আদালতের রায় অমান্য : উপজেলা পরিষদ অফিস ব্যবহার করছেন চেয়ারম্যান


আদালতের রায় অমান্য করে আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম ছরোয়ার ফোরকান’র বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ অফিস ব্যবহার করে দাফতরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাবেক কাস্টমস কর্মকতা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম এমন অভিযোগ এনে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন কর্মকাণ্ডে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এবিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানাগেছে, ২০১৩ সালে রুপালী ব্যাংক লিমিঃ পটুয়াখালী শাখা থেকে নিজ নামে এক বছর মেয়াদী ১৬ লক্ষ টাকা ঋণ নেন ফোরকান। যা সুদে-আসলে ২৪ লক্ষ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া তার মালিকানাধীন মেসার্স বনানী ট্রেডার্সের নামেও এক বছর মেয়াদী ঋণ তোলেন গোলাম ছরোয়ার ফোরকান। যা সুদে আসলে ২৭ লক্ষ টাকা হয়। ওই ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ খেলাপীর তালিকায় তার নাম ওঠে। ঋণ খেলাপীর তথ্য গোপান করে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত আমতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ওই নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। এতে সংক্ষুব্ধ হন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজু।
ওই বছরের ২১ এপ্রিল ঋণখেলাপির তথ্য সংযোজন করে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজু বরগুনা যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত ও নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম ছরোয়ার ফোরকানকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাকে বিজয়ী ঘোষণার আবেদন করেন। বরগুনা যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত ও নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আল মামুন সকল তথ্য যাচাই-বাছাই ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে গত ১৭ ফেব্রুয়ারী ফোরকানকে আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সামসুদ্দিন আহম্মেদ ছজুকে আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিজয়ী ঘোষণার আদেশ দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ফোরকান হাইকোর্টে আপিল করেন। উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের রায় স্থগিত করে পুনরায় বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য পাঠিয়ে দেন। দীর্ঘ শুনানী শেষে গত ৩১ আগষ্ট আদালতের বিচারক মোঃ হাসানুল ইসলাম পুর্বের রায়ের আংশিক বাতিল করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম ছরোয়ার ফোরকানকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে তফসিল ঘোষণা করে পুনঃ নির্বাচনের আদেশ দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে গোলাম ছরোয়ার ফোরকান এবং সামসুুদ্দিন আহম্মেদ ছজু সংক্ষুব্ধ হয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বও হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন।
আদালতের বিচারক এম এনায়েতুর রহমান ও মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ শুনানী শেষে কেন নিম্ন আদালতের রায় অবৈধ ঘোষষা করা হবে না তার কারণ দর্শানোর জন্য ৪ সপ্তাহের রুল নিশি জারি করেন। উচ্চ আদালতে তাদের এ মামলার শুনানী আগামী ২৮ অক্টোবর। কিন্তু গোলাম ছরোয়ার ফোরকান নিম্ন আদালতের রায় ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে গত ৩ অক্টোবর থেকে উপজেলা পরিষদ অফিস ব্যবহার করে তার দাফতরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সরকারী গাড়ী ব্যবহার করছেন। আদালতের রায় অমান্য করে অফিস করায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম ছরোয়ার ফোরকান নিম্ন আদালতের রায় ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা পরিষদ অফিস ব্যবহার করে দাফতরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। দ্রুত আদালতের রায় অনুসারে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান তিনি।
সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, নিম্ন আদালতের রায় ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে গোলাম ছরোয়ার ফোরকান উপজেলা পরিষদ অফিস ব্যবহার করে দাফতরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আদালতের রায় অনুসারে তিনি সরকারী অফিস ব্যবহার করতে পারেন না। তার এমন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম ছরোয়ার ফোরকান উপজেলা পরিষদ অফিসে দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনার কথা স্বীকার করে বলেন, নিম্ন আদালতের রায় উচ্চ আদালত স্থগিত না করলেও শুনানীর দিন ধার্য্য আছে তাই আমি অফিস করছি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, আদালতের আদেশ পেয়েছি। ওই আদেশ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মো. এনামুল হক /এমবি
এমবি
