ঢাকা শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news

কাবুলে শরণার্থীর ঢল, প্রতিবেশী দেশগুলোকে সীমান্ত খুলে দিতে জাতিসংঘের আহ্বান

কাবুলে শরণার্থীর ঢল, প্রতিবেশী দেশগুলোকে সীমান্ত খুলে দিতে জাতিসংঘের আহ্বান
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

তালেবানের তীব্র হামলার মুখে আফগানিস্তানে এখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। এরকম হাজার হাজার মানুষ এখন উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে রাজধানী কাবুলে। এদিকে জাতিসংঘ আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি তাদের সীমান্ত খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছে যাতে লড়াই থেকে পালানো বেসামরিক মানুষ সেসব দেশে আশ্রয় নিতে পারে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, আফগানিস্তানে খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছেছে। সেখানে একটা বিরাট মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে।


শুক্রবার তালেবান দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কান্দাহার দখল করে নিয়েছে। এটি আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। ৬ লাখ মানুষের এই শহরটি একসময় তালেবানের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল। বিদ্রোহীরা কাছের আরেকটি শহর লস্কর গাহও দখল করেছে। তারা এখন আফগানিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ প্রাদেশিক রাজধানী শহর নিয়ন্ত্রণ করছে।

তালেবানের তীব্র হামলার মুখে যে হাজার হাজার মানুষ এখন পালিয়ে রাজধানী কাবুলে এসে আশ্রয় নিচ্ছে, তাদের থাকতে হচ্ছে বিভিন্ন গুদাম ঘরে বা রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে।

সেভ দ্য চিলড্রেন জানাচ্ছে, এদের মধ্যে প্রায় ৭২ হাজার শিশুও রয়েছে।

এসব আশ্রয়হীন মানুষ এখন খাবার, আশ্রয় ও ওষুধসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। কিন্তু তাদের সামনে আর কোন উপায়ও নেই। হয় তাদেরকে নিজেদের এলাকায় সম্ভাব্য মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে, নয়তো কাবুলে এসে এরকম দুর্দশার মধ্যে থাকতে হবে।কাবুলের উপকণ্ঠে এরা এখন বাস করছেন অস্থায়ী এক শিবিরে।

আসাদুল্লাহ কুন্দুজে রাস্তায় খাবার বিক্রি করতেন। পরিবার নিয়ে পালিয়ে এসেছেন কাবুলে। ৩৫ বছর বয়সী আসাদুল্লাহ তার স্ত্রী এবং দুই অল্প বয়সী দুই কন্যাকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। তিনি কুন্দুজের রাস্তায় একজন হকার হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু তালেবান তার বাড়িতে আগুন দিয়েছে।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি রাস্তায় হকারি করতাম, খাবার আর মশলা বিক্রি করতাম। কিন্তু যখন তালেবান হামলা করলো তখন আমরা কাবুল চলে এলাম। এখন আমাদের হাতে রুটি কেনার টাকাও নেই। আমার সন্তানের জন্য ওষুধ কিনবো, তার সাধ্যও নেই।’

আসাদুল্লাহ ও তার পরিবার রাস্তায় রাত কাটিয়েছেন।

‘আমাদের সব বাড়িঘর, জিনিসপত্রে আগুনে পুড়ে গেছে। কাজেই আমরা কাবুলে পালিয়ে এসেছি। আমরা আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইছি। আমাদের বাড়িতে রকেট আর মর্টারের গোলা এসে পড়েছে। গত সাতদিন ধরে সেখানে প্রচন্ড লড়াই হয়েছে। আমাদের খাওয়ার মতো রুটি পর্যন্ত ছিল না, কারণ সব বেকারি, দোকান এবং বাজার বন্ধ ছিল।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বিবিসিকে জানান, তিনি উত্তরের শহর পুল ই খুমরি থেকে তার স্বামী এবং সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। তার স্বামী যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন।

‘আমাদের একটা সুন্দর জীবন ছিল। কিন্তু বোমা হামলার কারণে আমরা আমাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছি ও এখানে চলে এসেছি। আমাদের এক কাপড়ে খালি হাতে এখানে চলে আসতে হয়েছে।’

এবছরের শুরুতে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী আফগানিস্তান থেকে চলে আসতে শুরু করলো, তখন থেকেই মানবিক ত্রাণ সংস্থাগুলো হুঁশিয়ারি দিচ্ছিল যে, আফগানিস্তানের ভেতরে বাস্তচ্যূত মানুষের সংখ্যা বাড়তে পারে।

গত কয়েক মাস ধরে তালেবান এবং সরকারি বাহিনীর মধ্যে লড়াই অনেক তীব্র হয়েছে। তালেবান এখন প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রাদেশিক রাজধানী শহর দখল করে নিয়েছে। তারা আরও শহর দখল করবে বলে হুমকি দিচ্ছে।

মার্কিন সরকারি সূত্র উল্লেখ করে ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হচ্ছে, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে রাজধানী কাবুলেরও পতন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক পর্যালোচনায়।

গত জুলাই মাসেই জাতিসংঘ বলেছিল, বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পরই আফগানিস্তানে অভ্যন্তরীণভাবে উদ্বাস্তু হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। কিন্তু গত কয়েকদিনে এই শরণার্থীদের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সংঘাতে এপর্যন্ত প্রায় এক হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। বেসরকারি সংস্থাগুলো বলছে, গণহারে যেভাবে মানুষ শরণার্থীতে পরিণত হচ্ছে, তাতে সবচেয়ে সংকটে পড়বে নারী ও শিশুরা।

আফগানিস্তানে ড্যানিশ রিফিউজি কাউন্সিলের পরিচালক জ্যারেড রাওয়েল বলেন, ‘আমাদের কাছে যেসব খবর আসছে তাতে আমরা দেখছি লোকজনের নানা ধরনের চিকিৎসার দরকার হচ্ছে, যৌন নির্যাতন বেড়ে গেছে, বেড়েছে পাচারের ঘটনা। খাবার, আশ্রয়, স্বাস্থ্য ও স্যানিটারি সুবিধা ছাড়াও লোকজনের নগদ অর্থও দরকার।’

আসাদুল্লাহ এখনো একটা আশার ওপর নির্ভর করেই সামনে তাকিয়ে আছেন, একদিন তিনি পরিবার নিয়ে আবার কুন্দুজে ফিরে যেতে পারবেন।

‘আমরা ফিরে যেতে চাই, সেখানেই আমরা বাস করতে চাই। আমরা আশা করছি একদিন আমাদের দেশে শান্তি ফিরবে এবং আমাদের দেশটা মুক্ত, স্বাধীন হবে।’


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন