ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

Motobad news

ভাইয়ের মেয়েকে পতিতালয়ে বিক্রি, মামলা দায়ের

ভাইয়ের মেয়েকে  পতিতালয়ে বিক্রি, মামলা দায়ের
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

চাকরি দেওয়ার কথা বলে আপন ভাইয়ের মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা এবং দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগে তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। 

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিনগত গভীর রাতে বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানায় মামলাটি দায়ের করে নির্যাতনের শিকার ১৮ বছর বয়সী ওই তরুণী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, ওই তরুণী তার ফুফু, ফুফা ও চাচার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। আমরা তা আমলে নিয়ে মামলা হিসেবে গ্রহন করেছি। মামলা তদন্ত সাপেক্ষে এরসাথে আরো যারা যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী জানান, বন্দর থানার নরকাঠি গ্রামের ১৮ বছর বয়সী ওই তরুনীর ১৪ মাস পূর্বে বিয়ে হয়। কিন্তু পারিবারিক কলহের কারনে বিয়ের দুই মাসের ব্যবধানে ঘর ভেঙে যায়। কিন্তু তরুনীর পিতার আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় ভাসানচরের বাসিন্দা ফুফু নুপুর বেগম, ফুফা নজরুল ইসলাম এবং চাচা সোহেল খান তাকে চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে ৯ মাস আগে ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে জুরাইন শনির আখড়ার ভাড়া বাসায় রাখে।


ওই তরুনী অভিযোগ করেন, চাকরীর কথা বলে ঢাকায় নিলেও সেখানে গিয়ে দেখি অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত অনেক ছেলেমেয়ে বাসায় আসা যাওয়া করে। কয়েকদিন পরে ফুফু ও ফুফা মিলে আমাকে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করেন। আমি তাতে বাধা দিলে তারা মারধর করেন। গলা চেপে, মাথা দেয়ালের সাথে আঘাত করে নির্যাতন চালিয়ে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করতো।


এভাবে দীর্ঘ পাঁচমাস সেখানে একটি কক্ষে আটকে রেখে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করায়। তখন মা-বাবার সাথে মোবাইলে কথা বলতে দিত না। যদিও বলতে দিত তাহলে তাদের শিখানো কথা বলতে হতো। সারাক্ষণ ফুফু নুপুর বেগম পাশে থাকতেন। চারমাস পূর্বে তাকে অন্য আরেকজনের কাছে দুইলাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। সেখানের পতিতালয়ে কিছুদিন থাকতে বাধ্য হওয়ার পরে এক কাজের মহিলার সহায়তায় বিগত দুইমাস পূর্বে ৫শ’ টাকা নিয়ে পালিয়ে বরিশাল বন্দর থানার নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।


ওই তরুণীর পিতা বলেন, আমার মেয়ে বাড়িতে ফিরে আসার পরে আমার বোন, বোন জামাই এবং আপন ভাই আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখে। তবে স্থানীয়দের সহায়তায় আমরা মুক্তি পাই। আমার ভাই সোহেল খান তখন বলেন, স্বাক্ষিকে মেরে ফেলতে অর্থাৎ আমার মেয়েকে জীবীত রাখলে আমরা বিচার চাইবো। এজন্য তাকে মেরে ফেলা উচিত। আমার মেয়ের সাথে যে অন্যায় হয়েছে তার কঠিন বিচার চাই।

তরুণীর মা বলেন, আমার ননদ হয়েও তার ভাইয়ের মেয়েকে যে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেবে এটা বুঝতে পারিনি। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। তারা আমার আপন দুই ননদকেও বিক্রি করে দিয়েছে। তাদের দেশের বাইরে পাচার করে দিয়েছে। সেখানে জীবন বাচাতে তারা পুলিশের হাতে ধরা দিয়েছে। 


ওই তরুণীর মা আরো বলেন, এই চক্রটি একটি মানব পাচার চক্র। তাদের মূল ব্যবসাই হচ্ছে মানুষ বিক্রি করা এবং মেয়েদের দিয়ে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা।

ওদিকে আরো এক নারী থানায় এসে অভিযোগ করেছেন, নুপুর, নজরুল এবং সোহেল খান তার মেয়েকেও ঢাকায় নিয়ে পতিতালয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মেয়ে কৌশলে এই চক্রের হাত থেকে পালিয়ে এসে রক্ষা পান।

যদিও অভিযুক্ত নুপুর বেগম দাবী করেছেন, আমার ভাইয়ের মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে কোন খারাপ কাজ করাইনি। মূলত তার পিতা মানিক খানের কাছে ট্রলার বিক্রির দুই লাখ টাকা পাবো। সেই টাকা ফেরত না দেওয়ার জন্য এমন অভিযোগ করেছেন। যখনই তাকে পাওনা টাকা চাই তখনই তিনি মামলা দেওয়ার কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, যদি দেহ ব্যবসায় বাধ্য করে থাকি তাহলেতো দুইমাস পূর্বে ঢাকা থেকে এসে থানায় মামলা দেওয়ার কথা। কিন্তু আমি ৪/৫দিন আগে বাড়ি এসে টাকা চাওয়ায় দুইমাস পরে তারা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ##


এসএম
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন