হোগলা পাতার দড়ি তৈরি করে ভাগ্য ফিরছে নারীদের

ভোলার বিভিন্ন গ্রামের নারীরা সংসারের কাজের পাশাপাশি হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি করছেন দড়ি। আর নারীদের তৈরি এই দড়ির বিভিন্ন সামগ্রী বিশ্বের ৭৪টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ফলে হোগলা পাতার দড়ি তৈরি করে পুরুষের পাশাপাশি সংসারে বাড়তি আয় করে ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছেন ভোলার প্রায় ৫০ হাজার নারী।
তবে দড়ি তৈরির কারিগর নারীদের দাবি, তাদের তৈরি দড়ির সামগ্রী দেশ-বিদেশের বাজারে ভালো দামে বিক্রি হলেও সেই তুলনায় তারা ন্যায্য পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না।
ভোলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, প্রায় ২৫ বছর আগে বিডি ক্রিয়েশন নামে ঢাকার একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ভোলায় শুরু হয় হোগলা পাতা দিয়ে দড়ি তৈরির কাজ। প্রথমদিকে দড়ি তৈরিতে ভোলার গ্রামের নারীদের ভালো সারা না পেলেও প্রায় ১০ বছর থেকে দিনদিন বাড়তে থাকে দড়ি তৈরির নারী কারিগরের সংখ্যা। বর্তমানে ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার নারী সংসারের কাজের ফাঁকে দড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন।
ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি গ্রামের গৃহবধূ পারভিন বেগম বলেন, আমরা সংসারের কাজের পাশাপাশি দৈনিক হোগলা পাতা দিয়ে দড়ি তৈরি করি। আমরা প্রতিদিন এক হাজার হাত দড়ি তৈরি করতে পারি। আবার কেউ কেউ দেড় থেকে দুই হাজার বা তারও বেশি তৈরি করতে পারে।
তিনি বলেন, পাইকাররা আমাদের হোগলা পাতা বিনামূল্যে দেয়। এজন্য তারা আমাদের প্রতি হাজার হাত দড়ির দাম ১১০ টাকা দেয়।
ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি গ্রামের আরেক গৃহবধূ মোরশেদা বেগম বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে দড়ি তৈরি করি কিন্তু ভালো টাকা পাই না। আর যারা আমাদের কাছ থেকে পাইকারি দড়ি কিনে নেয় তারা ভালো টাকা লাভ করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি দড়ির আরও বেশি দাম পাই তাহলে আরও বেশি দড়ি তৈরি করতে উৎসাহ পাবো।
একই গ্রামের গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমাদের দড়ি ঢাকা নিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি হয়। সেগুলো আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। কিন্তু আমরা যদি দড়ি তৈরি পাশাপাশি দড়ির বিভিন্ন সামগ্রী ভোলায় তৈরি করতে পারতাম তাহলে অনেক বেশি আয় করতে পারতাম।
ভোলা সদর উপজেলার চর সামাইয়া ইউনিয়নের হোগলা পাতার দড়ির পাইকারি ক্রেতা মো. সিরাজ মোল্লা বলেন, ভোলা জেলায় আমরা ৩০ জন দড়ির পাইকার রয়েছি। আমরা বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে হোগলা পাতা সংগ্রহ করে জেলার প্রায় ৫০ হাজার নারীদের দড়ি তৈরির জন্য দিয়ে থাকি। আবার দড়ি তৈরি হলে ওই দড়ি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করি। এতে আমাদের পরিবহন খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। যার কারণে আমরা হোগলা পাতা তাদের বিনামূল্যে দিয়ে প্রতি এক হাজার হাত দড়ি তৈরির জন্য ১১০ টাকা মজুরি দিয়ে থাকি। এর বেশি তাদের দিলে কিছু থাকে না।
বিডি ক্রিয়েশনের ভোলার এরিয়া ম্যানেজার কাজী এনামুল হক বাচ্চু বলেন, আমরা ভোলার বিভিন্ন পাইকারদের কাছ থেকে ক্রয় করে দড়িগুলো ঢাকায় পাঠাই। ঢাকায় আমাদের কারখানায় হোগলা পাতার দড়ি দিয়ে সোফা সেট, ঝুড়ি, ফুলের টব, ভ্যানিটি ব্যাগসহ শতাধিক সামগ্রী তৈরি হয়। পরে সেগুলো আমাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কোরিয়া, ভারত, সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া, ইতালি, কুয়েতসহ ৭৪টি দেশে রপ্তানি করে থাকি।
তিনি আরও বলেন, ভোলায় হোগলা পাতার দড়ির তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির ব্যবস্থা করার দাবির বিষয়টি আমরা কর্তৃপক্ষকে জানাবো। আশা করি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দেবে।
ভোলা জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন জানান, ভোলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নারীরা হোগলা পাতার দড়ি তৈরি করে সংসারে বাড়তি আয় করছেন। কিন্তু তারা দড়ি তৈরির সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে কেউ আমাদের অবহিত করেনি। আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। নারীরা যাতে দড়ি তৈরির সঠিক মূল্য পায় সে লক্ষে কাজ করবো।
এএজে
