ঢাকা শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news

খাঁচায় ভরে ২ শিশুকে আ’লীগ নেতার নির্যাতন

খাঁচায় ভরে ২ শিশুকে আ’লীগ নেতার নির্যাতন
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

কক্সবাজারের রামুতে দেড়শ টাকা চুরির অভিযোগে দুই শিশুকে মুরগির খাঁচায় বন্দি করে ইলেকট্রিক শক ও জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন করেছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) রামু উপজেলার পাহাড়ি জনপদ ঈদগড় ইউনিয়নের ঈদগড় বাজারের একটি মুরগির দোকানে এ ঘটনা ঘটলেও সোমবার (৫ জুলাই) একটি ভিডিও প্রকাশের মাধ্যম তা প্রকাশ পায়।

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা রিফাত করিম (৩২) ঈদগড় ৪নং ওয়ার্ডের মো. শরিফ পাড়ার নেজাম উদ্দীন ছেলে।

নির্যাতনের শিকার দুই শিশু ঈদগড় ৪নং ওয়ার্ডের মো. শরিফ পাড়া এলাকার প্রতিবন্ধী মো. নুরুল আলম ছেলে সোহেল (১০) ও রশিদ আহমদের ছেলে ইব্রাহিম (১০)।

এদিকে, এখন পর্যন্ত কোনো আইনি সহায়তা পাননি ভুক্তভোগীরা। যদিও পুলিশের দাবি, মামলা করতে রাজি হচ্ছে না ভিকটিমের পরিবার।

অভিযোগ উঠেছে, মাত্র দেড়শ টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে ঈদগড় ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. রিফাত দুই শিশুকে খাঁচায় বন্দি করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেন। এসময় সোহেল এবং ইব্রাহিম নামের ওই শিশুদের শরীরে ইলেকট্রিক শক ও জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। নির্যাতনের একটি ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

নির্যাতনের শিকার শিশু ইব্রাহিম জানায়, তাদেরকে খাঁচায় বন্দি রেখে শরীরের বিভিন্ন অংশে ইলেকট্রিক শক ও জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দেন আওয়ামী লীগ নেতা রিফাত।

এ বিষয়ে ঈদগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ ভুট্টো জানান, ঈদগড় বাজারে আওয়ামী লীগ নেতা রিফাত করিমের একটা মুরগির দোকান আছে। সেখানে পেটের দায়ে দুইবেলা ভাতের বিনিময়ে কাজ করে শিশু সোহেল। ওই দোকান থেকে মাত্র দেড়শ টাকা চুরির অভিযোগে শিশু সোহেল ও তার বন্ধু ইব্রাহিমকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা দশ ঘণ্টা মুরগির খাঁচায় বন্দি রেখে শত শত মানুষের সামনে নির্যাতন করেন রিফাত।

তিনি জানান, এক পর্যায়ে স্থানীয় কয়েকজন শিশুদের ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলে তাদের ওপরে হামলা চালায় অভিযুক্ত ও তার লোকজন।

অভিযোগ স্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা রিফাত করিম বলেন, শিশু সোহেল খুব গরীব ঘরের সন্তান, তার মা বোবা আর বাবা বধির। এ কারণে সে আমার দোকানে ব্যবসা শিখতে চাওয়ায় আমি তাকে সুযোগ করে দিয়েছি। কিন্তু সে দোকান থেকে টাকা চুরি করে তার চাচাতো ভাই ইব্রাহিমকে জমা দিয়েছে বলে আমার সন্দেহ হয়। এর প্রেক্ষিতে তাদেরকে ধরে এনে খাঁচায় ঢুকিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি। এক পর্যায়ে সোহেল তিনশ টাকা চুরি করেছে বলে স্বীকার করে।

এসময় শিশুদের ইলেকট্রিক শক ও জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়ার কথা অস্বীকার করে অভিযুক্ত রিফাত বলেন, ওইদিন আমাকে কয়েকজন মিলে মারধর করে। এজন্য আমি এখন হাসপাতালে ভর্তি আছি।

এদিকে, নির্যাতিত শিশুদের পক্ষ থেকে মামলা করতে চেষ্টা করা হলে আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী নেতার হস্তক্ষেপের কারণে মামলা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন:
অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা দিলেন শেকৃবির ২৪৩ শিক্ষার্থী


ঈদগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ ভুট্টো জানান, রামু থানার ওসি জানিয়েছেন, পক্ষে ও বিপক্ষে দুটি মামলা নেয়া হবে। একটি শিশু নির্যাতনের আরেকটি অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতাকে মারধরের। এ অবস্থায় ভুক্তভোগীরা আতঙ্কে ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান তিনি।

রামু থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শিশু নির্যাতনের ভিডিও ক্লিপ দেখে আমি স্বপ্রণোদিতভাবে আমার একজন অফিসারকে ওই এলাকায় পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু নির্যাতিত শিশুদের পরিবার কিছুতেই মামলা করতে রাজি হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, নির্যাতনকারী আওয়ামী লীগ নেতা রিফাতকে মারধর করা হয়েছে দাবি করে একটি মামলা করার চেষ্টা করেন। তখন আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতাম না, পরে বিষয়টা জানতে পারি। এসময় সরকার দলীয় দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির হস্তক্ষেপের কারণে পক্ষে-বিপক্ষে দুটি মামলা নেয়ার কথা বলেছেন, বলে স্বীকার করেন ওসি।


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন