বিএম কলেজে উপাধ্যক্ষের যোগদান ঠেকাতে বিক্ষোভ


বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে নতুন উপাধ্যক্ষের যোগদান নিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তার যোগদান ঠেকাতে রোববার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। তারা কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করায় উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করতে আসতে পারেননি এ.এস কাইউম উদ্দিন আহমেদ নামের ওই শিক্ষক।
তবে উপাধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি পাওয়া কাইউম উদ্দিন আহমেদ’র অভিযোগ স্বার্থান্বেষী শিক্ষক মহল তার যোগদান ঠেকাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম করে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছে। এমনকি ওই মহল তাঁকে মুঠোফোনে কল করে হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
এদিকে, বিএম কলেজ ছাত্রলীগের অপর একটি গ্রুপের কয়েকজন নেতা ও দুজন শিক্ষকের দাবি এএস কাইউম উদ্দিন আহমেদ এর সাথে পূর্বে থেকেই বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের একাংশের নেতাদের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। পাশাপাশি কলেজ শিক্ষক পরিষদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আলামিন সরোয়ারের সাথেও তার বিরোধ রয়েছে। সেই সূত্র ধরেই তাঁকে যোগদানে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
জানা গেছে, পূর্বের উপাধ্যক্ষের বিদায় জনিত করণে ওই পদে পদায়ন করা হয় বিএম কলেজ শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ.এস কাইউম উদ্দিন আহমেদ কে। অফিসিয়াল নির্দেশনা অনুযায়ী রোববার তার নতুন পদের দায়িত্ব গ্রহণের কথা ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে বিএম কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
রোববার সরেজমিনে বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা যায়, এ.এস কাইউম উদ্দিন আহমেদ এর যোগদান ঠেকাতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন। তারা এ.এস কাইউম উদ্দিনকে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে স্লোগান দিচ্ছেন। তবে যারা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ বহিরাগত অছাত্র ছিলের বলে দাবি কাইউম উদ্দিনের।
তাছাড়া ইতিপূর্বে বিএম কলেজের সমাজকল্যাণ বিভাগে ভাংচুর এবং বরিশাল নগরীর টপটেন শো-রুমে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিদেরও শিক্ষকের যোগদান আটকানোর বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে।
আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া সাধারণ শিক্ষার্থী পরিচয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, ‘এ.এস কাইউম উদ্দিন ইতিপূর্বে বিএম কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি সময় তিনি এই কলেজের নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। দুর্নীতির মাধ্যমে কলেজ ফান্ড থেকে টাকা উত্তোলন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলেন তিনি।
তাছাড়া বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজে যোগদান করতে আসা এক অধ্যক্ষের যোগদান ঠেকাতে তাঁর ওপর হামলা করে তৎকালিন বিএম কলেজ ছাত্রলীগ। যে ঘটনা গোটা দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেই ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবে এ.এস কাইউম উদ্দিনকেও দায়ি করেছেন বর্তমানে তার যোগদান ঠেকাতে আন্দোলন করা ছাত্রলীগের কর্মীরা।
তাদের দাবি কাইউম উদ্দিন যোগদান করলে বিএম কলেজে পুনরায় দুর্নীতি ঢুকে পড়বে। তিনি কলেজকে দুর্নীতির আতুরঘর বানিয়ে ফেলবেন। আমরা দুর্নীতি চাই না। এ কারণে ক্যাম্পাসকে দুর্নীতি মুক্ত রাখতে বিক্ষোভ করছি। আমাদের দাবি একটাই কাইউম উদ্দিনকে উপাধ্যক্ষ পদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহত দিতে হবে।
তবে উপাধ্যক্ষ পদে সদ্য পদায়নপ্রাপ্ত শিক্ষক এ.এস কাইউম উদ্দিন অভিযোগ তুলে বলেন, ‘একটি স্বার্থম্বেষী শিক্ষক মহল আমার যোগদান ঠেকাতে চাচ্ছে। এ কাজে তারা বহিরাগত ছাত্রলীগকে প্রভাবিত করছে। আমি যোগদান করতে চেয়েছি, কিন্তু অপরিচিত নম্বর থেকে আমাকে ফোন করে যোগদান না করতে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আজকের দিনটি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে কি করবো সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো।
বিএম কলেজ অধ্যক্ষ ড. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘সকাল থেকে কিছু ছেলেরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছিল। তবে তারা লিখিতভাবে আমাকে কিছু জানায়নি। শুনেছি উপাধ্যক্ষ পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত শিক্ষক এ.এস কাইউম উদ্দিন যাতে যোগদান করতে না পারেন সে জন্য তারা অবস্থান নিয়েছিল। আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। কাইউম সাহেবের সাথেও কথা বলেছি। তিনি যোগদান করতে এলে আমি নিয়ম অনুযায়ী তার যোগদান গ্রহণ করবো।
এমবি
