ছাত্রলীগ সভাপতি জসীমকে অব্যাহতি, কমিটি বিলুপ্ত


বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জসীম উদ্দিনকে তার সাংগঠনিক পদ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। সংগঠনের শৃংখলা পরিপন্থি কার্যকলাপের অপরাধে তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়। সেই সাথে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার বেলা সোয়া ৩টায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় মুঠোফোনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সংসদের এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি জসীম উদ্দিন এর বিরুদ্ধে সংগঠনের শৃংখলা পরিপস্থি কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে। গুরুতর এই সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জসীম উদ্দিনকে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করেছি। এখন নতুন করে কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। নতুন নেতৃত্ব যাচাই-বাছাই করে যোগ্য নেতাদের নিয়ে মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হবে। এটা একটু সময়ের ব্যাপার বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, ‘২০১১ সালে বরিশাল জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি তিন সদস্য বিশিষ্ট পৃথক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে জেলা কমিটিতে হেমায়েত উদ্দিন সুমন সেরনিয়াবাতকে সভাপতি, আব্দুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক এবং শামসুদ্দোহা আবিদকে সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর ছাত্রলীগে জসীম উদ্দিনকে সভাপতি, অসীম দেওয়ানকে সাধারণ সম্পাদক এবং তৌসিক আহম্মেদ রাহাতকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছিল।
এক বছর মেয়াদী এই কমিটি’র মেয়াদ উত্তীর্ণের পর ২০১৪ সালের জুনে জেলা ছাত্রলীগের ১০৯ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। তবে মহানগর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি আদৌ। বরং তিন সদস্য বিশিষ্ট মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক তৌসিক আহম্মেদ রাহাদ ছাত্রলীগকে স্বেচ্ছায় বিদায় জানিয়ে চাকরি এবং সাংসারিক জীবনে চলে যান।
এছাড়া বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুর পরে রাজনৈতিক কারণে বরিশাল ছাড়েন সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান। ২০১৭ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র কে.এম শহিদুল্লাহ’র মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে আটক হন। ওই সময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। এর কিছুদিন পরেই বহিস্কার হন তিনি।
মহানগর ছাত্রলীগের একমাত্র নেতা হিসেবে টিকে ছিলেন সভাপতি জসীম উদ্দিন। তবে আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরে বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার হয়েছে বলে দাবি করেন সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান। অবশ্য তাকে বরিশালের রাজনীতিতে দেখা যায়নি গত কয়েক বছরেও।
এদিকে, বরিশালের রাজনীতিতে টিকে থাকা পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম- এমপি অনুসারী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসীম উদ্দিনও অতি সম্প্রতি নারী কেলেংকারিতে ফেসে যান। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক কলেজ ছাত্রীর সঙ্গে বছরের পর বছর শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। সবশেষ ওই ছাত্রীর সাথে প্রতারণা করে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেন তিনি। এই ঘটনায় বিয়ের পরের রাতেই জসীমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে থানায় মামলা দায়ের করেন ওই কলেজ ছাত্রী।
মূলত নারী কেলেংকারী এবং ধর্ষণ মামলার সূত্র ধরেই ২৫ মে মহানগর ছাত্রলীগের বিতর্কিত সভাপতি জসীম উদ্দিনকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছাত্রলীগের এই ইউনিটটিকে কেন্দ্রীয় সংসদ বিলুপ্ত করেছে বলে কেন্দ্রের কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
তবে তাকে বহিস্কার করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্যাডে দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, সংগঠনের শৃংখলা পরিপন্থি কার্যকলাপের অভিযোগের ভিত্তিতে ছাত্রলীগের বরিশাল মহানগর শাখার সভাপতি মো. জসীম উদ্দিনকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। সেই সাথে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ছাত্রলীগের মহানগর শাখা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।”
এইচকেআর
