ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২ শিশুর সাজা, হাইকোর্টের নির্দেশে তাৎক্ষণিক মুক্তি


আইনজীবীর চিঠি পেয়ে নেত্রকোনোর আটপাড়া উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়া দুই শিশুকে তাৎক্ষণিক মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও বিশেষ কর্মকর্তা ব্যারিস্টার মো. সাইফুর রহমান।
দুই শিশুর মুক্তির জন্য বিচারপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর ই-মেইলে চিঠি পাঠানোর ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগে দেশের উচ্চ আদালতও সাড়া দেন তৎক্ষণাৎ। চিঠি পেয়েই শিশু দুটিকে মুক্তির নির্দেশ দেন আদালত। এই আদেশের বিষয় সংশ্লিষ্টদের জানাতে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা সাইফুর রহমানকে নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে সাইফুর রহমান জানান, হাইকোর্টের আদেশ পাওয়ার পরপরই নেত্রকোনার জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, হাইকোর্টের আদেশ পাওয়ার আগেই তিনি (জেলা প্রশাসক) ওই শিশুদের মামলা নিষ্পত্তি করে তাদের মুক্তি দিয়েছেন।
এর আগে সকালে ওই দুই শিশুর মুক্তির জন্য বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বরাবর ই-মেইলে চিঠি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। ভ্রাম্যমাণ আদালতে শিশুকে দণ্ড দেওয়া এখতিয়ারবহির্ভূত উল্লেখ করে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের মুক্তির নির্দেশনা চাওয়া হয় ওই চিঠিতে। কারো মুক্তির জন্য কোনো বিচারপতির কাছে চিঠি দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম। ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে দুই শিশুকে দণ্ড’ শিরোনামে বুধবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এ চিঠি দেওয়া হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রেমের সম্পর্কের জেরে পারিবারিকভাবে গত পয়লা আগস্ট নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার দুওজ ইউনিয়নের একটি গ্রামে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর (১৫ বছর) সঙ্গে তার সমবয়সী একজনের বিয়ের আয়োজন করা হয়। উভয়েই ঢাকায় তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করার সুবাদে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এই বিয়ের খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজিয়া সুলতানা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পুলিশ পাঠিয়ে তাদের আটক করে নিজ কার্যালয়ে নিয়ে এক মাস করে সাজা দেন। এরপর তাদের গাজীপুর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
আইনজীবীর চিঠিতে বলা হয়, ‘আমি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। আমি অত্র আদালতের একজন অফিসার। আমার মনে আছে, ফতোয়ার মামলায় পত্রিকার রিপোর্ট দরখাস্ত হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। ছাত্রজীবনে পড়েছি, একটি টেলিফোন কল নাকি এফআইআর হিসেবে গণ্য হয়েছিল। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রধান বিচারপতি বরাবর চিঠি পাঠিয়েছিলেন এক সন্তানহারা মা নীলাবতি বেহারা। সেই চিঠির ভিত্তিতে তিনি ক্ষতিপূরণও পেয়েছিলেন। স্বচক্ষে দেখেছি, পত্রিকার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অনেক স্বপ্রণোদিত রুল জারি হয়েছে। বিচারও হয়েছে। জেল থেকে পাঠানো চিঠিগুলো জেল আপিল হিসেবে বিবেচিত হয়। এসব উদাহরণ দেখে কিছুটা অতিউৎসাহী হয়ে এই পত্র লিখলাম। আশা করি, আমার এই পত্র বৃথা যাবে না।’ চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘অতএব আমার নিবেদন এই যে সুপ্রিম কোর্ট রুলস-এর ১১ক অধ্যায়ের বিধি ১০ মোতাবেক অত্র চিঠিটি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবেদন হিসেবে বিবেচনা করে সংযুক্ত পত্রিকার প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে উল্লিখিত শিশুদের তাৎক্ষণিক মুক্তির আদেশ দিতে অথবা ক্ষেত্রমতো উপযুক্ত আদেশ প্রদানে আপনার একান্ত মর্জি হয়।’ এই চিঠি পাওয়ার পরই হাইকোর্ট শিশু দুটিকে মুক্তির নির্দেশ দেন।
এমবি
