লকডাউনে বের হয়ে পুলিশকে মারপিট , বেকায়দায় ধনাঢ্যের দুই ছেলে


নীলফামারীর সৈয়দপুরে সরকারি আদেশ অমান্য ও সরকারি কাজে বাধা এবং এক পুলিশ পরিদর্শককে (তদন্ত) মারপিট করে জখম এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর দুই ছেলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে সৈয়দপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম বাদী হয়ে থানায় ওই মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হচ্ছে সৈয়দপুর শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেনের ছেলে ব্যবসায়ী আতিফ হোসেন (২৮) ও আতিক হোসেন (২৬)। তারা বর্তমানে পুলিশ প্রহরায় সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মামলার আরজি সূত্রে জানা গেছে, সরকারঘোষিত কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন গত শুক্রবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রমিজ আলমের উপস্থিতিতে সৈয়দপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আতাউর রহমান তার সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দর সড়কের ক্যান্টনমেন্ট বাজার মোড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তল্লাশির দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়ার বাসিন্দা ও শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেনের দুই ছেলে ব্যবসায়ী আতিফ হোসেন (২৮) ও আতিক হোসেন (২৬) তাদের ব্যবহৃত সিলভার রঙের একটি প্রাইভেট কার নিয়ে বেপরোয়াগতিতে উল্লিখিত স্থানে পৌঁছান।
এ সময় পুলিশ সদস্যরা সিগন্যাল দিয়ে তাদের প্রাইভেট কারটি তল্লাশির উদ্দেশ্যে গতিরোধ করেন। এ সময় কঠোর লকডাউনের মধ্যে সরকারি বিধি-নিষেধ অমান্য করে গাড়ি বের করার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রমিজ আলম ব্যবসায়ী আতিফ হোসেনকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। আর এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা অর্থ পরিশোধ না করে সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে দ্রুত সটকে পড়ার চেষ্টা চালান।
এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে তারই সরকারি গাড়ি নিয়ে সৈয়দপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আতাউর রহমানের নেতৃত্বে ধাওয়া করে পুলিশ সদস্যরা ব্যবসায়ী আতিফ হোসেনের প্রাইভেট কারটিকে শহরে বঙ্গবন্ধু সড়কের বিসিক শিল্পনগরীসংলগ্ন পচানালা ব্রিজের ওপর গতিরোধ করতে সক্ষম হয়। এ সময় গাড়ি থেকে নেমে এসে ব্যবসায়ী আতিফ হোসেন উত্তেজিত হয়ে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আতাউর রহমানের পরিহিত সরকারি পোশাক টেনে ছিঁড়ে দেন এবং তাকে কিল-ঘুষি মেরে জখম করেন।
এ সময় পুলিশ পরিদর্শক আতাউর রহমানের সঙ্গীয় অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা তাকে রক্ষা করতে গেলে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে দুই ব্যবসায়ীও যৎসামান্য আহত হন। পরে তাদের সেখান থেকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তারা সেখানে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় সরকারি আদেশ অমান্য, সরকারি কাজে বাধা দান, কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাকে মারপিট করে জখম ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শনের অভিযোগে ব্যবসায়ী আতিফ হোসেন ও আতিক হোসেনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করা হয়। এসআই মো. রেজাউল করিম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
সৈয়দপুর থানার ওসি মো. আবুল হাসনাত খান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আসামিরা বর্তমানে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ঘটনাটি নিয়ে শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় কজন নেতা সৈয়দপুর উপজেলা ও জেলা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে দেনদরবার ও তদবির করেন। কিন্তু পুলিশ কারো কোনো কথায় কর্ণপাত করেনি।
এমবি
