লোভনীয় বেতনের চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা


নিত্য নতুন প্রতারনার ফাঁদে পড়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বরিশালসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। প্রতিনিয়ত প্রতারনার নতুন নতুন ফাঁদ সৃষ্টি করছে প্রতারক চক্র।
এবার একটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতারনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিজ্ঞাপনে প্রতিটি পদের বিপরীতে বড় অংকের বেতনের ফাঁদ পাতা হয়। আর এ ফাঁদে পড়ে প্রতারনার শিকার হয়েছেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান মাসুম।
তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি চাকরির খবর পত্রিকায় ‘বাংলাদেশ কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’ সেখানে ৭টি পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং বেতনের বিষয়টিও উল্লেখ থাকে।
বিজ্ঞপ্তিতে থানা কর্মকর্তা পদের জন্য বিএ অথবা সমমান পাশ এবং উপজেলা পর্যায়ে সকল কর্মকর্তাদের পরিচালনা ও প্রতিবেদন তৈরীর যোগ্যতা চাওয়া হয়। বেতন ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ২৬০ টাকা। পদের সংখ্যা লেখা রয়েছে ৯৬ জন। এর সাথে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, আমার বিশ্বাস ছিল পত্রিকার বিজ্ঞাপন কোনভাবে প্রতারকচক্রের হতে পারে না। এ জন্য থানা কর্মকর্তা পদের জন্য ই-মেইলে আবেদন করি। সেখান থেকে শর্ত বেধে দেয়া হয় ই-মেইলে আবেদন করার জন্য। আবেদন করার কয়েকদিনের মধ্যে আমার মোবাইলে কল দিয়ে সেখান থেকে জানানো হয় যোগ্যতা থাকায় আপনি নির্বাচিত হয়েছেন। এখন আপনার নামের তালিকা অফিসের সামনে টানিয়ে দেয়া হয়েছে। আপনাকে নিয়োগপত্র পাঠানো হচ্ছে। পরবর্তীতে একটি কুরিয়ার সাভিসের মাধ্যমে নিয়োগপত্র হাতে পান তিনি।
নিয়োগপত্র পাওয়ার পর ৫ দিনের প্রশিক্ষণ হবে ঢাকায় এ জন্য ১৫শ’টাকা বিকাশ করার জন্য বলে প্রতারকচক্র। সরল বিশ্বাসে আমি বিকাশে ১৫শ’টাকা পাঠিয়ে দেই। এরপর মোবাইল করে ল্যাপটপ ও নতুন মোবাইল সেট পাঠানো এবং হিসাব নম্বর খোলার জন্য ৪ হাজার ২০টাকা বিকাশ করতে বলে।
বিষয়টি প্রতারনার মনে হওয়ায় একাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপকালে তারা টাকা না পাঠানোর পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতারকচক্রদের মোবাইলে কল দিয়ে প্রশ্ন রাখি আমাকে ল্যাপটপ ও মোবাইল পাঠাবেন কিসের জন্য। আর তা দিয়ে আমি করবো। এর কাজ কি। এ ধরনের প্রশ্ন করার পর তারা লাইনটি কেটে দেয়। এরপর থেকে ৩টি (ডা. জহিরুল ইসলাম কমিউনিটি ক্লিনিক নামে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি হচ্ছে ০১৭৯৫১৯৫৮১৪, এইচআর কমিউনিটি ক্লিনিকের নামের মোবাইল নম্বরটি হচ্ছে ০১৭৯১৪৫৪৭১৯, বিকাশ নম্বর হচ্ছে ০১৭৩৯০৯৯৯৭৪) মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তারা আর রিসিভ করেনি।
তিনি অভিযোগ করেন ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিট অফিসার পদে ২৬ হাজার ২০০টাকা বেতনে ১১০টি পদ, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ২৪ হাজার ৭৫০ টাকা বেতনে পদের সংখ্যা ৮৮ জন, কমিউনিটি ম্যানেজার পদে ২৩ হাজার ৯৫০ টাকা বেতনে পদ ১০৮টি, অফিসার সহকারি পদে ২২ হাজার ৪৫০টাকা বেতনে পদের সংখ্যা ১০৮ জন এবং স্বাস্থ্য কর্মী পদে ১৯ হাজার ৫০০টাকা বেতনে পদের সংখ্যা ১২৮ জন উল্লেখ রয়েছে।
সারা দেশ থেকে বেকাররা এ বিজ্ঞাপন দেখে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। এতে করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেবে প্রতারকচক্র। এতে করে আমরা যারা নিঃস্ব তারা আরো নিঃস্ব হচ্ছি। এ প্রতারনার বিজ্ঞাপনটি যে পত্রিকায় ছাপা হযেছে কোনভাবেই তারা দায় এড়াতে পারেন না বলে দাবি করেন অভিযোগকারী। এ জন্য বিজ্ঞাপন দেয়ার পূর্বে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে প্রকাশের অনুরোধ জানান তিনি। ওই বিজ্ঞাপনে অফিসের ঠিকানা লেখা রয়েছে রোড-৬, বাড়ি-৩৮৮/১০, বারিধারা, ডিওএইচএস, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-১২০৬।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বরিশাল জেলার সদস্য সচিব রফিকুল আলম বলেন, বিজ্ঞাপন পেলেই জাতীয় এবং আঞ্চলিক পত্রিকাগুলো তা ছেপে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করে। এটা ঠিক নয়। তাদের যাচাই বাছাই করে ওই বিজ্ঞাপটি ছাপতে হবে। তাদের বুঝতে হবে এর সাথে তাদের গ্রাহকরাও জড়িত। আবার গ্রাহকদেরও এ জন্য সচেতন হতে হবে। বিজ্ঞাপন দেখলেই সেখানে ঝুঁকে না পেড়ে যাচাই-বাছাই করে তারপর আবেদন করতে হবে।
এ অপরাধটি কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীন। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি থাকবে বিশেষ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাপার পূর্বে তা যেন ভালোভাবে যাচাই করে নেয়া হয়।
এএজে
