ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

Motobad news

শয়তানের নিঃশ্বাস, নেই কোন বিশ্বাস

শয়তানের নিঃশ্বাস, নেই কোন বিশ্বাস
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

কাজী মকবুল হোসেন:  

''শয়তানের নিঃশ্বাস" এটা অপরাধ জগতের নতুন নামকরণ।এই চক্রের দৌরাত্ম্য বরিশাল সহ বিভিন্ন শহরে দিন দিন বাড়ছে।শয়তানের নিঃশ্বাস বলতে অজ্ঞান পার্টি রূপান্তরিত রূপ বোঝায়।শহর এলাকায় শয়তানের নিঃশ্বাস দলের সদস্যদের খপ্পরে পড়ে অনেক লোক বা পরিবার সর্বশান্ত হচ্ছে আর্থিক ও মানসিকভাবে।  এদের সদস্য হচ্ছে বিভিন্ন ছদ্মবেশি নারী ও পুরুষ। এরা চলন্ত বাসে, লঞ্চে, পথে-ঘাটে, বাসা -বাড়িতে গিয়ে এক ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করে তাদের কাছ থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে যায় বা স-উদ্যোগে দিতে বাধ্য হয়। এ ঘটনার শিকার লোক তার সম্পদ হারাচ্ছে অন্যদিকে নারীরা ভয় ভীতিতে নানা রোগে ভুগছে। 

শয়তানের নিঃশ্বাস হচ্ছে এক ধরনের অত্যাধুনিক ওষুধ যা রুমাল, টিস্যু পেপার বা হাতে লাগিয়ে তাদের টার্গেটকৃত ব্যক্তির নাক- মুখের সামনে দেয়।এতে তাৎক্ষণিকভাবে ওই ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং  তার হিতাহিত  জ্ঞান লোপ পায়।তখন এই চক্রের সদস্য যা বলে তাই সে করে। অর্থাৎ তার সাথে বা বাসার স্বর্ণালংকার ও টাকা যেখানে আছে সেখান থেকে দিয়ে দেয় চক্রের সদস্যকে। মুহূর্তের মধ্যেই তারা স্থান ত্যাগ করে। 

শয়তানের নিঃশ্বাস চক্রের সদস্য পুরুষ হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে লুঙ্গি, পায়জামা, পাঞ্জাবি ও মাথায় টুপি আর মহিলা হলে কখনো সুন্নতি বোরখা, হাত- পা মোজা আবার কেউ কেউ মর্ডান স্টাইলে আসে। তারা নরম সুরে কথা বলে থাকে। তারা পানি খাওয়ার কথা বলে, কখনো অসম্ভব গরমে অস্থির বলে কৌশলে  ঘরের ভেতরে ঢুকে। চক্রের সদস্যরা তাদের নির্ধারিত ওষুধ প্রয়োগ করে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে নেয়। তাদের কেউ ধরা না পড়া পর্যন্ত কারো বোঝার উপায় নেই যে তারা প্রতারক দলের সদস্য। 

শয়তানের নিঃশ্বাসের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে কিংবা কারও ১০ থেকে ১৬ ভরি স্বর্ণালংকার ও লাখ লাখ টাকা নিয়ে চম্পট দেওযার খবর প্রায় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে।

শয়তানের নিশ্বাস চক্রের সদস্যরা যে ওষুধ প্রয়োগ করে সেই সম্পর্কে একজন  বিশেষজ্ঞ ডাঃ তানভীর আহমেদ  বলেন," এটি স্কোপোলামিন নামক প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে তৈরি ট্রোপেন অ্যালকালয়েড"।  এটি মূলত গণিজনিত অসুস্থতা এবং অপারেশনের পর বমি বমি ভাব নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।এই ওষুধের অপব্যবহার  করে মানুষকে সম্মোহিত বা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করে নেয়া যায়। এমনকি তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত থাকলে মৃত্যু হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। 

সম্প্রতি বরিশাল নগরীর ধান গবেষণা রোডের জিয়া লেনের বাড়ির সামনে একজন বয়স্ক মহিলা সকাল সাড়ে ছয়টায় হাঁটতে বের হন। তখন এক যুবক ও একজন বয়স্ক পুরুষ তার সহযোগিতা চান। তখন বয়স্ক মহিলা এগিয়ে আসলে তাদের খপ্পরে পড়েন। তিনি বাসায় ঢুকলে সাথে সাথে ওই দুই ব্যক্তি ভেতরে ঢুকে যান।বয়স্ক মহিলার বাসায় থাকা ১৬ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৪৫ হাজার টাকা ওদের হাতে তুলে দেন।শয়তানের নিঃশ্বাস দলের সদস্যরা  তা নিয়ে উধাও হয়ে যায়।এই ঘটনার পর তার পরিবারের সদস্যরা সামাজিক নিরাপত্তার  দাবিতে বরিশাল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তারা বলেন, শয়তানের নিঃশ্বাস চক্রের খপ্পরে পড়ে নগরীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। এরা নারীদের বেশি টার্গেট করে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশের কোন পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি।সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন এইসব ঘটনার সাথে প্রভাবশালী মহলের মদদ,কোন কোন ব্যক্তির ছত্রছায়ায় থেকে  এবং পুলিশের নজরদারি না থাকায় দিন দিন এরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। 

সমাজে দুষ্ট লোক থাকবে, এ ধরনের চক্র তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে, নতুন নতুন কলা -কৌশলপ্রয়োগ করে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করবে এটাই স্বাভাবিক।এ সমাজে বসবাস করতে হলে আমাদের ও সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। রাস্তাঘাটে অপরিচিত কোনো পুরুষ বা মহিলার কথায় সাড়া না দেয়া, তাদের থেকে কোনো কিছু গ্রহণ না করা,  কোনো প্রকার সহায়তায় এগিয়ে না আসা। এসব ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। যে ওষুধ দিয়ে মানুষকে মুহূর্তের মধ্যে বশ করা যায়, তা যেন কোনো ওষুধের দোকান বা কোথাও বিনা প্রেসক্রিপশনে বিক্রি করতে না পারে, সে ব্যাপারে ওষুধ প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। ওষুধটা সহজলভ্য হওয়ায় এই চক্রটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এই চক্রের কর্মকাণ্ডের প্রতি পুলিশী  নজরদারি বাড়ানো উচিত।আপনার- আমার সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে ওরা ও নিস্তব্ধ হয়ে পড়বে। আমরা নিরাপদে নিশ্চিন্তে  এই সমাজে বসবাস করতে পারবো। সুন্দর সমাজ গড়ে উঠুক এমনটাই প্রত্যাশা হোক আমাদের।


গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন