপ কমানোর।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন