ঢাকা রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news

‘জীবিত’ হতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তবলা শিল্পী!

‘জীবিত’ হতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তবলা শিল্পী!
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

গান আর তবলা বাজিয়ে সংসার চলে সুজিত সরকারের। জেলা প্রশাসনের দেওয়া গত তিনমাস আগে ব্যাংকে করোনা প্রণোদনার একটি চেক ভাঙাতে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ভেরিফিকেশনে সুজিত চন্দ্র সরকার জানতে পারেন তিনি মৃত! সেই থেকে কাগজে-কলমে মৃত থেকে জীবিত হতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তবলা শিল্পী সুজিত চন্দ্র সরকার।

সুজিত চন্দ্র সরকারের (৫৩) বাড়ি দিনাজপুর বিরামপুর উপজেলার ২নং কাটলা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর গ্রামে। তার বাবার নাম অভিনাশ চন্দ্র সরকার। মূলত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তবলা বাঁজিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে কষ্টের সংসার। দেড়বছর ধরে দেশে করোনা মহামারি ও চলমান লকডাউনে আয়ের সে পথও বন্ধ থাকায় অনেকটা বিপাকে।

সুজিত বলেন, ‘গত সাংসদ নির্বাচনে আমি ভোট দিতে পারিনি। তখনো জানি না আমি কাগজে কলমে মারা গেছি। ইউপি নির্বাচনেও ভোট দিতে পারিনি। প্রণোদনার টাকা তুলতে ব্যাংকে গিয়ে এনআইডি কার্ড যাচাই করতে গিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায় আমি মারা গেছি। শুধু তাই নয়, আমি জ্যান্ত মানুষটি কাগজে-কলমে মৃত এটি মানুষের সামনেই বলতেও লজ্জা লাগে।

ভোটার তালিকায় তার নাম বহাল ও ডাটাবেইজ স্ট্যাটাস সংশোধন করতে ইতোমধ্যে তিনি স্থানীয় ২নং কাটলা ইউপি থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ ও ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট থেকে জীবিত আছেন মর্মে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। আর এসব প্রমাণপত্র নিয়ে তিনি উপজেলা নির্বাচন অফিসে ৬ বারেরও বেশি যোগাযোগ করা হলেও তিনি এখনো জীবিত হতে পারেননি।

সুজিত চন্দ্র সরকার বলেন, ২০১৭ সালে একই নামের আমার প্রতিবেশী ও সম্পর্কে আমার ভগ্নিপতি সুজিত রায় মারা যান। সে সময় ভোটার তালিকা হালনাগাদে মৃত ভগ্নিপতি সুজিত রায়কে মৃত না দেখিয়ে আমাকে মৃত দেখানো হয়েছে। ভোটার তালিকা সংশোধন করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলাতে অনেকবার গিয়েছি কিন্তু কাজ হয়নি। শুধু তাই নয়, চলতি বছর গত ১১ এপ্রিল থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন অফিসে ৬ বার গিয়েছি। সেখানে যেসব কাগজপত্র চেয়েছে সেগুলো সব দিয়েছি। এরপরও কোনো ভালো খবর পাইনি। শুধু নির্বাচন অফিস থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, ভোটার তালিকায় আমার নাম জীবিত হিসেবে সংশোধনের জন্য আবেদন অনলাইনে পাঠানো হয়েছে।

সুজিত চন্দ্র সরকার আরো বলেন, চলতি বছর মার্চ মাসে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক স্যার আমাকে অসচ্ছল শিল্পী হিসেবে আমাকে ৫ হাজার টাকার চেক দিয়েছেন। কিন্তু ভোটার তালিকায় আমি মৃত থাকায় সেই চেক ভাঙাতে পারছি না।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকতা মো. আতাউল হক বলেন, ভোটার তালিকায় সুজিত রায়ের তথ্য সংশোধন করার জন্য বিরামপুর উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে আবেদন পাঠানো হয়েছে। এখন তার এনআইডি কার্ডটি সার্চ দিয়ে দেখতে হবে কাজটি কোন অফিসে কী পর্যায়ে আছে। সুজিত রায়কে তার বর্তমান এনআইডি কার্ড নিয়ে অফিসে আসতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার বলেন, ‘শিল্পী সুজিত রায়ের সমস্যার কথা শুনেছি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ভোটার তালিকায় তার তথ্যগত সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন