টাকা ছাড়া 'পঙ্গু' শেবাচিমের অর্থপেডিক বিভাগ


বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়, আয়া ও কম্পাউন্ডারের (চিকিৎসকের সহকারী) দৌরাত্ম্য ও হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রোগী ও স্বজনরা। টাকা ছাড়া চিকিৎসা মেলেনা মেডিকেলের অর্থোপেডিক বিভাগে।
অর্থপেডিক বিভাগের হাত-পা ভাঙা রোগীদের প্লাস্টার, ব্যান্ডেজ করেন কম্পাউন্ডার (চিকিৎসকের সহকারী) মোশলেম। ওয়ার্ড বয় সুভাষ ও আয়াদের নিয়ে মোশলেম গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট।
এখানে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের আগেই রোগীর স্বজনদের সাথে করা হয় চুক্তি। আশঙ্কাজনক রোগীদেরও কোনভাবেই নিস্তার নেই। হাতে পায়ের ছোটখাটো কাটাছেঁড়া, হাত-পা ভাঙা প্লাস্টারের চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীর চিকিৎসা বাবদ মালামাল কেনার নাম করে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। চিকিৎসা নিতে আসা রোগী টাকা না দিলে রোগীকে ফেলে রাখা হয় বেডে। স্বজনদের জিম্মি করে হাতিয়ে নেন ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা।
অর্থপেডিক বিভাগের ৭ নং বেডে ভর্তি হয়েছেন পিরোজপুরে মঠবাড়িয়া উপজেলা থেকে আসা ৪ বছরের শিশু মুইন। রোগী মুইনের মা তানিয়া জানান, ‘‘টাকার জন্য বেন্ডিস করে নাই, অনেক কষ্ট পাইছে আমার ছেলেটা। একটা দিন ফালাইয়া রাখছে। গতকাল (শনিবার) বারোটায় ব্যান্ডেজ করার কথা ছিল কিন্তু টাকা না দেওয়ায় কাটা পা অবস্থায় ফেলে রাখছে আমার ছেলেকে। আমার ননদ আর ভাই কম্পাউন্ডারের পা জড়িয়ে ধরেছি তারপরও কাজ করেনি। ১৫০০ টাকা লাগবে জানিয়ে দেয় মোশলেম নামের কম্পাউন্ডার। আমি তো অসহায় এত টাকা দিতে পারবোনা। গতকাল ব্যান্ডেজ করেনি। আজকে ১২০০ টাকা দেয়ার পরে কাজ করেছে।’’
‘‘অর্থোপেডিক বিভাগের ১০ নম্বর বেডে ভর্তি হওয়া রাজাপুর থেকে আসা রোগী সাদিয়ার স্বজন বলেন, ভর্তি হওয়ার পর ওয়ার্ড বয় সুভাষ জানায় ব্যান্ডেজের জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা জমা দিতে হবে। উপরে স্যারের কাছে গেলে নাকি আরো টাকা লাগবে। ১ হাজার টাকা দিতে রাজি হলেও কাজ করতে রাজী হয়নি তিনি। পরে ১২০০ টাকা দিয়েছি।’’
রোগীর এই স্বজন বলেন, যাবতীয় যা দরকার এখানে লেখা সরকারিভাবে বিনামূল্যে পাবে কিন্তু টাকা নেয়ার উদ্দেশ্য কি? খুশি মনে মানুষকে অল্প কিছু টাকা দেয়া যায় কিন্তু এভাবে জিম্মি করে এরকম টাকা নিলে গরীব অসহায় মানুষ কোথায় যাবে?
শুধু ৭ ও ১০ নং বেডে ভর্তি হওয়া রোগীই নয়, অর্থপেডিক বিভাগে ভর্তি হওয়া অন্যান্য রোগীদেরও একই অবস্থা। টাকা নাই তো চিকিৎসা নাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো ৩ জন রোগীর স্বজন জানিয়েছেন তাদের কাছ থেকে নেয়া হয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা করে। টাকা দিলে মিলে ভালো আচরণ ও বেড। টাকা নাই তো ভালো আচরণও নাই, বেডও নাই। বিছনার চাদরও বদল হয়না এক সপ্তাহে। রোগীদের হয়রানি ও টাকা ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা কাজ করেন না।
চিকিৎসক ও প্রশাসনের গাফিলতিতে এসব ওয়ার্ড বয়, আয়া ও কম্পাউন্ডারেরা নির্বিঘ্নে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ এসএম সাইফুল ইসলামের সাথে এবিষয়ে কথা বলতে তার অফিসে গেলে তিনি নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন অনেক কিছু জানেনা তাই কথা বলতে রাজি নয় বলে জানান তার সহকারী।
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মনিরুজ্জামানের সাথে কথা বলতে গেলে তার ব্যস্ততার কারণে কথা বলেননি। এরপর মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
টিএইচএ/
