ভোটের মাঠে চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা ইসির, কঠোরভাবে দমনের নির্দেশ

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে দুষ্কৃতকারীদের গুলির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই সঙ্গে সংস্থাটি ভোটের মাঠে এমন চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা করে তা কঠোরভাবে দমনের নির্দেশ দিয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ইসির এক জরুরি বৈঠকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে বৈঠকটিতে চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। অংশ নেন স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিজিবির প্রধান, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার প্রমুখ।
ইসি জানায়, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ রেখে গত বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহিংস রূপ নিচ্ছে। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিদ্ধান্তে আসতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আজকের বৈঠক হয়। এতে ভোট নিয়ে কোনো ধরনের শঙ্কা নেই জানিয়ে সাংবিধানিক সংস্থাটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে বলেছে, যারা ভোট বানচালের চেষ্টা করবেন, তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।
বৈঠক শেষে সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকটি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই পর্যন্ত উদ্ভূত বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। সামনে আমাদের কার্যক্রম এবং কৌশল কী হওয়া উচিত, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদের বিভিন্ন মত শুনেছি।’
নির্বাচন কমিশনার উল্লেখ করেন, শরিফ ওসমান হাদির ঘটনাটি সবাইকে উদ্বিগ্ন করেছে। তার ওপর চালানো চোরাগোপ্তা হামলা নিয়ে বৈঠকে বিশদ আলোচনা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তারা বিস্তারিত বলছেন না। এতে যে জড়িত তাকে শনাক্ত করা হচ্ছে।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, এই চোরাগোপ্তা হামলা কি কোনো বড় পরিকল্পনার অংশ, না কি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, সেখানে কোনো ব্যর্থতা আছে কি না- এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক ধরনের মূল্যায়ন হয়েছে। এছাড়া দুটি উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো প্রচেষ্টা হয়েছে। এখান থেকে একটি ধারণা পাওয়া যায় যে চোরাগোপ্তা হামলার সম্ভাবনা আছে। আমরা এগুলোকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। সামনেও যে এর সম্ভাবনা নেই তাও বলছি না। তো আজকের মূল উদ্দেশ্য ছিল, যাতে করে এই ধরনের হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে বা এগুলো যাতে কঠোর হস্তে দমন করা হয়। সে ধরনের ঘটনা ঘটলে তারা (জড়িতরা) যেন ধরা পড়ে, সে বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
পাশাপাশি একটি বার্তা সব বাহিনীর পক্ষ থেকে সমস্বরে এসেছে- যারাই এই নির্বাচন বানচাল, প্রতিহত বা ক্ষতিগ্রস্ত করার কোনো চেষ্টা করবেন, তারা ব্যর্থ হবেন। যেখানে যতটুকু দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন সব বাহিনী ততটুকু দৃঢ় হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বার্তা খুবই পরিষ্কার- নির্বাচন নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই। নির্বাচন সময়মতো হবে এবং নির্বাচনের পথে এই ধরনের যে বাধাগুলো তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে এগুলো সম্বন্ধে নির্বাচন কমিশন অবহিত, সরকার অবহিত। আজকে আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি। সরকার তথা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব কার্যক্রম এ পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে যেসব জায়গাতে আরও অধিকতর কাজ করার অবকাশ আছে, সেগুলো নিয়েও কথা হয়েছে,’ যোগ করেন নির্বাচন কমিশনার।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযান অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হওয়ার পর থেকে যেসব সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের একটি বড় সংখ্যা এরই মধ্যে জামিন পেয়ে গেছেন। তারা সমাজে বিরাজ করছেন। এ বিষয়ে কী করণীয়, সেটি নিয়েও কথা হয়েছে বৈঠকে।
এইচকেআর