দৌলতখানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবরের ওপর স-মিল


বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে সাড়া দিয়ে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের তরে জীবন বাজি রাখেন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার আব্দুল মজিদ হাওলাদার ও মোজাম্মেল সরদার। সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে এই দুই সূর্য সন্তান ভোলার দৌলতখান উপজেলার ঘুংগারহাটে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন। যুদ্ধকালিন সময়ে তড়িঘড়ি করে তাদের দাফন করা হয় একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী দুই গ্রামে।
কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও যথাযথভাবে সংরক্ষণ হয়নি ওই দুই বীর শহীদের সমাধি। বরং রক্ষণাবেক্ষণ আর প্রশাসনের সুদৃষ্টির অভাবে এক শহীদের কবরের ওপর নির্মিত হয়েছে স-মিল এবং অপরজনের সমাধিস্থল ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যা নিয়ে শুধু দুই শহীদের পরিবার নয়, ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাসহ সচেতন মহলেও। তারা দাবি জানিয়েছেন অতি দ্রুত দুই শহীদের সমাধিস্থল সংরক্ষণের।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ‘উজিরপুরের কাংশি গ্রামের মৃত খবির উদ্দিন সরদারের পুত্র শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক সরদার (গেজেট নং- ৬০) এবং তার মামা একই উপজেলার মুন্ডপাশা গ্রামের মৃত কসিম উদ্দীন হাওলাদারের ছেলে শহীদ আব্দুল মজিদ হাওলাদার। মুক্তিযুদ্ধকালিন দৌলতখানে এক সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন তারা দুজন।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ হাওলাদারকে ঘুংগারহাট এবং শহীদ মোজাম্মেল হক সরদার কে ঘুংগারহাটের অদূরে চরপাতা ইউনিয়নের লেজপাতা গ্রামে সমাহিত করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ঘুংগারহাটে একটি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ফলক নির্মিত হলেও দুই শহীদের কবর সংরক্ষণ হয়নি আদৌ।
শহীদ মোজাম্মেল হক সরদারের ভাগিনা সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির সুপারভাইজার মিলন বিশ্বাস বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৮৯ সালে আমার মামাকে যেই জমিতে সমাহিত করা হয়েছিল সেই জমিটি ক্রয় করেন জনৈক আবু নাঈম শামীম। তিনিও চাচ্ছেন সেখানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণ হোক। কিন্তু সরকারিভাবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদ্বয়ের কবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
অনেকটা আক্ষেপের সুরে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমি ঘুংগারহাট গিয়েছিলাম মামা এবং ভাইয়ের কবর দেখতে। গিয়ে যেটা দেখতে পেলাম সেটা সত্যিই আমাদের এবং বাঙালী জাতির জন্য লজ্জাজনক। দেশ মাতৃকার জন্য যেই সন্তান জীবন দিল সেই দেশের মাটিতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ হাওলাদারের কবরের ওপরে নির্মিত হয়েছে স-মিল।
এছাড়া তার ভাগিনা শহীদ মোজাম্মেল হক সরদারের সমাধিস্থলের আশপাশে ময়লা-আবর্জনার স্ত’পে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক বছর পূর্বে শহীদ আব্দুল মজিদ হাওলাদারের মেয়ে সুরাইয়া খানম বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সহ কয়েকজনের সাথে ঘুংগারহাট বাবা ও ভাইয়ের কবর জিয়ারত করতে যান। এসময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ স্থানীয় প্রশাসন দুই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু আদৌ সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি। বরং অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে দেশের জন্য জীবন দেয়া দুই শহীদের কবর।
শহীদ মোজাম্মেল হক সরদারের ভাগিনা সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির সুপারভাইজার মিলন বিশ্বাস আরও বলেন, ‘মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অকুতোভয় সৈনিক ছিলেন দুজন। দেশ মাতৃকার জন্য তাঁরা জীবন দিয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতার এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলো, আদৌ দুই শহীদের কবরের জায়গা দুটি অবহেলায় পড়ে আছে। আমাদের দাবি স্থানীয় প্রশাসন দুই শহীদের কবর সংরক্ষণ করে মহান স্বাধীনতা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান দেখাবেন।
এমবি
