আবারো বাড়লে এলপি গ্যাসের দাম


ভোক্তা পর্যায়ে আবারো বেড়েছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম। আগের মাসের তুলনায় গতকাল রোববার ১২ কেজিতে বেড়েছে ২৩ টাকা। ফলে গ্যাস ভর্তি একটি সিলিন্ডারের দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০৪ টাকা। তবে বরিশালের বাসিন্দাদের এই সিলিন্ডার কিনতে এর সঙ্গে বাড়তি গুণতে হবে কমপক্ষে ৮০-১০০ টাকা।
গতকাল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এই নতুন দর ঘোষণা করেন। যা এ দিন সন্ধ্যা থেকে কার্যকরের নির্দেশনা দিলেও বিক্রেতারা সঙ্গে সঙ্গেই বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এ নিয়ে চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর এই ছয় মাসের ব্যবধানে ১২ কেজিতে এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বেড়েছে ৪০৫ টাকা।
বিইআরসির তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার গ্যাসের দাম ছিল ৯৯৯ টাকা। যা আগস্টে ছিল ১ হাজার ১৪০, সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ২৮৪, অক্টোবরে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের গ্যাসের দাম ১ হাজার ৩৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। চলতি নভেম্বরে ১৮ টাকা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩৮১ টাকা।
এদিকে খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দাম ও মূল্য প্রদর্শনের নির্দেশনা একটিও মানা হচ্ছে না। সব সময়ই নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে সিলিন্ডারপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা বেশি দিয়ে গ্রাহককে এলপিজি কিনতে হয়েছে। সরবরাহ ঘাটতির অজুহাতে সরকার নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি করছে না খুচরা ও ডিলার পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা।
নগরীর বিভিন্ন এলপিজি বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, গ্যাসের দাম বাড়াতে গত কয়েক মাস থেকে কৃত্রিম একটি সংকটের কথা বলা হচ্ছে। আর এই সংকটকে পুঁজি করে গ্যাসের দাম নিজেদের মতো করে বাড়িয়ে বিক্রি করচ্ছেন বিক্রেতারা। সরকার দাম বাড়ানোর আগেই বিক্রেতারা নিজেরাই দাম বাড়িয়ে দেয়।
গত সপ্তাহে নগরীর নতুনবাজার, সাগরদি, চৌমাথা, রূপাতলীসহ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে ১২ কেজির সিলিন্ডার।
তবে গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে স্থানীয় বাজারে এলপিজির দাম বাড়ানো হয়।
নগরীর বাংলাবাজার, বটতলাসহ কয়েকটি দোকান ঘুরে সরকারের নির্ধারিত দামে এলপি গ্যাস কিনতে পারেননি আলমগীর হোসেন। বাধ্য হয়ে বেশি দাম দিয়েই কিনতে হয়েছে তাকে।
আলমগীর হোসেনের আক্ষেপ আছে, তবে অভিযোগ করতে রাজী না তিনি। বললেন, অভিযোগ করার কী আছে? এটাতো ওপেন-সিক্রেট। সরকার সবই জানে। সব জায়গায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
সাগরদি এলাকার গ্যাস বিক্রেতা মুন্না ষ্টোরের স্বত্বাধিকারী বেল্লাল রাড়ী বলেন, ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের জন্য তিনি কোম্পানি ভেদে বাড়তি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
সরকার নির্ধারিত দামের কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করেছে ঠিকই, কিন্তু সরকার তো গ্যাস দেয় না, ডিলারদের কাছ থেকেই বেশি টাকায় গ্যাস নিতে হয়। এমন অবস্থায় সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে।
নগরীর নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকার খুচরা বিক্রেতা কামাল হোসেন জানান, গত নভেম্বর মাসে এলপি গ্যাসের দাম সরকার ১ হাজার ৩৮১ টাকা নির্ধারণ করে দেন।
কিন্তু ১ হাজার ৪২০ টাকা দরে পাইকারের কাছ তিনি এলপিজির সিলিন্ডার পেয়েছেন, তাও ১৫-২০ দিন পর। তিনি এই সিলিন্ডারগুলো বিক্রি করছেন ১ হাজার ৫০০ টাকায়, অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত খুচরা দামের চেয়ে ১১৯ টাকার বেশি রাখতে হয়েছে তাকে।
এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর এলপিজি সিলিন্ডার পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মইউদ্দিন খান রুবেল বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে ব্যবসায়িদের এলপিজি গ্যাস বিক্রি করতে বলা হয়। কেউ মানে কেউ মানে না।
অন্যদিকে এ ঘটনা প্রতিবার ঘটলেও ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করা হয়। তারা শুধু অভিযান চালানোর আশ্বাস দেন সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষদের। কিন্তু দাম কখনো কমে না।
এমএন
