বাউফলে বহিস্কৃত আ.লীগ নেতার প্রতিবাদ সভায় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা, ক্ষোভ


পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নদী বেষ্টিত চন্দ্রদ্বীপ চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও বরখাস্ত হওয়া আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আলকাচ মোল্লার প্রতিবাদ সভায় যোগদান করেছেন যুবলীগের ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের দুই শীর্ষ নেতা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগি আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে,নৌকায় ভোট দিয়ে ভুল শিকার ও ক্ষমা না চাওয়ায় চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. সহিদ গাজী (৫৫), ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির চৌকিদার (৪৫) ও তাঁর স্ত্রী মোসা. শেফালি বেগমসহ (৪০) কমপক্ষে ১০-১২ জন নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের গত শনিবার রাতে আলকাচ মোল্লা মারধর করে আহত করেন।
যদিও এ বিষয়ে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বরখাস্ত হওয়া ও ইউপি চেয়ারম্যান আলকাচ মোল্লা বলেন,‘ওরা সবাই বিএনপি-জামায়াতের লোক। তাই মেরেছি। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোনো আপোষ নাই।’
মারধরের এ বিষয় নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর প্রতিবাদে গত বুধবার বিকেলে প্রতিবাদ সভা করেন আলকাচ মোল্লা। ওই সভায় যোগদান করেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের মনোনীত কালাইয়া ইউপির চেয়ারম্যান ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে মনির হোসেন মোল্লা এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের মনোনীত জেলা পরিষদের সদস্য মো. হারুন অর রশিদ খান। তাঁরা আলকাচ মোল্লার পক্ষাবলম্বন করে বক্তৃতা করেন।
আওয়ামী লীগ নেতা সহিদ গাজী বলেন,‘জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ করি। আর আওয়ামী লীগের নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে মার খেতে হয়। আর এসব বিষয় নিয়ে পত্রিকায় লেখার কারণে প্রতিবাদ সভা হয়। ওই প্রতিবাদ সভায় আমাদেরকে জামায়াত-শিবির বানিয়ে বক্তব্য দেন যিনি নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। আর তাঁকে সমর্থক দিতে যোগ দিয়েছেন যুবলীগ নেতা মনির হোসেন মোল্লা ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হারুন অর রশিদ খান। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কি হতে পারে?’
এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা হারুন অর রশিদ বলেন,‘দাওয়াত পেয়েছি বলে গিয়েছি।’দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বরখাস্ত হওয়া নেতার সভায় আপনি যেতে পারেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে কালাইয়া ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন মোল্লার মুঠোফোনে কল করলে তিনি ধরেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি ধরেননি কিংবা ফোন করেননি।
দলীয় সূত্র ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকেই পরাজিত নৌকার নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা , ভাঙচুর এবং তাঁদেরকে মারধর করে আলকাচের কর্মী-সমর্থকেরা। নির্বাচনের দিন রাতে ভয়ে পালিয়ে যায় নৌকার দুই শতাধিক কর্মী-সমর্থকেরা। দীর্ঘদিন পর এলাকায় ফিরলেও ইউনয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল ছালামসহ এখনো কমপক্ষে ২০ নেতা-কর্মী এলাকায় যেতে পারছেন না।
আলকাচ মোল্লা হলেন স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসম ফিরোজের ভাতিজা। গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। সেখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমির হোসেন হাওলাদার। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বরখাস্ত করা হয় আলকাচকে।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার বলেন,‘দলের বিপক্ষে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় যাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর প্রতিবাদ সভায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের কোনো নেতার অংশগ্রহণ খুবই দুঃখজনক।’
এইচকেআর
