ঢাকা রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫

Motobad news

বিয়ের সাড়ে ৯ মাসের মাথায় লাশ হয়ে বাবার বাড়ি ফিরল রিমা  

বিয়ের সাড়ে ৯ মাসের মাথায় লাশ হয়ে বাবার বাড়ি ফিরল রিমা  
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

সাড়ে ৯ মাস আগে বাবা মন্নান হাওলাদারের আদরের ধন ইসরাত জাহান রিমা বেগম (১৯) বৌ সেজে গিয়েছিল স্বামীর কর্মস্থলের ঢাকার আগারগাওয়ের তালতলার বাড়ি। হাতের মেহেদির রং না মুছতেই মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে লাশ হয়ে ফিরল বাবার বাড়ি। ২০ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য মেয়েকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ বাবা মন্নান হাওলাদারের। এঘটনা ঘটেছে ঢাকার আতারগাও তালতলায় অবস্থিত সংসদ ভবনের কর্মচারী কোয়াটারের এগারোতলায়।

জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের ৪ নংওয়ার্ডের নিবাসী মো. মন্নান হাওলাদারের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে রিমা বেগমের সাথে কুকুয়া ইউনিয়নের কুকুয়া গ্রামের মৃত হানিফ মোল্লার ছেলে সাদ্দাম হোসের সাথে ২০২২ সালের ১৩ জুলাই বিয়ে হয়। সাদ্দাম হোসেন জাতীয় সংসদ ভবনের পরিবহন শাখার কম্পিউটার অপারেটরের চাকুরি করেন। বিয়ের সময় ইসরাত জাহান রিমার বাবা মন্নান হাওলাদার মেয়ের সুখের কথা ভেবে ৮-১০ লক্ষ টাকা ব্যায় করে ঢাকার সরকারী কোয়াটারে থাকার জন্য সকল আসবাবপত্র ক্রয় করে দেন। এবং কানের গলার ও হাতের চুরিসহ আরো প্রায় ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের স্বর্ণ দিয়ে দেন। 

বিয়ের পর থেকেই শ্বাশুরী  সাহিদা বেগম, ননদ আসমা বেগম ও ভগ্নিপতি মাসুদ রানা ওই বাসায় থাকতেন এবং রিমাকে কারনে অকারনে নির্যাতন করতেন। স্বামীরও এতে সায় ছিল এবং গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সে রিমার বাবার বাড়ী থেকে ঢাকায় বাসা করার জন্য ২০ লক্ষ টাকা  যৌতুক এনে দিতে বলেন। রিমা তার বাবার নিকট থেকে এ টাকা এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ওই দিন বিকেলে এবং রাতে স্বামী সাদ্দাম হোসেন মোল্লা, শ্বাশুরী সাহিদা বেগম, ননদ আসমা বেগম ও তার স্বামী মাসুদ রানা  মিলে রিমাকে ব্যাপক নির্যাতর করেন। নির্যাতনের পর মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পরেন ইসরাত জাহান রিমা। 

এঘটনা রিমা তার বাবাকে জানালে সেও মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরেন এবং এতটাকা সে কিভাবে দিবে বলে মেয়ে কে জানায়। পরের দিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টার সময় রিমা ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে মর্মে লাশ উদ্ধার করে  স্বামী সাদ্দাম মোল্লার পরিবারের লোকজন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হসপাতালে নিয়ে যায়। এবং রিমার বাবাকে এ আত্মহত্যার ঘটনা জানায়। 

রিমার বাবা মন্নান হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে শুক্রবার বিকেলে ঢাকায় পৌছে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার মেয়ের কপালে কাটা দাগ এবং থুতনি এবং গলায় আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। আমার মেয়েকে ওরা ১০ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। 

রিমার ভাই রাব্বি হাওলাদার বলেন, আমার বোন আত্মহত্যা করে নাই। ওরা মেরে ঝুলিয়ে রেখেছে। ওদের করা একটা ভিডিও পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে, আমার বোনের অর্ধেক হাটু খাটের উপর আর গলায় ফ্যানের সাথে ওড়না ঝুলছে। এটা কিভাবে আত্মহত্যা হয়।

রিমার ফুপু ফেরদৌসি বেগম বলেন, মোগো ফুটফুটে মাইয়াডারে টাহার লইগ্যা ওরা মাইর‌্যা হালাইছে। এইয়ার বিচার চাই। রিমার খালা রাহিমা বেগম বলেন, বিয়ার সময় মাইয়াডারে সব দিয়া দিছি। হেইয়ার পরও পশুরা আমাগো মাইয়াডারে মাইর‌্যা হালাইছে।
গতকাল শনিবার সকালে রিমার আমতলী বাসায় সরেজমিন উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য।

স্বজন আর রিমার মা রাজিয়া বেগম বার বার মেয়ের নাম ধরে ডাক চিৎকার  দিচ্ছেন আর মুর্ছা যাচ্ছেন। এ দেখে পারা প্রতিবেশীরাও যেন কেঁদেছেন। 

প্রতিবেশী আলফি আক্তার জানান, রিমা অত্যান্ত হাসি খুশি আর মিষ্টি সভাবের ছিলো। এরকম একটি ছোট এবং সুন্দর মেয়েকে নরপশু না হলে মারতে পারে না। 

রিমার মৃত্যু শুনে রনজিৎ শীল বলেন, যৌতুকের জন্য একটি মেয়েকে এভাবে মেরে ফেলবে এটা সহজ ভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এর কঠিন বিচার চাই।

অভিযুক্ত স্বামী সাদ্দাম হোসেন মোল্লা স্ত্রীকে হত্যার কথা অস্বীার করে বলেন, সে নিজে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে। তার নিকট কোন যৌতুক চাওয়া হয়নি। এবং নির্যাতনও করা হয়নি।

ঢাকার শের-ই-বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উৎপল বড়ুয়া বলেন, রিমার লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, শুক্রবার বিকেলে রিমার বাবা মন্নান হাওলাদার বাদী হয়ে স্বামী সাদ্দাম হোসেন মোল্লা, শ্বাশুরী সাহিদা বেগম, ননদ আসমা বেগম ও তার স্বামী মাসুদ রানাকে আসামী করে একটি হত্যা প্ররোচনা মামলা দায়ের করেছেন। 

মামলা দায়েরের পর আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কি তথ্য পাওয়া গেছে তদন্তের সার্থে এটি বলা যাবে না। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া নেওয়া হবে।  


 


গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন