ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

Motobad news

ইসলামেই আসবে সত্যিকারের মুক্তি : চরমোনাই পীর

ইসলামেই আসবে সত্যিকারের মুক্তি : চরমোনাই পীর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরিশালে শুরু হয়েছে চরমোনাই ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক মাহফিল। বুধবার (২৬ নভেম্বর) বাদ জোহর চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের উদ্বোধনী বয়ানের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী অগ্রহায়ণের এই মাহফিল শুরু হয়েছে।

ব্যক্তি জীবনের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় জীবনকে ইসলামের আলোকে পরিচালিত করলেই সত্যিকারের মুক্তি আসবে উল্লেখ করে উদ্বোধনী বয়ানে চরমোনাই পীর বলেন, আল্লাহর সৃষ্টি মানুষকে আল্লাহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও কাজ দিয়ে। মানুষ সেই দায়িত্ব পালন করে কি না, তার জন্য দুনিয়া একটি পরীক্ষাকেন্দ্র। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মধ্যেই মানুষের সফলতা-ব্যর্থতা নির্ভর করে।

তিনি বলেন, চরমোনাইর মাহফিলের কোনো দুনিয়াবি উদ্দেশ্য নেই বরং আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করে দেওয়ার জন্যই এই তরিকার সব কার্যক্রম। আল্লাহ ভোলা মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত করাই এই মাহফিলের একমাত্র লক্ষ্য।

সতর্ক করে চরমোনাই পীর বলেন, এখানে দুনিয়াবি কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আসার প্রয়োজন নেই। যদি এমন কেউ এসে থাকেন, তবে নিয়ত পরিবর্তন করে আত্মশুদ্ধির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন, দুনিয়ার মোহ-ই সব অন্যায়ের কারণ।


চরমোনাই মাদ্রাসার মূল মাঠসহ পাশের আরেকটি মাঠ নিয়ে অনুষ্ঠিত চরমোনাইর বার্ষিক দুটি মাহফিলের অগ্রহায়ণের মাহফিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে চরমোনাই পীর আরও বলেন, যারা চরমোনাইয়ে নতুন এসেছেন, তারা দুনিয়ার ধ্যান-খেয়াল বিদায় করে দিয়ে আখিরাতের খেয়াল-ধ্যান অন্তরে জায়গা দেন। দিল থেকে বড়ত্ব এবং আমিত্ব ভাব বের করে দিয়ে আল্লাহর নির্দেশিত রাস্তায় নিজেকে বিলীন করে দিতে হবে। সদা সর্বদা আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে দিলকে তরতাজা রেখে আল্লাহর ওলি হয়ে চরমোনাই থেকে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।

উদ্বোধনী বয়ান শেষে মাহফিলের নিয়মকানুন সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা করেন চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম।

এর আগে বুধবার সকাল ৮টা থেকে মাহফিলে আগত মুসল্লিদের কয়েক হাজার হালকায় বিভক্ত করে হাতে-কলমে সালাত ও ইসলামের বুনিয়াদি বিষয়ে বাস্তব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মাহফিলের তিন দিনই এই কার্যক্রম চলবে।

মাহফিলে আগত মুসল্লিদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট স্থায়ী মাহফিল হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এতে ১৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে আরও ৪০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসাসেবা পরিচালিত হচ্ছে। ১০টি অ্যাম্বুলেন্স ও দুটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স মাহফিল হাসপাতালে কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীকে তাৎক্ষণিক মাহফিল হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য নিযুক্ত রয়েছে বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।

দুটি মাঠে মাহফিলের শৃঙ্খলা রক্ষায় নিযুক্ত করা হয়েছে বিশাল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর স্পেশাল টিম। হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি বা বস্তু খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রতিটি মাঠেই রয়েছে হারানো ক্যাম্প। যে কিছু কুড়িয়ে পেলে এখানে জমা দিয়ে দেন আবার কেউ কিছু হারিয়ে ফেললে এখানে খোঁজ নেন।

সারা দেশ থেকে আগত মুসল্লিদের খাবারের জন্য সব মাঠের চারদিকে সুপেয় নিরাপদ পানির ব্যবস্থাসহ রয়েছে সহস্রাধিক মানসম্মত টয়লেট, অজু এবং গোসলের ব্যবস্থাপনা।

তিন দিনব্যাপী বিশাল এ মাহফিলের প্রথম দিন তথা বুধবার বাংলাদেশ কোরআন শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দিন সারা দেশ থেকে আগত ওলামায়ে কিরামদের নিয়ে ওলামা সম্মেলন ও শেষদিন সকালে সারা দেশ থেকে আগত ছাত্র-জনতাকে নিয়ে ছাত্র গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে।

এ ছাড়া মাহফিলে আগত যুবক, শ্রমিকদের নিয়ে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ এবং ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজন করে বিশেষ মতবিনিময় সভা। আগামী ২৯ নভেম্বর শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় হজরত পীর সাহেব চরমোনাইর আখেরি বয়ানের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী বিশাল এ মাহফিলের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।

উল্লেখ্য, চরমোনাই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৪ ঈসায়ী সালে। চরমোনাই মাহফিল ও দরবারের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা সৈয়দ এছহাক (রহ.)। তার ইন্তেকালের পর ১৭৭৭ সাল থেকে এ দরবারের জিম্মাদারি পালন করেন মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.)। ২০০৬ সালে তার ইন্তেকালের পর এখন পর্যন্ত আমিরুল মুজাহিদীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আলহাজ হজরত মাওলানা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই।
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন