মাথায় বালিশ ঠেকিয়ে গুলি, কাটা হতো পেট, এরপর ফেলে দেওয়া হতো নদীতে

প্রথমে মাথা বা বুকে বালিশ ঠেকিয়ে চালানো হতো গুলি। মারা গেলে ছুরি দিয়ে কেটে ফেলা হতো পেট। এরপর মাথা আর পায়ে সিমেন্টের ব্লক বেঁধে ডুবিয়ে দেওয়া হতো নদীতে। রাখা হতো না হত্যাকাণ্ডের কোনো আলামত।
আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম হওয়া বহু মানুষের লাশ এভাবেই হারিয়ে গিয়েছিল নদীর গভীরে। ক্রসফায়ার আর বনদস্যু দমনের আড়ালে বছরের পর বছর গুম-খুনের শিকার হন অনেক নিরপরাধ লোক। পরিকল্পিত উপায়ে এসব হত্যাযজ্ঞ চললেও মুখ খোলার সাহস ছিল না কারো।
তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর ফাঁস হতে থাকে এসব ঘটনা। বেশিরভাগ ঘটনারই মুখ্য চরিত্র হিসেবে সামনে আসে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের নাম। যিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় নিজেকে জড়িয়েছেন গুম-খনের বহু অপরাধে।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অনেক গুম-খুনের অভিযোগ এনেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে শতাধিক মানুষকে গুম-খুনের দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তার বিরুদ্ধে জমা দেওয়া হয়েছে ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ)। গত ১৭ ডিসেম্বর এ অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। অভিযোগ গঠন নিয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয় ২১ ডিসেম্বর (রোববার)। তবে এদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করার কথা থাকলেও কারাগারে আদেশ না পৌঁছায় জিয়াউল আহসানকে হাজির করতে পারেনি কারা অধিদপ্তর। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে তাকে ২৩ ডিসেম্বর হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
তথ্য বলছে, মেজর পদে থাকতে ২০০৯ সালে জিয়াউল আহসানের পোস্টিং হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাবে। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুগত হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি। সেই সুবাদে মেজর জেনারেল হিসেবে বাধ্যতামূলক অবসরের আগ পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে আর কখনো ফেরত যেতে হয়নি তাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন বাহিনী বা সংস্থায় কাজ করে কাটিয়ে দিয়েছেন নিজের কর্মজীবন। এমনকি কোনো ব্যাটালিয়ন, ব্রিগেড বা ফরমেশন কমান্ডের অভিজ্ঞতা ছাড়াই পদোন্নতি পেয়েছেন মেজর জেনারেল পদে।
২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল। এই সময়ে র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক ও এডিজি (অপস্) হিসেবে কর্মরত ছিলেন জিয়াউল আহসান। প্রায় আট বছর দায়িত্বে থাকাকালে অসংখ্য গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছেন তিনি। নির্দেশ পেয়ে র্যাবে থাকা তার অনুগতরাও বহু হত্যা-গুমসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।
গাজীপুরে চারজনকে হত্যা
জিয়াউল গংদের গুরুতর অপরাধের একটি ঘটনা ছিল গাজীপুরের। ২০১১ সালের ১১ জুলাই রাত সাড়ে ১১টায় র্যাব সদর দপ্তর থেকে হেফাজতে থাকা সজলসহ চারজন বন্দিকে নিয়ে রওনা হন র্যাবের তৎকালীন গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক জিয়াউল। সঙ্গ দেন তার একনিষ্ঠ র্যাব সদস্যরা।
র্যাব সদর দপ্তর থেকে বের হয়ে টঙ্গী হয়ে ঢাকার বাইপাস রোড ধরে সামনের দিকে যেতে থাকেন তারা। কিছু দূর যাওয়ার পর গাড়ি থেকে নামেন জিয়াউলসহ অন্য কর্মকর্তারা। চোখ-হাত বাঁধা এক বন্দিকে নামানো হয়। মুহূর্তেই তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন জিয়াউল। এরপর ফের গাড়িতে উঠে সামনে অগ্রসর হন। কিছুক্ষণ পর একটি বড় সেতুর ওপর গাড়ি থামিয়ে চোখ-হাত বাঁধা আরেকজন বন্দিকে নামিয়ে আনেন অধস্তন কর্মকর্তারা। এবার নিজে গুলি না চালিয়ে সঙ্গে থাকা এক র্যাব কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন জিয়াউল। তিনি গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানালে রাগ করেন জিয়াউল এবং নিজেই ওই বন্দিকে হত্যা করেন। একই পদ্ধতিতে তৃতীয়জনেরও প্রাণ নেওয়া হয়। জিয়াউলের নির্দেশে চতুর্থ বন্দিকে হত্যা করেন গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা।
হত্যার পর চারজনের লাশই সড়কের পাশে খালের মতো গর্তে ফেলে দেওয়া হয়। দুই-তিনদিন পর ঢাকার বাইপাস সড়কের পাশ থেকে গুলিবিদ্ধ দুটি বেওয়ারিশ লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর জেলা পুলিশ। এরপর গাজীপুর সদরের এক জলাভূমি থেকেও একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। অপর একজনের মরদেহ পাওয়া যায়নি। পুলিশি তদন্তে নিহত একজনকে শনাক্ত করা গেলেও বাকিদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির নাম সজল। অজ্ঞাত দুজনকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে পুলিশ।
বরগুনায় বলেশ্বর নদীতে অন্তত ৫০ জনকে হত্যা
ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, বরগুনার বলেশ্বর নদীতে হত্যা করা হয় অন্তত ৫০ জনকে। হত্যাযজ্ঞের অন্যতম স্পট ছিল এই নদী। এ জেলার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের চরদুয়ানী খাল ঘেঁষে বয়ে গেছে বলেশ্বর নদীর বিভিন্ন মোহনা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনানুযায়ী, এ ধরনের অপারেশনের সময় গভীর রাতে সড়কপথে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া হয়ে গাড়ি নিয়ে চরদুয়ানী বাজারে আসতেন র্যাব সদস্যরা। তাদের আসার আগে বিকেল থেকেই সাদা পোশাকে র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রাত ৯টার মধ্যে স্থানীয় দোকানপাট বন্ধের তাগিদ দিতেন। সব ধরনের বাতি নিভিয়ে ফেলার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘর থেকে বের না হওয়ার হুকুম জারি করতেন। ফলে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসত এলাকায়।
রাত ১১টার পর কালো গ্লাসের মাইক্রোবাস, জিপ, ডাবল কেবিন পিকআপসহ বিভিন্ন গাড়িবহরে সাদা পোশাকে আসতেন র্যাবের সদস্যরা। তাদের সঙ্গে সবসময় এক-দুজন বন্দি থাকতেন। কখনো বন্দির সংখ্যা বেশি হতো। তাদের প্রত্যেকের মুখ ও হাত গামছা বা দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকত। কালো কাপড়ে মাথা ঢাকা থাকায় তাদের চেনার বা পরিচয় জানার সুযোগ ছিল না। এসব বন্দিকে ট্রলার বা বোটে উঠিয়ে মাঝ নদীতে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে চলন্ত বোটে মাথা বা বুকে বালিশ ঠেকিয়ে পিস্তল দিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হতো। এরপর ছুরি দিয়ে তাদের পেট কেটে ফেলা হতো।
একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তির শরীরে তথা মাথা ও পায়ে সিমেন্টের ব্লক বেঁধে নদীর পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হতো। হত্যাযজ্ঞ শেষে ট্রলার বা বোটের ডেকের ওপর জমা হওয়া রক্তসহ সব চিহ্ন ব্রাশ দিয়ে ঘষে ধুয়ে পরিষ্কার করতেন তারা। এভাবে হত্যার পর লাশ গুমের প্রক্রিয়াকে কোডনেম হিসেবে ‘গেস্টাপো’ বা ‘গলফ’ হিসেবে আখ্যায়িত করতেন তারা। তবে স্থানীয়রা আঞ্চলিক ভাষায় বলতেন ‘ডোবানো’।
সেখানকার উল্লেখযোগ্য দুটি ঘটনার একটি সাবেক বিডিআর সদস্য নজরুল ইসলাম মল্লিক হত্যাকাণ্ড এবং অপরটি আলকাছ মল্লিক গুম ও হত্যাকাণ্ড। সেখানে এই দুজনসহ বিভিন্ন সময় অন্তত ৫০ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে উঠে এসেছে।
র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রেখে এসব অপারেশন চালানো হতো বলে উঠে এসেছে তদন্তে। ভুক্তভোগীদের নাম র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ ও স্থানীয় ব্যাটালিয়নে জিয়াউল আহসানের অধীন অতিবিশ্বস্ত গুটিকয়েক ব্যক্তি ছাড়া কেউ জানতেন না। এ ছাড়া যারা এসব অপারেশনে অংশ নিতেন, তাদের প্রতিও ছিল কড়া নির্দেশনা। মুখ খুললে তাদেরও বন্দিদের মতো একই পরিণতির হুমকি ছিল।
বরগুনার মতো ঢাকার অদূরে বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যায়, চট্টগ্রামের কর্নফুলী নদীর মোহনা ও পতেঙ্গা উপকূলবর্তী বঙ্গোপসাগরেও একই পদ্ধতিতে অপারেশন চালানো হয়। এ ধরনের অপারেশনের বেশ কয়েকটিতে সশরীরে অংশ নেন জিয়াউল। বহু হত্যাকাণ্ডে তার নির্দেশে র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা বা নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্য ব্যাটালিয়নের বাছাই করা সদস্যরা থাকতেন।
সুন্দরবনে বনদস্যু দমনের নামে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ
বাগেরহাটের শরণখোলা থানা এলাকায় সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে তথাকথিত বনদস্যু দমনের আড়ালে চালানো হয় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ।ট্রাইব্যুনালে আনা অভিযোগে বলা হয়, সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে বনদস্যুদের চরম উৎপাত ছিল। এসব বনদস্যু দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য ইউনিটের মতো র্যাবও অভিযান চালাত। তবে অভিযানের ছদ্মাবরণে সুন্দরবন এলাকায় নিজের কিলিং মিশনের অভয়ারণ্য গড়ে তোলেন জিয়াউল। তার অপরাধ সংঘটনের সহযোগী হিসেবে সিনিয়র-জুনিয়র অফিসারের নামও উঠে এসেছে তদন্তে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের হত্যাকে বৈধতা দেওয়ার লক্ষ্যে এই মিশন চালাতেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। পরিচিত বনদস্যুদের ধরে গুম থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে গভীর রাতে ট্রলারে করে বলেশ্বর নদী হয়ে সুন্দরবনের পূর্বনির্ধারিত নিজেদের সাজানো কথিত বনদস্যুদের আস্তানায় নিয়ে যেতেন তিনি। বনদস্যুদের আস্তানা প্রমাণে আগে থেকেই ঘর বানিয়ে হাড়ি-পাতিল, লুঙ্গি-গামছা, চাল-ডাল ইত্যাদি সরঞ্জাম রেখে আসত র্যাব। এরপর ভাগ্যাহত ভুক্তভোগীদের নির্ধারিত ওই স্থানে চোখ, হাত-পা বেঁধে হত্যা করা হতো। হত্যার পর এলোপাতাড়ি গুলির মাধ্যমে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজানো হতো।
অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযানের সঙ্গে সাক্ষী গোপাল হিসেবে নেওয়া হতো কিছু অনুগত সাংবাদিককে। তাদের ঘটনাস্থলে না নিয়ে দৃষ্টিসীমার বাইরে ক্রসফায়ারের নামে ভুক্তভোগীদের হত্যা করা হতো। অপারেশন শেষ হলে এসব সাংবাদিককে ঘটনাস্থলে নিয়ে নিজেদের মনমতো ঘটনার বর্ণনা দিতেন জিয়াউলরা। আর লাশ আগেই হোগলা দিয়ে পেঁচিয়ে বাগেরহাটের শরণখোলা বা বরগুনার পাথরঘাটা থানায় জমা দেওয়া হতো।
দস্যু নিধনের নামে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগে থেকে আটক রাখা নিরপরাধ বন্দিদের হত্যা করা হতো। বেশিরভাগ অভিযানে জিয়াউল নিজেই অংশ নিতেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার প্রত্যক্ষ নির্দেশ ও তত্ত্বাবধানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতেন র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা বা র্যাবের স্থানীয় ব্যাটালিয়ন। এসব ক্ষেত্রে মূলত র্যাব-৮ (বরিশাল বিভাগ) ও র্যাব-৬ (খুলনা বিভাগ)-এর বাছাই করা সদস্যদের দিয়ে অভিযান চালানো হতো।
এ এলাকায় অসংখ্য অপারেশনের মধ্যে জিয়াউলের চালানো উল্লেখযোগ্য তিনটি অভিযান হলো– অপারেশন নিশানখালী (মাসুদ ও মান্নান হত্যা), অপারেশন মরা ভোলা (জিহাদ, সোহাগ, আলামিন, আসাদ ও বেলাল হত্যা) এবং অপারেশন কটকা (শিশির কুমার মণ্ডল ওরফে মন্টু মেম্বার, বাচ্চু ও জমাল মুনসি ওরফে জামালসহ মোট আট হত্যা)। সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে তিনটি অপারেশনে শনাক্ত করা এসব ব্যক্তি ছাড়াও ৫০ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
ফরমাল চার্জে এই তিনটি অভিযোগ আনা হয়। অর্থাৎ গাজীপুরের সদরের পুবাইলে সড়কের পাশে সজলসহ তিন হত্যা, বলেশ্বর নদীর মোহনায় নজরুল, মল্লিকসহ ৫০ জনকে হত্যা ও সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে তথাকথিত বনদস্যু দমনের আড়ালে মাসুদসহ ৫০ জনের জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেওয়া। সুনির্দিষ্ট এই তিন অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন বিচারের মুখোমুখি সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান।
একশর বেশি মানুষকে গুমের পর হত্যার প্রমাণ রয়েছে
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে তিনটি মূল অভিযোগে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে। যেখানে একশর বেশি মানুষকে গুমের পর হত্যার প্রমাণ রয়েছে। এ ছাড়া তিন থেকে পাঁচ শতাধিক মানুষকে গুম-হত্যার তদন্ত চলছে তার বিরুদ্ধে। তার সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত। তাদের বিরুদ্ধেও আলাদা আলাদা চার্জ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, জিয়াউলসহ তাদের কাজই ছিল রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বী মানুষকে গুমের পর বিভিন্নভাবে হত্যা করা। একটা পর্যায়ে এসব হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দিতে এক ধরনের নাটক মঞ্চায়ন করা হতো। এসব বাস্তবায়নের মাস্টারমাইন্ড বা মহানায়ক ছিলেন জিয়াউল আহসান। তার নিষ্ঠুরতা ও হত্যাকাণ্ডের ধরন বা পরিমাণ বাংলাদেশের আর কারো সঙ্গে তুলনীয় নয়। এমন বীভৎস-নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কারণে একক আসামি হিসেবে তার বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করেছি।
তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনীতে পদোন্নতি পেতে পেশাগত জীবনে কিছু দক্ষতা দেখাতে হয়। অর্থাৎ কোনো ইউনিট বা ব্রিগেড কমান্ড করেছেন কি না কিংবা কোনো ফরমেশন কমান্ডার ছিলেন কি না, পদোন্নতির ক্ষেত্রে এসব বিবেচনা করা হয়। অথচ মেজর থেকে মেজর জেনারেল পদের মাঝে কোথাও ছিলেন না জিয়াউল। তবুও তাকে সেনাবাহিনীর বাইরে রেখে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তিনি র্যাব, এনএসআই ও এনটিএমসিতে ছিলেন। এসব জায়গায় থেকেই পদোন্নতি পেয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে সেনাবাহিনীতে গিয়ে এসব পদ পেতে হয়। কিন্তু গুম-খুনে দক্ষতার কারণে পুরস্কৃত করতে এভাবে নিয়ম ভেঙে তাকে পদোন্নতি দিয়েছেন তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।