ঢাকা সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

Motobad news

বরগুনায় ব্যবসায়ীকে ব্লাকমেইল: দুই দিনের রিমান্ডে কথিত সাংবাদিকের ক্যামেরাম্যান 

বরগুনায় ব্যবসায়ীকে ব্লাকমেইল: দুই দিনের রিমান্ডে কথিত সাংবাদিকের ক্যামেরাম্যান 
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরগুনায় এক ব্যবসায়ীকে নারী সহ বাসায় গিয়ে ব্লাকমেইল করে দুই লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে উঠেছে।  এ ঘটনায় গত ৩১ আগস্ট শহিদুল ইসলাম হিমুকে প্রধান আসামী করে নামধারী ৩ জন ও  অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনকে আসামী করে বরগুনা থানায় মামলা দায়ের করেছে ভূক্তভোগী ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ। এ  মামলায় শহিদুল ইসলাম হিমু নামে যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টম্বর) গ্রেফতারকৃত আসামী শহিদুল ইসলাম হিমুকে আদালতের মাধ্যমে দু দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। শহিদুল ইসলাম হিমু  ৮ নং বরগুনা সদর ইউনিয়নের বৈঠাকাটা উত্তর হেউলিবুনিয়া  গ্রামের  দুলাল গাজীর ছেলে ।  মামলার অন্যান্য আসামীরা হলো আল আমিন (৩০), শহিদুল ইসলাম হিমু (২০) ও লিমা বেগম (২৮)। এদের মধ্যে  আসামি আল আমিন উত্তর হেউলিবুনিয়া  একই গ্রামের ইউনুচ খলিফার ছেলে। অপরদিকে মামলার ৩নং আসামি লিমা বেগম বরগুনা পৌরসভার ব্যাংক কলোনী এলাকার টিটুর স্ত্রী।

 মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৬ আগস্ট রাতে বরগুনা শহরের বালিকা বিদ্যালয় সড়কের মেসার্স আজাদ ইলেকট্রনিক্রা  মালিক আবুল কালাম আজাদ এর বাসায় নারীসহ ঢুকে তাকে মারধর করে ভিডিও ধারন করে ব্লাক-মেইল করে প্রায় দু-লক্ষাধিক টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়া চক্রের সক্রিয় সদস্য শহিদুল ইসলাম হিমু তার সহযোগিরা । সেসময়  মামলার ১নং আসামি আল আমিন ঘটনাস্থল থেকেই সাংবাদিক রুদ্র রুহান নামে ব্যক্তিকে মোবাইলে ফোন দিয়ে জানায় যে সে (ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ) টাকা দিবে না। আসামিরা ব্যবসায়ীকে জানায় সাংবাদিক রুদ্র রুহান ভাই আমাদের পাঠিয়েছে । জানাগেছে রুদ্র রুহান নামের ঐ সাংবাদিক আজকের পত্রিকা ও গাজী টিভির বরগুনা প্রতিনিধি। মামলায় রিমান্ডে থাকা ২নং আসামী শহিদুল ইসলাম হিমু সাংবাদিক রুদ্র রুহানের ক্যামেরা ম্যান হিসেবে পরিচিত।

 মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়  ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদের ভাড়া বাসা নক করে এবং দরজায় ধাক্কা দেয় আসামীরা। সে (ব্যবসায়ী ) দরজা খুললে আসামিরা আর্তকিতে জোরপূর্বক বাসায় ঢুকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তাকে এলোপাথারি মারধর শুরু করে। এসময়  শহিদুল ইসলাম হিমু তার  মাথার পিছনে পিস্তল সাদৃশ্য বস্তু ধরে এবং  আল আমিন তাকে বলে যে লিমা বেগম কে ধর্ষন করেছো এ কথা স্বীকার করতে হবে। তখন ব্যবসায়ী আসামিদের হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে। আসামিরা তাকে মৃত্যুর মুখে জিম্মি করে জোর-পূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে এবং আল আমিন তা ভিডিও করে। পরে আসামিরা মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ও তাদের ধারন কৃত ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তার কাছে ৫লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। সে টাকা দিতে অস্বীকার করে। আসামি আল আমিন ফোন করে রুদ্র রুহান ভাইকে জানায় , সে টাকা দিবে না। ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ আসামিদের জিজ্ঞেস করে কোন রুদ্র রুহান। আসামীরা বলে সাংবাদিক রুদ্র রুহান আমাদেরকে পাঠিয়েছে। আসামিরা বলে হয় টাকা দাও নইলে চেক দাও। তখন আমি আসামিদের বলি বাসায় কোন টাকা নেই  এবং চেক বই দোকানে। এ সময় আসামিরা তার পকেটে থাকা  ৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। পরে আসামি আল আমিন তাকে নিয়ে দোকানে এসে তার কাছ থেকে আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংক হিসাব নম্বর ১২৩১০২০০০২৫৭৪ এর একটি চেকের পাতায় ২লাখ টাকা লিখিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়, যার চেক নং-এআইবি/সিডি-সি৪৫৪২৭২৬ এবং দোকান থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা নেয়। যাহার ভিডিও ফুটেজ দোকানের সিসি ক্যামেরায় আছে।

 আসামিরা ঘটনার পরের দিন ১৭ আগস্ট আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংক থেকে ঐ চেক দিয়ে টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। ঘটনার ২দিন পর ১৯ আগস্ট  সাংবাদিক রুদ্র রুহান তার মোবাইল নম্বর দিয়ে ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ এর নম্বরে ফোন দিয়ে জানায় যে আপনার নামে একটি ধর্ষনের অভিযোগ আসছে। তখন আজাদ বলে আসামিরা তো আপনার কথাই বলেছে। যে তারা নাকি আপনারই লোক। অপরদিকে  ঘটনার দিন দুপুরে ১ ও ৩নং আসামি তার দোকান থেকে ২১শ ৬০ টাকার মালামাল বাকিতে ক্রয় করেছে। সে মান-সম্মানের ভয় কাউকে কিছু বলেন নাই এমনটি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছে মামলার বাদী ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ  । 

মামলার বাদী ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ পুলিশের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করে  প্রতিবেদকে বলেন ,শুনেছি যে পুলিশ দ্রুত এক আসামিকে আটক করেছে। আশাকরি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে  শ্রীঘ্রই এ চক্রের মাষ্টার মাইন্ডসহ সকল আসামিকে পুলিশ আটক করতে পারবে। আমরা পুলিশের সহযোগীতায় র্নিবিগ্নে ব্যবসা-বানিজ্য করতে পারবো। তিনি আরো বলেন আমাকে হত্যা ও জোর করে ধারন কৃত ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে মান-সম্মানের ভয় দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং ব্যাংক থেকে  ২লাখ টাকা নিয়ে পাদুকা পট্রি শুক্কুরে ব্লিডিংএ রুদ্র রুহানের অফিসে রিক্রাা থেকে নেমে যায় আসামি আল-আমিন। এর মধ্যে বালিকা বিদ্যালয় সড়কের বিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা, আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংক বরগুনা শাখার সিসি ক্যামেরা এবং আমার দোকানের সিসি ক্যামেরাসহ শহরের সংশ্লিস্ট সিসি ফুটেজ দেখে আসামী ও রুদ্র রুহানের মোবাইল কল এবং আসামিদের রের্কড অনুসন্ধান করলে ঘটনার প্রকৃত তথ্য বেড়িয়ে আসবে। বিচারের মুখোমুখি হবে প্রকৃত আসামীরা আর আমি পাবো সঠিক বিচার । সমাজে প্রতিষ্ঠা পাবে ন্যায় বিচার। 

শহরের  ডেকরেটর ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান মনির প্রতিবেদকে মুঠোফোনে জানান, এ চক্রটি আমাকে ফাঁসাতে গত পৌরসভা নির্বাচনের আগ-মূহূর্তে ধর্ষনের একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।  এ ব্যাপরে রুদ্র রুহানের সাথে মামলায় উল্ল্যেখ করা মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে তার মোবাইলে কল যায় ঢোকেনা। তাই তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বরগুনা চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো.জহিরুল হক পনুর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকে জানান, ঘটনাটি সত্য । শুনেছি এ চক্রটি এর পূর্বেও আরো অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে। ভূক্তভোগী ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ আমাদের চেম্বার অব কমার্সের এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছিল। আমরা বালিকা বিদ্যালয়সহ কিছু সিসি ফুটেছে দেখে এ ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। কিন্তু  শুনেছি এ ঘটনায় জড়িত মেয়েটি  নাকি পরে ঐ ভূক্তভোগী ব্যবসায়ীর নামে একটি ধর্ষন মামলা করেছে। তিনি আরো জানান, আমি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই ।

 এ বিষয়ে বরগুনা থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম তারিকুল ইসলাম প্রতিবেদকে জানান, এ ঘটনায়  মামলা হয়েছে ১ জনকে আটক করে চালান দিয়েছি। আদালতে রিমান্ড চাওয়া হলে বিজ্ঞ-আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। এ চক্রের মাস্টার মাইন্ড কে বা  কারা  এমন প্রশ্নের জবাবে  ওসি বলে তদন্তের সার্থে  এখনই কিছু বলা যাবে না।
 


এইচেকআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন