ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

Motobad news

একমাত্র উপার্জন করা ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারের সবাই দিশেহারা

একমাত্র উপার্জন করা ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারের সবাই দিশেহারা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

আমার স্বামীর মৃত্যুতে সন্তানদের নিয়া নিঃস্ব হয়ে গেলাম। পরিবারে আর কেহ উপার্জনের মানুষ না থাকায় ছেলে মেয়েদের দেখাশোনার কেউ রইলো না। মেয়েটি বারবার বাবা বাবা বলে কান্না করছে। 

এখন আমাদের সংসার চালানোর মত আর কেউ রইলো না। কান্না জড়িত কন্ঠে এভাবেই বলছিলেন গত ২০ জুলাই সকালে ঢাকার বাড্ডার শাহজাদপুর এলাকায় বিজিবির গুলিতে নিহত হওয়া কামাল হোসেন সবুজের (৩৮) স্ত্রী সাদিয়া বেগম রানু। 

তিনি আরও বলেন, ছেলে মেয়েদের নিয়ে ঝালকাঠি শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম। এখন আমাদের থাকার জায়গা নেই। আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই যাতে আমি ছেলে মেয়েদের নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি।

নিহত কামাল হোসেনের বড় ছেলে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া সামিউল ইসলাম (১৩) জানায়, আমার বাবার আয়ে আমাদের তিন ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চলতো। এখন আমাদের বাবা নেই আমাদের খরচ চালাবে কে! আমরা অসহায় হয়ে গেলাম। 

জানা যায়, গত ২০ জুলাই সকালে বাড্ডার শাহজাদপুর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে  নাস্তা খেতে বের হয়েছিলেন কামাল হোসেন সবুজ। এসয় হঠাৎ গুলি তাঁর মাথায় লাগলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। 

কামাল হোসেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল আই এর গাড়ি চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের বালকদিয়া গ্রামে। তিনি ওই এলাকার মুনসুর হাওলাদারের ছেলে। তার দুই ছেলে ও তিন বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।

গত ২২ জুলাই সকালে ঝালকাঠি সদরের আগরবাড়ি এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে কামাল হোসেনকে দাফন করা হয়। 

কামাল হোসেন সবুজের স্ত্রী সাদিয়া বেগম রানু বলেন, আমার স্বামী আমাকে বলে গেছেন, তিনি মারা গেলে তাঁকে যেন তাঁর জন্মস্থান বিনয়কাঠিতে মাটি না দিয়ে ঝালকাঠিতে তাঁদের কাছাকাছি কোথাও মাটি দেন। তাই তাঁকে আমার বাবার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে ঝালকাঠি সদরের আগরবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কামালের অবুঝ ছোট ছেলেটা বাবার চ্যানেল আইয়ের পরিচয়পত্রটি গলায় ঝুলিয়ে মায়ের পাশে বসে আছে। শিশুটি বার বার বলছে বাবা ফিরে আসবে। শিশুটির অপর দুই ভাই-বোন পাশে বসে কান্না করছে। 

কামালের স্ত্রীর ভাই রিপন হাওলাদার বলেন, খবর পেয়ে ঢাকায় গিয়ে লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসি। আমার বোনটি বিধবা হয়ে গেল। ওদের আহাজারি দেখে আমারা কান্না ধরে রাখতে পারছি না।

শনিবার ২০ জুলাই রাত সাড়ে সাতটায় ঢাকার বাড্ডা থেকে কামালের লাশ ঝালকাঠি সদর উপজেলার আগড়বাড়ি এলাকায় নিয়ে আসা হয়। রবিবার ২১ জুলাই সকাল সাড়ে আটটার আগড়বাড়ি বাজার মসজিদের সামনে জানাজার নামাজ শেষে সকাল নয়টার পশ্চিম আগড়বাড়ি জুম্মা কোবা মসজিদের কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন