একজন সরকারি কর্মকর্তার ১৭ টি বিয়ে, ১৭ জন স্ত্রী তার


কাজী মকবুল হোসেন, বিশেষ প্রতিবেদক:
একজন সরকারি কর্মকর্তার ১৭ টি বিয়ে। ১৭ জন স্ত্রী তার। তাদের অনেকেই চাকরিজীবী ও ধনাট্য পরিবারের। চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিয়ে করেছেন তিনি। এই ব্যক্তি কবির হোসেন পাটোয়ারী।তার বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলায়। সামাজিক বন সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি।
'একজন সরকারি কর্মকর্তার ১৭টি বিয়ে' এই খবরটা বরিশালসহ ঢাকার বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। খবরটা অনেকের কাছে মুখরোচক, তা কিন্তু নয়। খবরে স্ত্রীদের উপর বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন করা, চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আদায় করে নেওয়া, কখনো জমি-বাড়ি কিংবা ভবন লিখে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
স্ত্রীদের অনেকে মানসিক চাপ সইতে না পেরে নিরুপায় হয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দিয়েছেন।
কবির হোসেন পাটোয়ারী খুলনা থেকে বরিশালে বদলি হয়ে আসেন সামাজিক বন সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তা হিসেবে। তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১১ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত টিম আসে বরিশালের কাশিপুর কার্যালয়ে। অনেক স্ত্রী ও তাদের স্বজনরা এবং এলাকাবাসী ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করেন কার্যালয় প্রাঙ্গনে।
স্ত্রীদের অভিযোগের অনেক ঘটনা সত্য প্রমাণিত হয় তদন্ত টিমের কাছে। প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এটা নাকি তার তৃতীয়বারের মতো সাময়িক বরখাস্ত।
কবির হোসেন পাটোয়ারী খুলনা থেকে বরিশালে বদলি হয়ে আসেন। খুলনায় চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বিয়ে করেছেন তিনি ।
এদিকে স- প্রণোদিত হয়ে বরিশালের সরকারি সহকারি প্রসিকিউট(এপিপি) চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, ছল-চাতুরতা, যৌতুক ইত্যাদি উল্লেখ করে মামলা করেন গত ১৬ সেপ্টেম্বর।
তার অন্যত্র বদলি হওয়া ও বরিশাল আদালতে মামলা দায়ের করায় তিনি রাতে নিজের ও সরকারি বাংলোর মালামাল ট্রাকে ভর্তি করে চলে যাওয়ার সময় এলাকাবাসী অবরুদ্ধ করে রাখে। রাতেই থানা পুলিশ এসে কর্মকর্তাকে মালামালসহ তাদের হেফাজতে নিয়ে যান। একই দপ্তরের সদর উপজেলা কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধার করা লাখ লাখ টাকা না দিয়েই পালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
একজন সরকারি বড় কর্মকর্তা, ভালো বেতন, সুন্দর চেহারা,চমৎকার কথা বলার অধিকারী তিনি। যেকোন মানুষকে মন ভোলানোর কৌশল রপ্ত করা তার। তাই যেকোনো নারী সহজে আকৃষ্ট হয়ে গেছেন তার প্রতি। জেনে নেন নি তার ইতোপূর্বে বিয়ে আছে কিনা। কোন যাচাই-বাছাই করেন নি তারা বা তাদের পরিবার। যখন সংসার শুরু হয় তখন দিনে দিনে তার ছলচাতুরি ধরা পড়ে। তখন মুখ খুললেই তাদের উপর নেমে আসত জুলুম, অত্যাচার ও অমানুসিক নির্যাতন।
তার অন্যত্র বদলি হওয়া ও বরিশাল আদালতে মামলা দায়ের করায় তিনি রাতে নিজের ও সরকারি বাংলোর মালামাল ট্রাকে ভর্তি করে চলে যাওয়ার সময় এলাকাবাসী অবরুদ্ধ করে রাখে। রাতেই থানা পুলিশ এসে কর্মকর্তাকে মালামালসহ তাদের হেফাজতে নিয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে, একই দপ্তরের সদর উপজেলা কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধার করা লাখ লাখ টাকা না দিয়েই পালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
নারীর মন যেমন নরম আবার বিদ্রোহ করলে বারুদের আগুনের মতো জ্বলে ওঠে, সেটা বরিশালে এসে বুঝেছে ওই কর্মকর্তা। কোথা থেকে, কিভাবে তার স্ত্রীরা একত্রিত হয়েছেন, তা তিনি জানতেই পারলেন না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগকারী স্ত্রীদের অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য তাদেরকে বরিশালে একত্রিত করা হয়।
একজন কর্মকর্তা তিন- তিনবার সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পরেও তার চাকরি সেখানে কিভাবে থাকে? কেন তার বিরুদ্ধে একজন সরকারি সহকারী পাবলিক প্রসিকিউট কে স-প্রণোদিতভাবে আদালতে মামলা করতে হলো? সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন, তারা কেন ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি?
একাধিক বিয়ে করার জন্য তাকে একক ভাবে দায়ী করা যাবে না। যে নারীরা তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছে, তাদের এবং তাদের পরিবারের উপরেও দায়িত্ব বর্তায় তার সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা ও যাচাই-বাছাই করে নেয়ার। নারীর উচিত যার সাথে সারাজীবন ঘর সংসার করা হবে, তার সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে শুনে নেওয়া। অর্থের মোহে পড়ে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়াটা কাম্য নয়। তাই প্রবাদ আছে, " ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না "।
