আইপিএলের আলোচিত যত ঘটনা

শেষ হলো আইপিএলের ১৫তম আসর। ফাইনালে রাজস্থান রয়্যালসকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে প্রথমবার খেলতে আসা গুজরাট টাইটানস। দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিশ্বের সবচেয়ে বড় টি-টোয়েন্টি লিগের এ মৌসুমের আলোচিত ঘটনাঃ
কোহলি-উইলিয়ামসনের বিস্মৃত মৌসুম
লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে জয়ে নিশ্চিত হয়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খেলা। স্বাভাবিকভাবেই বিরাট কোহলির উদ্যাপনটা ছিল দেখার মতো। তবে রাজস্থান রয়্যালসকে টপকে যাওয়া হয়নি তাঁদের, আরেকবার আইপিএল থেকে শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছে বেঙ্গালুরু ও কোহলিকে।
এবার বেঙ্গালুরুর অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া কোহলি রীতিমতো ভুগেছেন। ২০১৯ সালের শেষ দিকের পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি–খরায় ভোগা সাবেক ভারত অধিনায়কের জন্য এবারের আইপিএল কেটেছে ভুলে যাওয়ার মতোই। ১৬ ম্যাচে ২২.৭৩ গড়ে ৩৬১ রান করেছেন, তবে ওপেনিংয়ে নামা কোহলির স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ১১৫.৯৮। দুই ফিফটির একটি পূর্ণ করতে তাঁর লাগে ৪৫ বল। গুজরাটের বিপক্ষে ৫৪ বলে ৭৩ রানের ইনিংসে নিজেকে ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দেন, তবে প্লে-অফে নিষ্প্রভই থাকেন তিনি।
কোহলির মতো ভুগেছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের অধিনায়ক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের একসময়ের ‘চমৎকার চার’-এর আরেকজন কেইন উইলিয়ামসন। ১৯.৬৩ গড়, ১০০-এর নিচে (৯৩.৫০) স্ট্রাইক রেট উইলিয়ামসন নিজেকে খুঁজে পাননি। ১০ দলের মধ্যে সপ্তম হয়েই আইপিএল শেষ করেছে তাঁর দল।
কোহলি-উইলিয়ামসনের মতো নিজেদের খুঁজে ফিরেছে ‘জায়ান্ট’ চেন্নাই, মুম্বাই। গতবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই বিদায় নিয়েছে সবার আগে, চেন্নাইয়ের সঙ্গে টেবিলের সবার নিচে ছিল তারা। চেন্নাই অধিনায়ক বদল করেছে মৌসুমের মাঝপথে, আইপিএলের অন্যতম সফল দলকে ‘সুখী’ মনে হয়নি মোটেও। সাদামাটা মৌসুম কাটিয়েছে কলকাতাও।
সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহকের তালিকায় দুইয়ে থাকা লোকেশ রাহুলের সঙ্গে জস বাটলারের ব্যবধান ২৪৭। ৫৭.৫৩ গড়, প্রায় ১৫০-এর কাছে স্ট্রাইক রেট এ মৌসুমে বাটলারের পারফরম্যান্স ছিল এমন অতিমানবীয়ই। গত মৌসুমে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেরই প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন এ ইংলিশ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান, এবার ছুঁয়েছেন বিরাট কোহলির এক মৌসুমেই চারটি সেঞ্চুরির রেকর্ড। শেষ পর্যন্ত থেমেছেন ৮৬৩ রান নিয়ে, আইপিএলের এক মৌসুমে যেটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান।
সর্বোচ্চ রানের অরেঞ্জ ক্যাপ গেছে বাটলারের কাছে, সর্বোচ্চ উইকেটের পারপল ক্যাপ তাঁর সতীর্থ যুজবেন্দ্র চাহালের। নিলামের অন্যতম ‘চমক’ বেঙ্গালুরুর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার সঙ্গে সর্বোচ্চ উইকেটের তালিকায় চাহালের ‘ইঁদুর-বিড়াল’ দৌড় চলেছে, শেষ পর্যন্ত ফাইনালে হাসারাঙ্গাকে টপকে গেছেন চাহাল। এর ফলে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান ও সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক—দুজনই রাজস্থানের।
আইপিএলে এমন ঘটনা ঘটল এ নিয়ে তৃতীয়বার। এর আগে ২০১৩ সালে চেন্নাইয়ের মাইক হাসি ও ডোয়াইন ব্রাভো, ২০১৭ সালে হায়দরাবাদের ডেভিড ওয়ার্নার ও ভুবনেশ্বর কুমার ছিলেন রান ও উইকেটের তালিকার শীর্ষে। তবে এ তিনবারের কোনোবারই চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি দলগুলো।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কেউ যদি বলতেন, আইপিএল ফাইনালের সেরা বোলারের নামটি হবে হার্দিক পান্ডিয়া, সেটিও ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে প্রতিপক্ষের সেরা তিন ব্যাটসম্যানের উইকেট নিয়ে তাহলে অবাক হওয়ারই কথা। মুম্বাইয়ের হয়ে সর্বশেষ দুই মৌসুমে কোনো বলই করেননি পান্ডিয়া। তাঁর ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন আছে বেশ কিছুদিন ধরেই, ভারতের হয়ে সর্বশেষ ৬টি ওয়ানডে ও ৯টি টি-টোয়েন্টিতে বিবেচনা করা হয়নি তাঁকে।
সেই পান্ডিয়ার হাতেই দেওয়া হলো নতুন দল গুজরাটের দায়িত্ব, এর আগে কখনোই সিনিয়র পর্যায়ে কোনো দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল না পান্ডিয়ার। গুজরাটে ব্যাটিংয়েও নতুন ভূমিকা ছিল তাঁর চারে ব্যাটিং। এর আগে মুম্বাইয়ের হয়ে সাতটি মৌসুমে ১৫৩.৯১ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন পান্ডিয়া, এবার সেটি ছিল ১৩১.২৬। মুম্বাইয়ে প্রতি ৯.৮টি বলে একটি করে ছয় মেরেছেন, এবার একটি ছয়ের জন্য অপেক্ষা করেছেন ৩০.৯ বল। এসব পরিসংখ্যানই বলে দেয়, চারে ব্যাটিংয়ের জন্য দায়িত্বটা অন্য রকম ছিল তাঁর। ৪৮৭ রান করেছেন ৪৪.২৭ গড়ে পান্ডিয়া যে সফল, সেটি আলাদা করে না বললেও চলে।
উমরানের গতির ঝলক
আইপিএল মানেই উত্থানের গল্প। আর গতির প্রতি ক্রিকেটের ‘দুর্বলতা’ পুরোনোই, বিশেষ করে ভারতের মতো দেশে, যেখানে ফাস্ট বোলারদের দেখা মেলে না সচরাচর। এসবের মিশেলে নতুন এক প্যাকেজেরই নাম উমরান মালিক।
টুর্নামেন্টজুড়েই গতির ঝলক দেখিয়েছেন হায়দরাবাদের ফাস্ট বোলার। এ মৌসুমে শীর্ষ ১০টি দ্রুতগতির বলের আটটিই তাঁর করা। সঙ্গে আছে ২২টি উইকেট। আইপিএল শেষ হওয়ার আগেই পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারত দলে ডাক পেয়েছেন।
মালিকের সঙ্গে গতির মূল লড়াইটা অবশ্য এবার ছিল লকি ফার্গুসনের। ফাইনালে এসে ঘণ্টায় ১৫৭.৩ কিলোমিটার গতি তুলেছেন ফার্গুসন, এবার এটিই সর্বোচ্চ। উমরানের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১৫৭ কিলোমিটার।
এএজে

 
                 
                                 
                                             
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                     
                                     
                                     
                                    