সরব বরিশাল নদী বন্দর, মাস্ক পরলেও লঞ্চে নেই যাত্রীদের দূরত্ব


সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার সকাল থেকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সকল রুটে চলাচল শুরু করেছে যাত্রীবাহী লঞ্চ। এর ফলে সকাল থেকেই লঞ্চঘাট এলাকা যাত্রীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। এ কারণে টানা দেড় মাসের অধিক সময় পরে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বরিশাল নদী বন্দর।
এদিকে, সোমবার সকালে যাত্রী এবং লঞ্চ কর্তৃপক্ষের অংশগ্রহণে শুকরাণা দোয়া মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় অভ্যন্তরীন রুটের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল। তবে সকালের দিকে যাত্রীদের চাপ অনেকটা কম থাকলেও বিকালের পরে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের যাত্রীদের চাপ অনেকটা বেড়েছে।
ছোট-বড় সকল লঞ্চেই যাত্রী তুলতে নৌ-শ্রমিক এবং কলম্যানরা হাঁক-ডাক মেরে যাত্রীদের লঞ্চে তুলছেন। দেখাচ্ছেন আয়ে যাওয়ার প্রলোভবন। তবে ভাড়ার বিষয়য়ে কমতি নেই। ডেক শ্রেণির যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করছেন লঞ্চ শ্রমিকরা। অথচ মাস্ক পড়লেও বেশিরভাগ স্বাস্থ্যবিধি পালন না করার বাস্তব চিত্র নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে।
ভোলাগামী একটি লঞ্চে পরিবার নিয়ে উঠেছেন যাত্রী লিটন সরদার নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ‘ঈদে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় গ্রামে যেতে পারিনি। এখন লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে গ্রামে যাচ্ছি। কিন্তু ভাড়া যা নেয়া হচ্ছে সেটা অনেক বেশিই মনে হচ্ছে।
পাতারহাটগামী আরেক যাত্রী মনির বলেন, অনেক দিন পর লঞ্চ চলাচল শুরু করছে। এখন অন্তত ‘বেশি বোঝা’ মানুষগুলোর উচিত হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চঞ্চ চলাচল করা।’
ভোলার উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে ঘাট ত্যাগ করা লঞ্চের মাস্টার রিপন জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাত্রী নিয়ে ভোলার উদ্দেশে যাত্রা করেছি। অনেক আন্দোলনের পর অনুমতি পেয়েছি। এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচলে যাত্রীদের বাধ্য করব।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বরিশাল অঞ্চলের সভাপতি শেখ আবুল হাশেম বলেন, সকাল থেকেই বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, কালীগঞ্জ, লালমোহন, চরকলমি, বোরহানউদ্দিন, বাহেরচর রুটে লঞ্চ চলাচল করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে যাত্রীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। যদি তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনিচ্ছুক হয় তাহলে আমরা প্রশাসনের সহায়তা চাইবো।
এদিকে, বরিশাল-ঢাকা নৌ-রুটের এমভি মানামী লঞ্চের মাস্টার আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, নির্দেশনা পাওয়ার পর লঞ্চ ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত করেছি। রাতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবো আমরা।
সোমবার সন্ধ্যায় বরিশাল নদী বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের বিশালবহুল পাঁচটি লঞ্চ ঢাকা যাত্রার অপেক্ষায় রয়েছে। প্রতিটি লঞ্চের ডেকে যাত্রী তোলা হচ্ছে। মাইকিং করা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে। তবে বাস্তবে কেউ তা মানছে না। গায়ে গা মিলিয়েই ডেকে জায়গা করে নিয়েছেন যাত্রীরা। এ বিষয়ে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগী ভুমিকা নেই।
অপরদিকে, ‘স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা হলেও লঞ্চগুলোতে বর্ধিত ভাড়াই আদায় হচ্ছে। ইতিপূর্বে ডেকে জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়া নেয়া হলেও বর্তমানে আদায় হচ্ছে ৪০০ টাকা। তবে কেবিনের ভাড়া আগের মতই আছে।
বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সোমবার বরিশাল নদী বন্দর থেকে রাত্রীকালিন যাত্রায় এমভি সুরভী-৯, এমভি পারাবত ১০, এমভি সুন্দরবন-১০, কীর্তনখোলা-১০ এবং মানামী যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছে। প্রতিটি লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি-না তা তদারকি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘লঞ্চ চালু হলেও সকাল থেকেই যাত্রীদের চাপ অনেকটা কম। রাতেও একই অবস্থায়। দুদিন পরে যাত্রীদের ভির বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন যাত্রী কম থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই লঞ্চ চলাচল করছে। আপাতত যাত্রীদের মাস্ক পরার বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এমবি
