ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news

প্রয়োজনে ইভ্যালির চেয়ারম্যান-এমডিকে জিজ্ঞাসাবাদ : দুদক আইনজীবী

প্রয়োজনে ইভ্যালির চেয়ারম্যান-এমডিকে জিজ্ঞাসাবাদ : দুদক আইনজীবী
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ডট কম লিমিটেডের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাসেলকে প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।

রোববার (১১ জুলাই) সাংবাদিকদের ‍অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান বলেন, ইভ্যালির বিরুদ্ধে গত নভেম্বর থেকেই দুদক অনুসন্ধান করছে। প্রয়োজনে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীন এবং এমডি মো. রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আইনে দুদককে সে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

গত ৯ জুলাই অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীন এবং এমডি মো. রাসেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার চিঠি দেয় দুদক। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে আদালত থেকে এ বিষয়ে অনুমতি নেওয়া হবে।

দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক বলেন, ইভ্যালি তার গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম হিসাবে নেওয়া প্রায় ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না, এমন অভিযোগ আমলে নিয়ে কমিশনের নির্দেশক্রমে দুদকের অনুসন্ধান টিম অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র ও তথ্য সংগ্রহ করেছে। অনুসন্ধানে টিম জানতে পেরেছে, তারা গোপনে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন। তাই অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান থাকা অবস্থায় অভিযোগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই গতকাল (শনিবার) দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দুই সদস্যের টিম গঠন করা হয়। টিমের অপর সদস্যরা হলেন উপ-সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব সালাম।

এর আগে গত ৪ জুলাই ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের চার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

দুদক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪ মার্চে ইভ্যালির মোট সম্পদ ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা (চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা) এবং মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা। ওই তারিখে গ্রাহকের কাছে ইভ্যালির দায় ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের কাছে দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা। গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬ হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছ থেকে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকার মালামাল নেওয়ার পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ ১ হাজার ৯১৪ টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা।


বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও প্রতীয়মান হয়, ইভ্যালি তাদের চলতি সম্পদ দিয়ে মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে বা অর্থ ফেরত দিতে পারবে। বাকি গ্রাহক এবং মার্চেন্টের পাওনা পরিশোধ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে গ্রাহক ও মার্চেন্টের কাছ থেকে গৃহীত ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ ১৮ হাজার ১৭৮ টাকা আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে জুন মাসে ইভ্যালি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ছয় সদস্যের পরিদর্শন টিমের তৈরি গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ইভ্যালির নিট লোকসানের পরিমাণ ৩১৬ কোটি টাকার বেশি। শেয়ার মূলধনের দুইশ গুণেরও বেশি হারে লোকসান হওয়ার পরও অবাক করা বিষয় কোম্পানিটির এমডি ও চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতনরা মাসে ১৮ লাখ টাকা বেতন নিচ্ছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির পুঞ্জিভূত নিট লোকসানের পরিমাণ ৩১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৬ হাজার ১৪৮ টাকা। কোনো কোম্পানির লোকসান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়া এবং মোট সম্পদের দ্বিগুণের অধিক ও শেয়ার মূলধনের দুইশ গুণেরও অধিক হারে লোকসান হওয়া কোম্পানিটির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার অন্যতম ঘাটতি নির্দেশ করে। অদূর ভবিষ্যতে এই বিপুল পরিমাণ লোকসান কাটিয়ে ওঠার কোনো গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা না থাকায় দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানির অস্তিত্ব রক্ষা অসম্ভব হবে।


 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন