ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

Motobad news

তারেক রহমান এলেন, নেতাকর্মীদের আবেগে ভাসালেন

তারেক রহমান এলেন, নেতাকর্মীদের আবেগে ভাসালেন
লাল-সবুজ বাসে করে বিমানবন্দর থেকে জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়েতে তৈরি সংবর্ধনা মঞ্চে যাচ্ছেন তারেক রহমান
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশের মাটিতে পা রেখেছেন তারেক রহমান। এতে শুধু তার পরিবার ও দলের নয়, সমগ্র রাজনৈতিক অঙ্গনের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র আবেগ, আশা ও প্রত্যাশার স্রোত। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর থেকেই লাখো নেতাকর্মী-সমর্থকের মাঝে সৃষ্টি হয় উচ্ছ্বাস আর আবেগঘন পরিস্থিতি।

এই আবেগঘন দৃশ্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ব্যক্তিগত সংগ্রাম, যা শুধু তারেক রহমানের জীবনের গল্প নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনীতির এক জননেতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

রাজনৈতিক জীবনে প্রবল আলোচিত ব্যক্তিত্ব সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। ২০০৭-০৮ সালের রাজনৈতিক উত্তেজনার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি পরিবারের সঙ্গে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান, যা পরে দীর্ঘ নির্বাসনে পরিণত হয়।

রাজনৈতিক দল ও সমালোচকরা বলছেন, তখনকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচারিক চাপ তাকে বিদেশে থাকতে বাধ্য করেছিল। সেই সময়ের সরকারকে কিছু মহল সামরিক-সহায়তায় পরিচালিত বলে অভিহিত করেছিল, আর বিএনপি নেতারা দাবি করেছিলেন তাকে রাজনৈতিক কারণে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।

শুরুতে তিনি মাত্র কিছু মাসের জন্যই দেশ ছেড়েছিলেন। কিন্তু সেই সাময়িক প্রস্থান ধীরে ধীরে ১৭ বছরের দীর্ঘ নির্বাসনে পরিণত হয়, নিজেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে হতে হয় লন্ডন থেকে।

নির্বাসনে অবস্থানের সময়েও তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্বে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন এবং দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। বিএনপি তাকে দলের ভবিষ্যৎ নেতা ও সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দেখেছে।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা ও অভিযোগ ছিল, কিছু অভিযোগে আদালতে তার অনুপস্থিতিতে সাজা প্রদান করা হয়েছিল। তবে সেসব মামলা ও অভিযোগ বাদ পড়েছে। যার প্রেক্ষিত্রে আবারও প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে আসার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।

তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে যেন এক বিশাল আবেগের তরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দেশের মাটিতে পা দেওয়ার অনেক আগেই বিমানবন্দর এলাকা ও শহরের বিভিন্ন জায়গায় লাখো নেতাকর্মী তাকে দেখতে, অভিবাদন জানাতে জড়ো হন।

অনেকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। নেতাকর্মীদের ভাষায়, আজকের দিনটি এমন আবেগে ভরা যে, মনে হয় দীর্ঘদিনের অপেক্ষা আজ পূর্ণ হলো। তাদের মতে, তার এই প্রত্যাবর্তন শুধু একটি রাজনৈতিক অভিযান নয়, বরং একটি আস্থা ও পুনর্জাগরণের প্রতীক। তার ফিরে আসা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পথকে শক্তিশালী করবে এবং আগামী ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে দলের শক্তি আরও দৃঢ় করবে।

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী হতে ঝিনাইদহ থেকে ৩০০ ফিটে ছুটে এসেছেন মনির হোসেন। আবেগজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আজকের দৃশ্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায়। এটি নেতার দীর্ঘ নির্বাসনের পর দেশপ্রেমে উজ্জ্বল প্রত্যাবর্তন।

তিনি বলেন, আজ তিনি শুধু একটি বিমানের যাত্রী হিসেবে নন, তিনি ফিরে এসেছেন একটি নতুন প্রত্যাশার প্রতীক হয়ে, নেতাকর্মীদের হৃদয়ে নতুন করে জীবন্ত হয়ে। এতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশ যেন নতুন আলোয় আলোকিত হয়েছে।

সুমি আক্তার নামের আরেকজন বলেন, আমি এখানে তারেক স্যারকে স্বাগত জানাতে এসেছি। নেতার উপস্থিতি আমাদের জীবনে নতুন উদ্দীপনা যোগ করেছে। তার ফেরার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারছি, যে দীর্ঘদিনের সংগ্রাম শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে। এই অনুভূতি প্রকাশের ভাষা আমার কাছে নেই।

খুলনা থেকে আসা জহিরুল ইসলাম বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য ইতিহাসের এক স্বর্ণালী অধ্যায়। দীর্ঘ নির্বাসনের পর নেতা যখন দেশে ফিরে আসেন, তখন সাধারণ মানুষও তা কেবল নেতার নয়, দেশের জন্যও একটি বিজয় মনে করে। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন আমাদের আবার একত্রিত করেছে এবং দলকে নতুন শক্তি দিয়েছে।


ঢাকার বাড্ডার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, তারেক রহমানের ফিরে আসা আমাদের জন্য শুধু রাজনৈতিক ঘটনা নয়, এটি একটি আস্থা ও পুনর্জাগরণের প্রতীক। আমরা বহু দিন ধরে এই মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলাম। আজ তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন, তাই মনে হচ্ছে বিএনপির শক্তি আরও দৃঢ় হবে এবং দেশের গণতন্ত্রের পথ শক্তিশালী হবে।

এর আগে এদিন সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমানটি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে যাত্রাবিরতির পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাটি স্পর্শ করে। বিমানবন্দরে তারেক রহমানকে স্বাগত জানান দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এসময় তিনি নেতাদের সঙ্গে কোলাকুলি ও কুশলবিনিময় করেন এবং উপস্থিত সবার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।

এরপর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লাল-সবুজ বাসে করে ৩০০ ফিট এলাকার গণসংবর্ধনা মঞ্চের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এদিকে তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট পর্যন্ত সড়কের দুপাশে জড়ো হয়েছেন অগণিত নেতাকর্মী। তারেক রহমানও বাসের সামনে ও পাশে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে দলের নেতাকর্মী ও সর্বসাধারণের উদ্দেশে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন