ঢাকা রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম
  • ঢাকায় আল আমিন হত্যা, ভোলা থেকে দুই আসামি গ্রেপ্তার ভালো মানুষ না হলে দেশ-জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়: সেনাপ্রধান নির্বাচনে ভুল সিদ্ধান্ত না নিতে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান তারেক রহমানের সরকারের দুর্বলতার কারণে সীমান্তে পুশইন হচ্ছে : ফয়জুল করীম ত্রয়োদশ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা প্রায় পৌনে ১৩ কোটি, ভোটকেন্দ্র ৪৫ হাজার জামায়াত আমিরকে দেখতে হাসপাতালে বিএনপি মহাসচিব চকরিয়ায় এনসিপির পথসভার মঞ্চ ভাঙচুর বিএনপি নেতাকর্মীদের সামনের নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে দিতে হবে: রেজাউল করীম ইঁদুরের গর্ত থেকে শেখ হাসিনার সম্পত্তি বের হচ্ছে: বরিশালে রিজভী বাবুগঞ্জে মাটি কাটার অপরাধে ৩ ইট ভাটাকে জরিমানা 
  • এখনো দাবি নির্দলীয় সরকার

    মাঠ ছাড়বে না নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো

    মাঠ ছাড়বে না নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও নির্দলীয় সরকারের দাবি থেকে পিছু হটছে না বিএনপিসহ আন্দোলনকারী কোনো দল। আগের একদফার সঙ্গে নির্বাচনের ফল বাতিলের দাবি যুক্ত করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। জনগণকে নতুন করে সংগঠিত করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন।

    জানা গেছে, ৭ জানুয়ারির ভোট শেষ হওয়ার পরই নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী আন্দোলন, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল ও জোট। এই নির্বাচনকে ‘তামাশা, প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে নির্বাচনের ফল বাতিল এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ, কালো পতাকা মিছিল, মৌন মিছিল করেছে। ভোট বর্জন করায় দেশবাসীকে অভিনন্দনও জানিয়েছে এসব দল ও জোট।

     

    বিএনপিসহ ১৬টি দলের বর্জনের মুখে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির কথা বলা হলেও নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর দাবি, ৫ থেকে ১০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। তাদের মতে, জনগণ ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে সরকার ও নির্বাচনের প্রতি তাদের চূড়ান্ত অনাস্থা প্রকাশ করেছে। একে আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় হিসেবে দেখছে বিএনপি। নির্বাচন-পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে এখন যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মতামত নিচ্ছে দলটি। এর অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করেছেন বিএনপির হাইকমান্ড। সেখানে সরকারের নানামুখী চাপ ও প্রলোভন সত্ত্বেও ভোটে না যাওয়া এবং জোট ও আন্দোলন থেকে সরে না যাওয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে ১২ দলের নেতাদের ধন্যবাদ জানানো হয়। একই সঙ্গে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও জনগণের বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে। শরিকদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, আন্দোলন অব্যাহত রাখলে বিজয় সুনিশ্চিত।

     

    বৈঠকে বিএনপির পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান এবং ভার্চুয়াল মাধ্যমে সালাউদ্দিন আহমেদ যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বৈঠকে সংযুক্ত ছিলেন। অন্যদিকে ১২ দলীয় জোটের পক্ষে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপার রাশেদ প্রধান, জমিয়তের গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মো. ফারুক রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এরপর জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং এলডিপির সঙ্গেও আলাদাভাবে ভার্চুয়ালি বৈঠক করে বিএনপি।

     

    বিএনপি ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে দশ দফার ভিত্তিতে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে। এরপর গত ১২ জুলাই থেকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলনে ৪০টির মতো দল সম্পৃক্ত হয়। এ ছাড়া একই দাবিতে যুগপতের বাইরে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ধর্মভিত্তিক পাঁচ দলের মোর্চা ‘সমমনা ইসলামী দলগুলো’ এবং চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও যার যার অবস্থানে থেকে আন্দোলন করছে। নির্বাচনে অংশ না নেওয়া এসব দল ও জোট দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

     

    তবে শুরুতে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে গেছে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)।

    ‘নির্বাচনের নামে তামাশার’ প্রতিবাদে ভোটের পরদিন গত সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাব ও পল্টন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম মিত্র জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। এছাড়া আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ ও বিক্ষোভ করবে ছয় দলীয় এই জোট।

     

    গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি  বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের নামে তামাশা মঞ্চস্থ করেছে। কিন্তু জনগণ এই নির্বাচনী তামাশা প্রত্যাখ্যান করেছে। এই ডামি, তামাশার নির্বাচনের ফলাফল বাতিল এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলবে। এর অংশ হিসেবে আগামী শুক্রবার বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। জনগণকে আবার সংগঠিত করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।’

     

    যুগপৎ আন্দোলনের আরেক শরিক বিপিপির মহাসচিব মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ ৭ জানুয়ারির নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। এই তামাশার নির্বাচন বাতিল এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের ভোটের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব, অচিরেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ উল্লেখ করে তা বর্জন করায় জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। পাশাপাশি সরকারকে ভোট বর্জনের গণরায় মেনে নিয়ে ডামি নির্বাচন বাতিল করে অবিলম্বে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে পাঁচদলীয় এই জোট। দাবি আদায়ে এরই মধ্যে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেও পড়েছেন জোটের নেতারা। নির্বাচনের পরদিন গত সোমবার ঢাকায় এবং গতকাল সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

     

    বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স  বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনী তামাশা দেশের অধিকাংশ জনগণ বর্জন করেছে। ফলে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই আমাদের দাবি, সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন করার জন্য অবিলম্বে এই ডামি নির্বাচন বাতিল, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এই দাবিতে আমরা এরই মধ্যে মাঠে নেমে পড়েছি। ইতোমধ্যে আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছি। সামনে আমরা আন্দোলনের আরও নতুন নতুন কর্মসূচি দেব।’

     

    ‘নির্বাচনের নামে প্রহসনের প্রতিবাদে’ ভোটের পরদিন জাতীয় প্রেস ক্লাব ও পল্টন এলাকায় মৌন মিছিল করেছে ১২ দলীয় জোট। এ ছাড়া একই দিন কালো পতাকা মিছিল করে যুগপতের শরিক দল তাসমিয়া প্রধানের নেতৃত্বাধীন জাগপা। জানতে চাইলে ১২ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, ‘নির্বাচনী তামাশার প্রতিবাদ, ফল বাতিল এবং একদফা দাবিতে নির্বাচনের পরের দিনও আমরা বিক্ষোভ মিছিল করেছি। ভবিষ্যতে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচির ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছি। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

     

    দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘একতরফা ও ডামি’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তা বাতিলসহ একাধিক দাবিতে নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে ইসলামী আন্দোলনও। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা।

    দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ  বলেন, ‘দেশের জনগণ সরকারের প্রহসনের ডামি নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তারা ভোট দেয়নি। এই ডামি নির্বাচনের ফল বাতিল এবং জাতীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন বিলুপ্ত ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে, যা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে।’

     

    নির্বাচন বাতিলসহ একাধিক দাবিতে ‘সমমনা ইসলামী দলগুলো’ও আন্দোলন অব্যাহত রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিগগির কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবেন তারা।

    জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের বলেন, ‘ডামি নির্বাচন আমরা বর্জন করেছি। জনগণও এই নির্বাচন বর্জন করেছে। এই নির্বাচনের ফল বাতিল এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন ও রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

     


    এমএন
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ