ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

Motobad news

 করোনার বয়স ২৫ হাজার বছর

 করোনার বয়স ২৫ হাজার বছর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

মহামারি করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে এই প্রাণঘাতি ভাইরাস প্রথম শনাক্ত করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে বিশ্বের প্রায় সব দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এর সংক্রমণ।

তবে এবার নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, করোনাভাইরাস নতুন কিছু নয়, এটা অনেক পুরোনো ভাইরাস, যা ২৫ হাজার বছর আগে থেকে মানুষকে ভোগাচ্ছে। আরও জানা গেছে, এই ভাইরাস সেসময়ে পূর্ব এশিয়ায় বিপর্যয় তৈরি করেছিল।

গবেষণাটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডেভিড এন্নার্ড। তিনি বলেছেন, এটা এমন একটা ভাইরা যা মানুষকে অসুস্থ ও মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।

ডেভিড এন্নার্ড বলেছেন, মানুষের মতো ভাইরাসগুলোও তাদের নতুন জিনোমের মাধ্যমে প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। শুধু ভাইরাস নয়, এই প্রক্রিয়াটি হলো সব ধরনের প্যাথোজেনের সঙ্গে চলে। অর্থাৎ, প্রত্যেক প্রকারের জীবাণু তাদের প্রজন্মে নিয়মিত পরিবর্তিত হয়, যাতে তারাও প্রকৃতিতে বাঁচতে পারে। প্রারম্ভিক পরিবর্তনগুলোকে ‘মিউটেশন’ এবং দেরি করা পরিবর্তনগুলোকে বলা হয় ‘বিবর্তন’।

তিনি আরও বলেছেন, তার টিম প্রাচীন করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ২৬ জনগোষ্ঠীর ২ হাজার ৫০৪ জনের জিনোম পরীক্ষা করেছিল। তাতে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের মতো রোগজীবাণু মানুষের ডিএনএন-এর প্রকৃতি নির্বাচন করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মতে অগ্রসর হয়েছিল। গবেষণাটি ভবিষ্যতে কী ধরনের ভাইরাস আসতে পারে তা সহায়তা করবে। অথবা কোন ধরনের লোককে সংক্রামিত করবে তা জানাতে সহায়তা করবে।

অধ্যাপক ডেভিড এন্নার্ডের বই ‘বাইওরিভ’ প্রকাশিত হয়েছে। তবে এর পর্যালোচনা করা হয়নি। বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশের জন্য একটা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাস কোষগুলোর মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। এটা কোষকে হাইজ্যাক করে। এরপর এটা নিজের মধ্যে ভেঙে ভাইরাস তৈরি করে। এর অর্থ হলো, করোনার ভাইরাস একবারে মানবদেহে হাজার হাজার প্রোটিনের সংস্পর্শে আসে।

বিজ্ঞানীরা যখন এটা গবেষণা করেছিলেন, তখন দেখা গিয়েছিল, করোনাভাইরাস মানবদেহে ৪২০ প্রোটিনের সাথে যোগাযোগ করে। এর মধ্যে ৩৩২টি প্রোটিন সরাসরি করোনাভাইরাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ঠিক যখন দেহের প্রোটিনগুলো ভাইরাসের সাথে যোগাযোগ শুরু করে, তখনই বুঝতে হবে কেউ করোনার সংক্রমিত হতে চলেছেন। দেহে উপস্থিত এই ৩৩২টি প্রোটিন মানবদেহের ভাইরাসকে ভেঙে ফেলার এবং একটি নতুন ভাইরাস তৈরি করতে সহায়তা করে।

গবেষণায় এই ধরনের জিনগুলো পূর্ব এশিয়ার মানুষের জিনে পাওয়া গেছে, যারা প্রাচীনকালে করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে ছিলেন। এর প্রমাণ এখনও তাদের শরীরে বিদ্যমান।

বিশ্বে এমন অনেক করোনাভাইরাস রয়েছে, যাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম কেটে গেছে এবং মানুষকে অসুস্থ করেছে। তাদের মধ্যে ঘটে যাওয়া মিউটেশনগুলো পূর্ব এশিয়ার মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করেছিল। কারণ তারা প্রায়শই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। করোনার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডিগুলো তাদের দেহে তৈরি হতে থাকে।

ডেভিড এন্নার্ডের গবেষক দল দেখেছে, কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে আসলে তার শরীরে ৪২০ প্রোটিনের ৪২ রকমের কোড তৈরি হয়। কোডগুলো ২৫ হাজার বছর থেকে ৫ হাজার বছর আগে রূপান্তর ও বিবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ, প্রাচীন করোনাভাইরাস প্রতি শতাব্দীতে মানুষকে হয়রানি করে চলেছে। এর সর্বাধিক প্রভাব দেখা গেছে পূর্ব এশিয়ায়।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোয়েল ওয়ার্টহাইম বলেছিলেন, এই গবেষণা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, হাজার বছর ধরে করোনভাইরাস মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, মানবদেহ এত হাজার বছর পরও করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কোনো উপায় খুঁজে পায়নি। কারণ করোনাভাইরাস অবিচ্ছিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়। সে নিজেকে পরিবর্তন করে মানুষকে হয়রানি করে প্রতিনিয়ত।

ডেভিড এন্নার্ড বলেছেন, প্রাচীনকালে মানুষের মধ্যে করোনভাইরাস সংক্রমণ ছিল না। অন্য ধরনের ভাইরাস রয়েছে। অন্য ধরনের ভাইরাস মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। অন্য একটি বৈজ্ঞানিক দলও জানিয়েছিল, ২৩ হাজার ৫০০ বছর আগে করোনাজাতীয় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। এই ভাইরাসের নাম সারবেকোভাইরাস (Sarbecoviruses)। এটা করোনা ও এর ভাইরাসগুলোর পুরো পরিবার। একই সঙ্গে, জেনেটিক কোডগুলো যা এই ভাইরাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তা মানবদেহেও দেখা যায়।

ডেভিড এন্নার্ড বলেছেন, পুরোনো করোনাভাইরাসের মাধ্যমে আমরা আধুনিক ভাইরাসের চিকিৎসা করতে পারি, এমন কোনো গবেষণা বা ব্যবস্থা তৈরি করা হয়নি।

তবে, ডেভিড ও তার দল এখনও প্রাচীন করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছেন। তারা এই জাতীয় জিনোম নিয়ে গবেষণা করে ভবিষ্যতের মহামারি সম্পর্কে ধারণা করতে চাইছেন।

নতুন মহামারিটি কখন আসবে এবং কতজন মানুষ এতে সংক্রমিত হতে পারে, সে সম্পর্কেও তথ্য থাকতে পারে। যদি সত্যিই করোন বা তার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য কোনো ভাইরাস প্রাচীন যুগে মহামারি ছড়িয়ে থাকে, তাহলে এটা ভবিষ্যতে মানুষকে বাঁচাতে সহায়তা করতে পারবে বলে আশা করা যায়।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স ডটকম


টিএইচএ/
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন