বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষের সংবাদ সম্মেলন


বরগুনার আমতলী উপজেলার নারী শিক্ষার স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়া ওই কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি গোলাম সরোয়ার (টুকু) কর্তৃক কলেজ পরিচালনায় বাঁধা, দায়িত্ব পালনে হুমকি, অবৈধভাবে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দাবি ও কর্মরত শিক্ষকদের হয়রানির অভিযোগে সাংবাদ সম্মেলন করেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০ ঘটিকায় আমতলী সাংবাদিক ক্লাবে অনুষ্ঠিত সাংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়া ওই কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি গোলাম সরোয়ার (টুকু)ও বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, কলেজের এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছিল গত ১৫/০৮/২০২১ খ্রি. তারিখ। আমি ০৭/০৮/২০২১খ্রি. তারিখ এডহক কমিটি গঠনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছি। আবেদনের সময় তৎকালীন সভাপতি রেজিউলিউশনের মাধমে বিধি মোতাবেক এডহক কমিটি গঠন করে সভাপতি ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়নের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এডহক কমিটি গঠনের ফরমেট পূরণ করে সকল কাগজপত্রাদি প্রেরণ করি। সেই ফরমেট এর উপর ভিত্তি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ১৯/০৯/২০২১ খ্রি. তারিখ এডহক কমিটির পত্র ইস্যু করে। কমিটিতে শুধুমাত্র প্রস্তাবিত সভাপতির স্থলে বর্তমান সভাপতি জনাব গোলাম সরোয়ারকে (টুকু) সভাপতি মনোনয়ন করে পত্র প্রদান করা হয়। আমি সভাপতি মহোদয়কে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরমেট অনুযায়ী এডহক কমিটি অনুমোদনের জন্য বিধিমোতাবেক প্রেরিত দাতা সদস্য হিসেবে জনাব মোঃ মতিয়ার রহমান, মেয়র, আমতলী পৌরসভা, বরগুনা ও শিক্ষক প্রতিনিধি জনাব মোঃ কবির হোসেনকে নির্বাচন করে প্রেরণ করার বিষয়টি অবহিত করি। কিন্তু তিনি উক্ত কমিটির সদস্যদের বারবার অনৈতিক প্রস্তাব দিলে তাহারা কোনভাবে অনৈতিক প্রস্তাব মেনে না নেওয়ায় তাদেরকে বাদ দিয়ে ভিসি মহোদয়ের প্রভাবের কথা বলে নতুন সদস্য নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
গত ১৯/০৯/২০২১ খ্রি. তারিখে এডহক কমিটি অনুমোদন হয়ে আসার পরে সভাপতি মহোদয় ২২/০৯/২০২১খ্রি. তারিখ আমাকে মুঠোফোনে কলেজের কোন কাগজপত্রে স্বাক্ষর না দেওয়ার জন্য বা কোন কাজকর্ম না করার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ প্রদান করেন। আমি সভাপতিকে সম্মান প্রর্দশন করে বিধিবর্হিভ‚ত হলেও তার মৌখিক নির্দেশনা অনুযায়ী কলেজে উপস্থিত হয়ে আমার হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে ২৯/০৯/২০২১ খ্রি. তারিখ পর্যন্ত অফিস করি। তিনি পুনঃরায় ৩০/০৯/২০২১খ্রি. তারিখ আমাকে কলেজ সংশ্লিষ্ট সকল কাজকর্ম করার জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি প্রদান করেন। আমি তার নির্দেশনা অনুযায়ী অদ্য পর্যন্ত কলেজের কাজকর্ম করে আসছি। এই সময়ের মধ্যে সভাপতি মহোদয় তার বরগুনা এবং বরিশালের বাসায় আমাকে ডেকে পাঠায়। উভয় ডাকেই আমি তার সাথে বিভিন্ন সময় বরিশাল ও বরগুনার বাসাতে সাক্ষাৎ করি। এসময় তিনি আমাকে বলেন আপনি স্বপদে বহাল থাকতে চাইলে তাকে ১৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে। তিনি তখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয়ের বরাত দিয়ে ওই টাকা থেকে ৫লক্ষ টাকা ভিসি মহোদয়কে দিতে হবে বলে জানায়। দাবীকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হইলে ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিবে বলে জানিয়ে বিষয়টি ভেবে দেখতে বলেন।
২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকা ফেরৎ দেওয়ার বিষয়ে দাতা সদস্য ও বিদ্যোৎসাহী সদস্যের সাথে সভা আহবানের বিষয়ে আলাপ করলেও তারা সভাপতি মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করেও এডহক কমিটির সভা করতে ব্যর্থ হন। মহামারী করোনার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণের টাকা ফেরৎ পেলেও আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের টাকা ফেরৎ দেওয়া সম্ভব হয় নাই। গত সেপ্টেম্বর ২০২১ খ্রি. মাসের শিক্ষক- কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বরাদ্দ আসলে বেতন সীটে প্রতি স্বাক্ষরের জন্য সভাপতি মহোদয়কে একাধিকবার অনুরোধ করা সত্তে¡ও তিনি বেতন ওই সীটে স্বাক্ষর করেননি। যার কারণে অদ্য পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা উত্তোলন করতে পারেনি। এরই ধারাবাহিকতায় অক্টোবর, ২০২১ খ্রি. মাসের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পাসের বিষয়ে সভাপতি পূর্বের সিদ্ধান্তে অটুট থাকেন।
তিনি অন্যায় লাভের আশায় ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে তার কথিত মতে ২০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে আমাকে অধ্যক্ষ পদ হইতে সরিয়ে তার খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী অত্র কলেজের সহকারী অধ্যাপক (পৌরনীতি) ফেরদৌসি আক্তারকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়ার হীন মানসে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তার প্রমাণ গত ০৬/১১/২০২১ খ্রিঃ তারিখ এডহক কমিটির সভাপতি মহোদয় কলেজে আকস্মিক উপস্থিত হয়ে সকল শিক্ষক-কর্মচারী, দাতা সদস্য, বিদ্যোৎসাহী সদস্য, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সহ-সভাপতির সম্মুখে আমাকে পদচ্যুত করে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ করবেন মর্মে হুমকি প্রদান করেন। তার এই হুমকি দেয়ার কারণে উপস্থিত সকল নেতৃবৃন্দ ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।৬ মাস মেয়াদের বর্তমান এডহক কমিটি অদ্য পর্যন্ত ৩ মাস ০৮ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও এডহক কমিটির কোন সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।
পরিশেষে অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়া তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে আমতলীর একমাত্র নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজকে রক্ষা ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সকল ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে রক্ষা এবং প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে এডহক কমিটির সভাপতি গোলাম সরোয়ার (টুকু) মুঠোফোনে বলেন অধ্যক্ষ হিসাবে ফোরকান মিয়ার নিয়োগ বৈধ নয় বিধায় আমি তার বিলে স্বাক্ষর করিনাই। তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা বানোয়াট ষড়য›ত্র মূলক অভিযোগের কোন ভিত্তি নাই বলেও তিনি দাবী করেন।
এসএম
