রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও বিচার হলো না


রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৬ শ্রমিক নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলা ১১ বছরেও শেষ হয়নি। হাইকোর্টর নির্দেশে মামলার বিচারকাজ বন্ধ ছিলো দীর্ঘদিন। সেই বাধা কাটিয়ে চলছে সাক্ষ্যগ্রহণ। এরই মধ্যে ১০০ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, নির্দিষ্ট সময়ে মামলার বিচার শেষ করা হবে। অন্যদিকে শ্রমিক নেতারা বলছেন, রানা প্লাজার ঘটনার পর তৈরি পোশাক কারখানার উন্নতি হলেও শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নতি ঘটেনি।
কোনো ধরনের নিয়মনীতি না মেনে তৈরি করা রানা প্লাজা ধসে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল এক হাজার ১৩৫ জন নিহত হন। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন এক হাজার ১৬৯ জন। পরদিন এ ঘটনায় হত্যা মামলাসহ মোট তিনটি মামলা হয়। ভবন মালিক ও প্রধান আসামি সোহেল রানা পালিয়ে গেলেও পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর ১১ বছর পার হলেও বিচারিক আদালতে মামলার শেষ হয়নি। দীর্ঘদিন মামলার বিচারকাজ স্থগিতের পাশাপাশি সোহেল রানাকে জামিনও দিয়েছিলো হাইকোর্ট। এরপর আপিল বিভাগ মামলা শেষ করার সময় বেধে দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিমল সামাদ্দার বলেন, বেধে দেওয়া সময়ে বিচার শেষ করার চেষ্টা চলছে। বিচারিক কার্যক্রম বলতে যেটা বোঝায় ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি তৎকালীন বিচারক হাবিবুর রহমান জিন্নাহ প্রথম এই বিচার কাজ শুরু করেন। আমরা এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ জনের সাক্ষ্য নিয়েছি। উচ্চ আদালতের যে নির্দেশনা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এই সময়ের ভেতর... আর যদি সাক্ষী আসে, আর আমরা যদি না পারি সেক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের কাছে আবেদন করবো।
এদিকে শ্রমিক নেতা তাসলিমা আক্তার বলেন, রানা প্লাজার ঘটনায় হতাহতদের পুনর্বাসনের নামে প্রতারণা করা হয়েছে।
এই ঘটনার পর তৈরি পোশাক কারখানার উন্নতি ঘটলেও শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নতি ঘটেনি। রানা প্লাজার শ্রমিকদের ভিক্ষুকে পরিণত করা হয়েছে। বিচার যেন না চায় এবং শ্রমিক পরিবারগুলো যেন প্রতিবাদী না হয়ে ওঠে সেজন্য একই দিক থেকে তাদের সরিয়ে দিতে যা যা আয়োজন তা সরকার, মালিক পক্ষ এবং বিদেশি বায়াররাও করেছে।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক শ্রমিকদের আর্থিক ও জীবনমানের উন্নতির জন্য আরও অনেকদূর যেতে হবে। আমরা মৃতের স্মরণ এবং জীবীতদের জন্য লড়াই করতে চাই।
রানা প্লাজা ধসের পর বেশ কয়েকটি মামলা হলেও হত্যা ও ইমারত বিধি লঙ্ঘনের মামলা দুটিই প্রধান। দুই মামলায় ভবন মালিক মো. সোহেল রানা কারাগারে থাকলেও অধিকাংশ আসামি জামিনে বা পলাতক রয়েছেন।
দুটি মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১ জুন অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। হত্যা মামলার চার্জশিটে ভবন মালিক সোহেল রানা, তার বাবা-মা এবং সাভার পৌরসভার তৎকালীন মেয়র, কমিশনারসহ ৪১ জনকে আসামি করা হয়। আর ইমারত বিধি লঙ্ঘন মামলার চার্জশিটে আসামি করা হয় সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে। সোহেল রানাসহ ১৭ জন দুই মামলারই আসামি। তবে তিন আসামি এরই মধ্যে মারা গেছেন।
সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ১০ তলা রানা প্লাজায় ছিল বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা। ভবনটি ধসে পড়লে ওই সব কারখানার পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক চাপা পড়েন। কয়েক দিনের তৎপরতায় এক হাজার ১৩৬ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়। ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় দুই হাজার ৪৩৮ জনকে, যাদের অনেকে পরবর্তী সময়ে পঙ্গু হয়ে যান। ঘটনার পাঁচ দিন পর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে সোহেল রানাকে যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এমএন
