বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকদের ধর্মঘট অব্যাহত

বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদারকে প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষকদের অবস্থান ধর্মঘট ও কালোব্যাচ ধারণ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় দিনেও সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনের নিচ তলায় অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন তাঁরা। এদিন একই দাবি নিয়ে শিক্ষকদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
এর পূর্বে গত ২৭ মে অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদারকে দুর্নীতিবাজ এবং শ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ করেন মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকরা। এরপর ২৯ মে থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অবস্থান ধর্মঘট এবং কালোব্যাচ ধারণ কর্মসূচি শুরু করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রত্যাহার করে নেয়ার পরেও অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদার দায়িত্ব হস্তান্তরে তালবাহানা করছেন। এসময় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সহকর্মীদের হয়রানি, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, খামখেয়ালিপনা’র অভিযোগ তোলেন তাঁরা।
ধর্মঘটি শিক্ষকদের প্রতিনিধি শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদার একজন শ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী। তার প্রতিটা কথায় থাকে মিথ্যা আর অপব্যাখ্যায় ভরপুর।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘অধ্যক্ষ যোগদান করার পর থেকেই বিধি নিষেধ থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের নামে অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, দুর্নীতি, অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, এডহক হওয়ার পূর্বে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেননি তিনি। অথচ অধ্যক্ষ নিজে ছয় মাসের অগ্রিম বেতন নিয়েছেন। অব্যয়িত বয়ের অনুমোদন না থাকলেও অর্থ বাড়িয়ে কমিটি বিহীন নিজে কেনাকাটার নামে লুটপাট করেছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করে শতকরা বিশভাগ প্রেষনভাতা/অতিরিক্ত ভাতা গ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে অনুপস্থিত থাকা শিক্ষিকা ফারজানা আক্তার ঝুমার সাথে অমানবিক আচরণ করেন। সন্তান সম্ভাবা ওই শিক্ষিকাকে কলেজে আসতে বাধ্য করা, ভুয়া বিল ভাউচার দাখিল করে অর্থ আত্মসাত, অনুমোদনহীন ছুটি কাটানো, বরিশাল ত্যাগ করে কাউকে দায়িত্ব না দেয়াসহ শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ করেন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মেজর সাহিদুর রহমান মজুমদার। এরপর গত ২২ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে প্রত্যাহার করে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে ন্যস্ত করা হয়। ২৯ এপ্রিল সামরিক সচিবের পক্ষে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আবু হায়াত মো. রীশাদ মোরশেদ স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে তাকে বিএমএ পদায়ন করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের দায়িত্বভার অর্পণ করে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি।
যদিও এ বিষয়ে বিদায়ী অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদার বলেছেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী উপাধ্যক্ষের নিকট দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। কিন্তু মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে উপাধ্যক্ষ নেই। যেসব শিক্ষকরা আছেন তাদের এডহকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারাও এখন পর্যন্ত সিনিয়র হননি। যে কারণে তাদের কাছে দায়িত্বভার অর্পণে বিধিনিষেধ আছে। পুরো বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। নতুন কাউকে পদায়ন করা হলে তার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা বলেন তিনি।
এমবি
